খােলা বাজার২৪। রবিবার,০১ জুলাই ২০১৮ : সরকারী চাকুরীতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। বেছে বেছে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়েছে।
রবিবার বেলা ১২টায় নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা ইতোপূর্বে বলেছিলাম-শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবী মেনে নেয়াটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর তামাশা। সমগ্র জাতি এখন সেই রঙ-তামাশার দৃশ্য অবলোকন করছে। মূলত: প্রধানমন্ত্রী সেদিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছেন। ছাত্রলীগের মন শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রঙ্ েরাঙ্গানো। এই সময়ের ছাত্রলীগ প্রকৃত কোন ছাত্র সংগঠন নয়, এটি প্রধানমন্ত্রীর ভাড়াটিয়া বাহিনী। এদের মধ্যে নেই জ্ঞানের আলো, শিক্ষার আদর্শ, সহমর্মিতা ও সহিষ্ণুতা। প্রতিবাদের আওয়াজকে গুঁড়িয়ে দিতেই গুন্ডামীর চেতনায় এদেরকে তৈরী করা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনকে বাকশালী খাঁচায় বন্দী করার জন্যই বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রলীগকে তৈরী করা হয়েছে আতঙ্কের অপর নাম হিসেবে। শিক্ষাঙ্গনের গণতন্ত্রবিরোধী বিপজ্জনক শক্তি হচ্ছে ছাত্রলীগ। বর্তমানে খুন, জখম, হাঙ্গামা, হল দখল, সীট বাণিজ্য, শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার প্রতীকে পরিণত হয়েছে বর্তমান ছাত্রলীগ। আর সেজন্যই পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগও নেমে পড়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতবিক্ষত করতে। গতকাল কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় রেখে তাঁর শারীরিক অবস্থাকে এক অমানবিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে বর্তমান সরকার। গতকাল দেশনেত্রীর স্বজন’রা তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে তারা বেদনাহত ও ব্যথিত হয়েছেন। ইতোপূর্বে দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত এমনকি সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁর সুচিকিৎসা’র জন্য যে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেটির বিন্দুবিসর্গও পালন করা হয়নি। বরং সুচিকিৎসার দাবী করাটাও যেন দেশনেত্রীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার একটা মওকা পেয়ে গেছে দেশনেত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে তাঁর অসুস্থতাকে চরম অবনতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তাঁর ঘাড়ে ও বাম হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত, আর কোমর হয়ে বাম পা’য়ের তলা পর্যন্ত প্রচন্ড ব্যথায় তিনি অস্থির হয়ে আছেন। অস্ত্রোপচারকৃত দু’টি চোখই ধুলাকীর্ণ স্যাঁতসেতে পরিবেশে দিনকে দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার প্রধানের আচরণ লজ্জাজনকভাবে নি¤œরুচির।
বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বারবার দাবি করা সত্ত্বেও সরকারের এড়িয়ে যাওয়াতে মনে হয় দেশনেত্রীকে বন্দী করে হাতের মুঠোয় নিয়ে কোন অশুভ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বারবার বলা হয়েছে-যে প্রোষ্টেটিক কমপেটিবল এমআরআই মেশিন, উন্নতমানের সিটি স্ক্যান, ডেক্সা স্ক্যান ফর বিএমডি (বনমেরু ডেনসিটি) টেষ্ট, নার্ভ কন্ডাকশন স্টাডি ফ্যাসিলিটিজ, ইএমজি ইত্যাদি যা তাঁর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জরুরী সেটি’র সুবিধা থাকায় আমরা ও তাঁর স্বজনরা ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসার কথা বলেছি। কিন্তু সরকার মুক ও বধির হয়ে আছে। ইউনাইটেড হাসপাতালে দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসা না দিতে সরকার মনে হয় শপথ নিয়েছে। আর এই শপথের উদ্দেশ্যই হচ্ছে-জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্রমাগত কষ্ট দিয়ে তাঁর জীবনকে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত করা। আমরা আবারও দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই-বেগম জিয়ার প্রতি এই অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। তাঁর ন্যুনতম কোন ক্ষতি হলে সরকার জনগণের ক্রোধ থেকে রেহাই পাবে না। আমি আবারও দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে দেশনেত্রীর নি:শর্ত মুক্তি এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন আলাল, খাইরুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব প্রমুখ।