Mon. May 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

খোলাবাজার২৪ঃ শনিবার  ১৯মে, ২০১৮ঃ  বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে শেষ করে দিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জামিনযোগ্য মামলায় তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না বরং পবিত্র রমজানেও তার ওপর জুলুম চলছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। সেইসাথে খুলনা সিটি নির্বাচনকে ‘শেখ হাসিনা মার্কা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যে নির্বাচনে ভোটের ব্যালট গরমিল থাকে এবং মরা ব্যক্তির ভোট প্রদান ইত্যাদি নতুন মডেলের নির্বাচন, ‘শেখ হাসিনা মার্কা’ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভোট কেলেঙ্কারির আরেকটি নতুন মডেল জনগণ প্রত্যক্ষ করলো। এই নতুন মডেলের ভোট ডাকাতির আবিষ্কারক শেখ হাসিনা।

শনিবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এসব কথা বলেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জালনথি তৈরির মাধ্যমে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাজা দেওয়ার পর সেই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর এখনো তাকে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার। বরং নতুন নতুন জামিনযোগ্য মামলায় তাকে আটকানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থি। বিশ্বব্যাপীও আজ নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশনেত্রীকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার। তিনি যেসব মামলায় অতীতে জামিনে ছিলেন সেসব মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, কারাগারে দেশনেত্রী গুরুতর অসুস্থ, দিন দিন শারীরিক অবস্থা ক্রমাবনতিশীল। তিনি হাত ও পায়ের ব্যথায় প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি ব্যথার যন্ত্রণায় হাঁটতে পারছেন না, ঠিকমত ঘুমাতে পারছেন না। সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়ার পরও কিভাবে একজন বয়স্ক জনপ্রিয় নেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে তা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে, তাকে চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। পবিত্র মাহে রমজানেও তার ওপর সর্বোচ্চ জুলুম চলছে।

রিজভী আহমেদ বলেন, আওয়ামী সরকার নানা ফন্দি-ফিকির করছে কিভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দুরে রেখে আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনের নির্বাচন করা যায়। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন বিএনপি আগামী নির্বাচন থেকে আস্তে আস্তে দুরে সরে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব, বিএনপি দুরে সরে যাচ্ছে না বরং আপনারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি করার জন্য। সেজন্য আবারো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্বাচন নিয়ে দেশী-বিদেশী মাষ্টারপ্লান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেটিরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে।

তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে মাইনাস করে, বিএনপিকে মাইনাস করে আপনারা নির্বাচন করবেন সেই প্রহসন আর এদেশে হতে দেয়া হবে না। এদেশে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন জনগণ হতে দিবে না।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, এদেশের সর্বত্রই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, ভোট চুরি, কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে সিল মারা, প্রতিপক্ষের এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রের ভোট দেয়া, কেন্দ্রের ভিতর ঢুকে সন্ত্রাসীরা লাইন ধরে ভোট দিয়ে ২০-৩০ মিনিটে প্রায় ১২০০ ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরা হয়, যে নির্বাচনে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না গেলেও ৯৯ ভাগ ভোট পড়ে ইত্যাদি নতুন মডেলের নির্বাচন, ‘শেখ হাসিনা মার্কা’ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ভোট কেলেঙ্কারীর আরেকটি নতুন মডেল জনগণ প্রত্যক্ষ করলো। এই নতুন মডেলের ভোট ডাকাতির আবিস্কারক শেখ হাসিনা। সুতরাং ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা ও সুষ্ঠু ভোট পরস্পরের প্রতিপক্ষ। তার অধীনে কখনোই কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হতে পারেনা। তার কাছে কখনোই গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিরাপদ নয়।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা আরো বলেন, প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ নানা গোপন চুক্তির মাধ্যমে যে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশ বিক্রি করে দিতে পারেন তার কাছে গণতন্ত্রই বা কী আর অবাধ নির্বাচনই বা কী, কোনোটিরই কোনো দাম নেই। ক্ষমতার আমলকি করতলে ধরে রাখার জন্য তারা এহেন অনাচার নেই যেটি তারা করছেন না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন, নিপীড়ণসহ হত্যা ও গুমের রক্তাক্ত পথেও তারা সমানভাবে অগ্রগামী। ক্ষমতার সোনার হরিনের পেছনে ছুটতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো ক্লান্তি নেই। যিনি জনসমর্থন ছাড়া ক্ষমতাকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখেন তাঁর কাছে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন কোন অর্থই বহন করে না।

শেখ হাসিনার দলীয় পদ ছাড়া প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তিনি আবার মাঝে মাঝে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন, এটা শুধু হাস্যকরই নয়, এটি বছরের সেরা প্রহসন। আগামী জাতীয় নির্বাচন সবদলের অংশগ্রহণমূলক করতে এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জনগণ। আমি আবারো দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই-দেশী-বিদেশী চক্রান্ত কাজ হবে না। দূর্বার আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। বেগম খালেদা জিয়াকেও মুক্ত করা হবে। বেগম খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচন এদেশে হবে না, হতে দেয়া হবে না। আর আন্দোলন সম্পর্কে বিশ্বনন্দিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার উদ্ধৃতি দিয়ে বলতে চাই-আন্দোলন সহিংস হবে, নাকি অহিংস হবে তা নির্ভর করে সরকারের নীতির ওপর।

রিজভী আহমেদ জানান, খুলনার কারচুপির নতুন মডেলের নির্বাচনে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইলেও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা খুলনার নির্বাচন নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর গিলছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন খুলনার ভোট ডাকাতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও হেরেছে গণতন্ত্র, হেরেছে ভোটাধিকার, হেরেছে নির্বাচন কমিশন। আমরা আশা করব প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই নির্বাচন কমিশনের দ্বারা সুষ্ঠু ভোট আয়োজন সম্ভব নয়। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায় নিজের কৃতিত্বের কথা বর্ণনা করতে অক্লান্ত থাকেন। তার কৃতিত্বের মধ্যে অন্যতম হলো-এই পবিত্র রমজানে দেশব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সীমাহীন মূল্য বৃদ্ধিতে মানুষকে দিশেহারা করা। বাজার নিয়ন্ত্রণে ১২টি সংস্থাকে নাকি সরকার নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সিন্ডিকেটের দৌরাত্বেও উক্ত ১২টি সংস্থাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। রমজান মাসে প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যন্ত বেশী। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। জ্বালানী সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্যাস অধিকাংশ সময়ই থাকে না, যদিও কখনো আসে তাতে আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলে, এতে রান্না দুরে থাক, পানিও গরম হয় না। ঢাকা শহরের প্রান্তিক এলাকাগুলোতে গ্যাস থাকেই না।

তিনি জানান, এছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কারান্তরীণ অবস্থায় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বিরুদ্ধে একের পর এক গায়েবী, অসত্য ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। শুধু বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা এবং সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব তরিকুল ইসলামের পুত্র হওয়ার কারণেই তার ওপর এতো জুলুম নির্যাতন। অমিতের বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন খান প্রমুখ।