Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলাবাজার২৪ঃ শুক্রবার ২৫মে, ২০১৮ঃ  হঠাৎ মোবাইলে ভাইব্রেশন হল। কেপে উঠলো মোবাইলটা। একটা ম্যাসেজ এসেছে। সেই সাথে সুপ্ত’র হৃদয় টাও যেন কেপে উঠলো। তৎক্ষণাৎ মোবাইলটা তুলে নিলাম বিছানা থেকে। কার ম্যাসেজ!না সে যার ম্যাসেজের অপেক্ষা করছিল সে নয়, অন্য এক বন্ধুর ম্যাসেজ। আগ্রহ হারিয়ে মোবাইলটা আবার বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিলাম।  

সুপ্ত, রেখার ম্যাসেজের অপেক্ষা করছিল।রেখার  হল সেই মেয়েটি যার জন্য ঘুম পাগল সুপ্ত রাতে পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছি। একবার ও বলে নি ঘুম পেয়েছে তার, বরং রেখার  ঘুমাবার কথা বললে মন খারাপ হত আমার। একটি মুহূর্ত তাকে ছাড়া ভাবতে পারতাম না। একদিন কথা বলা বন্ধ করা তো দূরের থাক ম্যাসেজের রিপ্লে দিতে দেরি হলেই হাজার চিন্তা  আমার মাথায় বাসা বাঁধত।

খুব ভয় আমার রেখারকে হারাবার ভয়। কিন্তু সেই আমি আজ তিন দিন হল রেখার সাথে কোন কথা বলিনা !  এমনকি একটা ম্যাসেজও দেয় নি। হুম, অবাক হবার মতই কথা। সামান্য মনোমালিন্যের রেশ ধরেই আমাদের মধ্যে এই অভিমান। ভালবাসা ও অভিমানের মধ্যে এখন অভিমানটাই বেশি আধিপত্য বিস্তার করে আছে দুজনের মাঝেই। তাইতো কেউই কাউকে কোন ম্যাসেজ অথবা ফোন দিচ্ছিনা !   

রেখা যত চেষ্টা করছে আমাকে ভুলে থাকবার তত বেশি যেন আমাকেই বেশি মনে পরছে তার। প্রতিটি কাজে, প্রতিটি কথায় যেন রেখার  প্রতিবিম্ব হাজির হয়ে যাচ্ছে তার সামনে।আমার সব কিছু জুড়েই শুধু রেখা আর রেখা। এতক্ষণ বালিশে মুখ গুজে ছিলাম আমি । এখন উঠেছি। উঠেই সময় দেখার জন্য মোবাইল টা হাতে নিলো। ধুর যা! মোবাইলের সময় টা ওলোট-পালোট হয়ে আছে। তাই বাধ্য হয়েই বিছানা ছাড়তে হল। এখন টেবিলের উপরে রাখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখবে, সময় দেখলো। কিন্তু এতেও যে রেখার স্মৃতি!    

সেই দিনটির কথা মনে পড়ে গেল আমার। সেই দিনটি, যে দিন প্রথম রেখার হাত ধরে রাস্তায় হেঁটেছি । সেই দিনই রেখার এই টেবিল ঘড়িটি দিয়েছে। হাটার সময় রেখার হাতে যখন হাতটা লেগেছিল, অন্য রকম এক অনুভূতির সম্মুখীন হয়েছিল আমার।

এ এক অন্য রকম অনুভূতি। হাতটি ধরে হেটে চলার তীব্র ইচ্ছা, সেই সাথে কেউ দেখে ফেলার কিঞ্চিত ভয়, দুয়ে মিলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। শেষ পর্যন্ত এখানে রেখার  প্রতি আমার তীব্র ভালবাসারই জয় হল। হাতটি ধরে ফেলল সে।রেখাও ভুল করে নি সেবেলা। সেও শক্ত করে ধরে ফেলল আমার হাতটি। হেটে চলল একে অপরের হাতটি ধরে। সময় যেন তীব্র গতিতে চলছিল তখন, একটু পরেই তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেল। আমি বলেছি – কি ব্যপার এত তাড়াতাড়ি কি করে পৌঁছে গেলাম আজ! সাথে সাথেই রেখার হাসি। এ যে সে হাসি নয়, অনবরত হেসে যাওয়া। হাসতে হাসতে আমার শরীরে গড়িয়ে পরল রেখার । আমি ঈষৎ বিব্রত হয়েছিল, তবুও রেখার  হাসি সেটাই তার কাছে অনেক। আসলে প্রিয় মানুষটির সব কিছুতেই ভাল লাগে। পরে রেখা আমাকে জানালো যে তাদের আসতে পঁচিশ মিনিটি লেগেছে। যেখানে দশ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়, সেখানে পঁচিশ মিনিট! তন্দ্রার সাথে থাকাকালীন সময় গুলো কেন যে এত তাড়াতাড়ি চলে যায় বুঝে না।

এই যা আবারও রেখার ! ধুর, সব কিছুতেই যে কেন আমার স্মৃতি। সময় কাটছে না, বিকেল পাঁচটায় বের হবে রেখা। তিনটায় শুয়েছিল, উদ্দেশ্য ছিল ঘুমিয়ে সময় পার করা। কিন্তু ঘুম যেন অমবশ্যার চাঁদ দেখাই দেয় না।এতক্ষণ শুয়ে থাকার পর ও সময় পার হল না। মাত্র চারটা বাজে। আরও এক ঘণ্টা। ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে আছে রেখা। ঘড়িটির দুপাশে ছবি রাখার দুইটি ফ্রেম সংযুক্ত আছে। এতে রেখার ছবি ছিল, কিন্তু সেটাও রাগের মাথা গতকাল ছিরে ফেলে দিয়েছে সে।আর ছিঁড়বেই না কেন বলুন। যার জন্য নিজেকে এতটা বদলে দিয়েছে রেখা, সেই যদি বলে “আমি এখন আর তোমাকে ভালবাসি না” তাহলে কেমন লাগে বলুন। গত সপ্তাহেই তো মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে জিয়া উদ্যান হাতে হাত রেখে হেঁটেছে তারা।কি হল এরই মধ্যে! 

আবার ভাব্রেশন, ম্যসেজ এসেছে। না এবার রেখার ম্যসেজই। দুই দিন পর ম্যসেজ দিল- “তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো?” কিন্তু আমি এখন আর রিপ্লে দিব না। রেখা  কেন বলেছিল আমাকে এখন আর ভালবাসে না রেখার ! অভিমানের এবারও জয় হল।

রেখাকে নিয়ে এত ভাবনা কেন আমার ?আমি  তো সেই দিন ফোন কেটে দেয়ার পরই প্রতিজ্ঞা করেছিল, রেখাকে নিয়ে আর ভাববে না। কিন্তু এখন যে আরও বেশি ভাবছে সে।একবার রেখার  কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করেছে,কিন্তু পরোক্ষনেই অভিমানের বোনা জালে আটকা পড়ে যাচ্ছে মনটা। ইচ্ছার বিরুদ্ধে মস্তিষ্কের তীব্র হস্তক্ষেপে মন থেকে রেখাকে ছুড়ে ফেলার এক ব্যর্থ প্রয়াস আমার।

কিছু অভিমানের মাঝে দূরে থেকেও কাছে থাকা এটাই তো ভালবাসা?