খোলাবাজার২৪.রবিবার,০৮ জুলাই, ২০১৮ঃ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় এর নিকট প্রশ্ন রেখে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন বাংলাদেশের এখন কোন দলের মুখপাত্র?
রবিবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রশ্ন রাখেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় নয়াদিল্লীর একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আইনী পরামর্শক লর্ড কার্লাইলকে ভারতে ঢোকার অনুমতি না দিতে নয়াদিল্লীতে জোরালো সুপারিশ পাঠিয়েছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন।
লর্ড কার্লাইল চলতি সপ্তাহেই নয়াদিল্লী সফরে ১৩ জুলাই ফরেন করেসপন্ডেন্ট ক্লাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ও কারাদন্ডের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বক্তব্য দেয়ার কথা। যদি ঢাকাস্থ হাই কমিশনের জোরালো সুপারিশের কারণে লর্ড কার্লাইলের ভিসা দেয়া না হয় তাহলে এটা প্রমানিত হবে যে, বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাদন্ড দিতে হাই কমিশনের নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে। ভারতীয় হাই কমিশনের এই ভূমিকা দু:খজনক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আগ্রাসী হস্তক্ষেপ। বাংলাদেশের একটি ভোটারবিহীন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের ভূমিকা ঔপনিবেশিক শাসকদের ন্যায়, যেন তারা বাংলাদেশে তাদের প্রতিভুদের টিকিয়ে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন যদি ঔপনিবেশিক শাসনের গভর্নর হাউজে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন ও সার্বভৌমত্ব অতি দুর্বল।
রিজভী আহমেদ বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আরেকজন উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ভারত সফরে গিয়ে সেখানে একটি শীর্ষস্থানীয় ‘থিংক ট্যাংক’ এর আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বিএনপি ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, বিএনপি হচ্ছে চীন ও পাকিস্তানপন্থী।’ এইচ টি ইমাম এর উদ্ভট বেহায়াপনায় বাংলাদেশীরা হতবাক ও স্তম্ভিত। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকারকে পূনরায় ক্ষমতায় রাখতে সেখানে বিভিন্ন নীতি নির্ধারকদের কাছে নতজানু হয়ে লেজ নাড়িয়ে ভারতীয় কৃপা আদায়ের জন্য এইচ টি ইমামের মতো আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা এমন ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছেন যা বাংলাদেশে বিরল। এটি যেন মোড়লের কাছে নিজের বিশ^স্ততা প্রমান করা। প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বীকারোক্তিতেই বলেছেন-তিনি ভারতকে সবকিছু দিয়েছেন, প্রতিদান চান নি। কিন্তু এখন প্রতিদান পেতে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন সেখানে। এরা বিবেক, আত্মমর্যাদা, জাতীয়তাবাদী অহংকার সবকিছু বিসর্জন দিয়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অপমানিত করে দিল্লীর দরবারে করুণা ভিক্ষা করছেন। এইচ টি ইমাম হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তাক্ত লাশ ডিঙিয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায় শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন এই এইচ টি ইমাম। যখন যে হাওয়া বয়ে যায় সেই হাওয়ার সাথেই গা ভাসিয়ে দেন এই এইচ টি ইমাম সাহেবরা। ১৫ আগষ্টের মর্মস্পর্শী হত্যাকান্ডের যদি বিন্দুমাত্র বিচলিত ও মর্মাহত হতেন এইচ টি ইমাম তাহলে লাশ ডিঙ্গানো ঐ মন্ত্রীসভার শপথ পাঠের অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন না। জাস্টিস বি এ সিদ্দিকী আমৃত্যু মুসলিম লীগ করেছেন, তারপরেও লক্ষ লক্ষ মানুষের হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী টিক্কা খানের শপথ পড়ান নি। এইচ টি ইমাম কতবড় অনৈতিক হতে পারেন, যিনি ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে বলেছেন-তোমরা বিসিএস পরীক্ষায় কেবল লিখিত পরীক্ষায় পাশ করো, আর মৌখিক পরীক্ষার দায়িত্ব আমার। বর্তমান এই দু:শাসনকে টিকিয়ে রাখার মুল হোতাদের একজন হচ্ছেন এই এইচ টি ইমাম। এরা নিজের পাতে ক্ষমতার ঝোল ঢালার জন্য আত্মা বিক্রি করতেও দ্বিধা করেন না।
এইচ টি ইমাম আরও বলেছেন-ভারত বিএনপি-কে সুযোগ দেবে না। এইচ টি ইমাম সাহেবকে বলতে চাই-ভারত সুযোগ দেয়ার কে ? বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। সুযোগও দেবে বাংলাদেশের জনগণ। আপনার বক্তব্যে বোঝা যায়-বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের চাবিকাঠি ভারত। আর সেজন্যই প্রভুদের কাছে দেনদরবার শুরু করেছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রভুদের কাছে তাই এতো আকুতি মিনতি করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আর সেই সুযোগ আপনাদের দেবে না। বাংলাদেশে কোন দল ক্ষমতায় আসবে তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ। জনগণকে পাশ কাটিয়ে এদেশে আর কোন ষড়যন্ত্রমূলক ভোটারবিহীন জাতীয় নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। আসলে এই এইচ টি ইমাম’রা কখনোই আয়নায় নিজের চেহারা দেখেন না। এইচ টি ইমামদের ভূমিকা মিরন ও ঘষেটি বেগমের মতো।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।