Tue. May 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪ শুক্রবার ১৩ জুলাই, ২০১৮ঃ কোটা নিয়ে ছাত্র আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ‘প্রতারণা’র আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। 

শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ কথা বলেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত পরশু জাতীয় সংসদে বলেছেন ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি। রাজনৈতিকভাবে গ্রেপ্তার করতে হলে খালেদা জিয়াকে ২০১৪-২০১৫ সালে গ্রেপ্তার করা যেত।’ বেগম খালেদ্ াজিয়াকে কারাবন্দি করার পরিকল্পনা শেখ হাসিনা অনেক আগেই করেছিলেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিনি নীলনকশা অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করেন। সুতরাং গত পরশুদিনের বক্তব্য সত্যের অপলাপ। সরকার প্রধান যে প্রতিহিংসার বশবর্তি হয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে যে কারাগারে আটকে রাখবেন তার আরও প্রমাণ রয়েছে যেমন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিগত কয়েকবছর ধরে বলে আসছেন বেগম জিয়ার জন্য কারাগারের সেল প্রস্তত করা হয়েছে। সুতরাং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বেগম জিয়াকে মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে সাজানো মামলায় ক্যাঙ্গারু আদালত কর্তৃক সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে এটি বোঝার জন্য বেশী কষ্ট করতে হয় না। শেখ হাসিনার জিঘাংসার শিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনপ্রিয়তা শেখ হাসিনার জন্য অসহ্যের কারণ। অবৈধ ক্ষমতার মৌতাতে বুঁদ হওয়া নিষ্ঠুর একদলীয় চেতনার শেখ হাসিনা কখনই বেগম জিয়ার সাফল্য ও জনপ্রিয়তাকে একেবারেই মেনে নিতে পারেন না বলেই তাঁকে জনবিচ্ছিন্ন করতে কারাগারে বন্দী করে রেখেছেন। শেখ হাসিনা একতরফা নির্বাচন করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলার নাটক সাজিয়ে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দশ্যে পরিস্কার করে বলতে চাই আপনি যতই ষড়যেন্ত্রের জাল বুনতে থাকুন না কেন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না জনগন হতে দেবে না। 

রিজভী আহমেদ বলেন, হাইকোর্টের রায় থাকায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা সম্ভব নয় বলে গতকাল জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে তিনি ছাত্রদের তুমুল আন্দোলনের মুখে কোটা বাতিলের কথা কেন বলেছিলেন? তখনতো হাইকোর্টের রায় ছিল। তখন তাঁর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শেখ হাসিনার দরদ ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে ৭১’এর রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল (অব) অলি আহমেদ বীর বিক্রমের উপর ছাত্রলীগ যুবলীগকে দিয়ে হামলা করাতেন না। এ হামলা পরিকল্পিত, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা করা হয়েছে।

রিজভী আহমেদ বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে যে কোন ঘোষনা মানেই সেটি আইনের সমতুল্য এবং তা কার্যকর হতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল চায়নি তারা কোট সংস্কার চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যে এটা এখন সুস্পষ্ট যে, তিনি ছাত্র আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই সেদিন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেদিন আমরা বলেছিলাম কোটা বাতিলের ঘোষনা একটা ধাপ্পাবাজি। আন্দোলনে ছাত্র নেতাদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই দিনে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ম্যাকিভ্যালির চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঈদের পর আবারও ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছেন দলন পীড়নের নিষ্ঠুর পথ। বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে হাতুড়ি রাম দা আর বাশেঁর লঠিসহ ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা রাশেদকে দিনের পর দিন রিমান্ডের নামে তাকে থেতলে দেওয়া হচ্ছে। তার অত্যাচারের বিভীষিকার কাহিনী শুনলে কোন মানুষই চোখের পানি আটকে রাখতে পারবে না। তার মায়ের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। একের পর এক কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রদের এখন গ্রেপ্তার করে তাদের উপর পৈশাচিক উৎপীড়নের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন আন্দোলনের পরিণতি কত ভয়ংকর হতে পারে। সরকার প্রধান যে কত ভয়াবহ প্রতিশোধ পরায়ণ হতে পারেন তার একের পর এক দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের ওপর নেমে আসা বর্বরতার নিদর্শন দেখে। এ অবৈধ সরকার রাষ্ট্র সমাজের সর্বত্র ঘৃণা ছড়াচ্ছে। 

 

 তিনি বলেন, বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না- এমন নির্দেশনা থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল ইসির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বৈঠক শেষে সিইসি এ কথা জানান। এ সিদ্ধান্ত সরকারের হুমকির মুখে ইসির প্রতিরোধহীন আত্মসমর্পন। আগামী নির্বাচন গুলোতে সরকার খুলনা-গাজীপুর মার্কা নতুন মডেলের ভোট সন্ত্রাসের নির্বাচন নির্বিঘœ করতেই ইসি তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। যে দেশে আইনের শাসন নেই সেদেশে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীগুলো ভোটারদের সঙ্গে নয় বরং সরকারের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলতে হয়।  সুতরাং আগামী নির্বাচনগুলো কোন রং ও রুপে আত্ম প্রকাশ করবে তা এখনই খুব সহজে অনুমান করা যায়। তিন সিটিতেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নির্লজ্জভাবে সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মামলা হামলার হুমকির মুখে নেতাকর্মীরা সিটি কর্পোরেশন নিজ এলাকার বাহিরে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আর গ্রেফতারের হিড়িকতো চলছেই। রাজশাহীতে ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচনী অনাচারে লিপ্ত কাশিয়া ডাঙ্গা থানার ওসি ও গোয়েন্দা পুলিশের ওসির প্রত্যাহার চাইলেও নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কর্মকর্তারা অভিযোগে কান না দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন। রাজশাহীতে সারা শহরজুড়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এমনভাবে পোষ্টার সেঁটেছে যে সেখানে অন্য কারও পোষ্টার লাগানোর কোন জায়গাই নেই।  সিলেটে ধানের শীষের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরির প্রচার প্রচারণা বিরত রেখে থানার সামনে অনশন করতে হচ্ছে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য। বরিশাল ও রাজশাহীতে সরকারি দলের পক্ষ থেকে কালো টাকার ছড়াছড়ি চলছে। অস্বাভাবিক টাকা খরচ দৃশ্যমান হলেও সেখানে নির্বাচনী কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। বরিশালে বিএনপির সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারনায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। ধানের শীষের পোষ্টার ছিড়ে ফেলছে, মাইক ভাঙচুর করছে, সমর্থকদের মারধর করছে। খুলনা ও গাজীপুরে অনুসৃত নীতি বাস্তবায়ন করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই ইসির অধীনে কখনওই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। 

 

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।