Tue. May 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪.মঙ্গলবার,৩১ জুলাই, ২০১৮ঃগতকাল অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে তামাশা ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন বলছে বিএনপি। দলটি বলছে- এই নির্বাচনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি এবং অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন প্রদানের আহবান জানাচ্ছি। 
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন,  গতকাল রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট এই ৩টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের নাটক শেষ হলো। এই নির্বাচনে আমাদের কথাই সত্য প্রমানিত হলো-শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না। প্রমানিত হলো এই অযোগ্য নির্বাচন কমিশিনের পরিচালনায় কোন নির্বাচনেই জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব নয়। গাজীপুর ও খুলনার মতো এই তিনটি সিটি কর্পোরেশনে ভোট চুরি বা কারচুপি নয়, ভোট ডাকাতির মহৌৎসব অনুষ্ঠিত হলো। বিরোধী দলগুলোর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিপক্ষ এই অবৈধ সরকারের প্রশাসন এবং অযোগ্য নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন পুলিশের মতোই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। শুধু নির্বাচনের দিনে নয়, সিডিউল ঘোষনার দিন থেকেই পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড মাঠে নেমেছে। মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হয়রানী, হুমকি ও ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দুরে রাখা, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব আইন ভঙ্গ, শত শত অভিযোগে কোনও কর্ণপাত না করে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে আবারও ধ্বংস করলো। 


এই নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই আমরা বলে এসেছি-এই কমিশন আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট এবং অযোগ্য। তারা আচরণ বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের নির্যাতন বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানতে পুলিশকে বাধ্য করতে পারেনি। 


বরিশালে কয়েকদিন আগে থেকেই বাইরে থেকে হাজার হাজার আওয়ামী কর্মী জড়ো করা হয়েছিল- কেন্দ্রগুলো থেকে বিএনপি‘র এজেন্টদেরকে বের করে দিয়েছে। 


শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করছে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করছে। লক্ষ্য একটি-একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ভিন্নরুপে প্রতিষ্ঠা করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা। আওয়ামী লীগ এখন একটি গণবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে তারা জয়ী হতে পারবে না বলেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করে তারা জাতীয় সংসদের নির্বাাচন করতে চায়। ২০১৪ সালের মতোই একতরফা নির্বাচন করার নীল নক্শা করছে। জনগণ তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দিবে না। দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই গণতন্ত্রের মাতা আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলীয় সকল বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন  করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে প–র্ণস্বাধীন করতে হবে। বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সরকারকে আহবান জানাবো কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে উপরোক্ত দাবিগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। 


এই তামাশা ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি এবং অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন প্রদানের আহবান জানাচ্ছি।


কর্মসূচি ঃ
তিন সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, অনাচার, ভোট জালিয়াতি ও ভোট সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিএনপি’র উদ্যোগে আগামী ০২ আগষ্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। 


তিনি বলেন,
* রাজশাহীর আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে হাজার হাজার লোক আনা হয়েছে।
* রাজশাহীতে ২৮ জুলাই মধ্যরাত থেকে সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, বাড়িতে বাড়িতে হানা ও হুমকি বন্ধ হয়নি। পুরুষদের না পেলে মেয়েদের থানায় নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং ধানের শীষের ২৪ জন এজেন্ট নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অভিযোগ করেছেন।
* ভোটের দিন ওসি কামাল বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মিজানুর রহমান মিনুকে ধাক্কাধাক্কি করে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। জনাব মিজানুর রহমান মিনুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া হয়। রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু এবং মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলনকেও ওসি কামাল ধাক্কা মেরে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে।
* ভোটারদেরকে সিল স্বাক্ষরহীন ব্যালট পেপার দেয়া হয়েছে।
* অধিকাংশ কেন্দ্রেই পুরুষ ও মহিলা পোলিং এজেন্টদের বেব করে দিয়েছে। 
* রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। 
* ১২:১৫ টায় ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বিনোদপুরের একটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন যে  মেয়রের ব্যালট পেপার সকালেই শেষ হয়ে গেছে, এ কথা শুনে তিনি সেখানে অবস্থান গ্রহণ করেন।
* ভোট চলাকালে মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল একেকটি কেন্দ্রে গিয়ে এজেন্টদের কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে অন্য কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার পর-পরই আবার সেই এজেন্টদের পুনরায় বের করে দেয়া হয়।
* রাজশাহীতে ভোট দিতে না পেরে মহিলা ভোটার’রা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
* রাজশাহীতে ১২টার মধ্যে মেয়রের ব্যালট পেপার শেষ
* রাজশাহীর ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের পুলিশের সহায়তায় চড় থাপ্পড় মেরে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা।


বিএনপি মহাসচিব বলেন,
*বরিশালের বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের ব্যাজ লাগিয়ে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট’রা কাজ করেছে। ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সারোয়ারকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।
* পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের এজেন্টদেরকে প্রায় সব কেন্দ্র থেকেই বের করে দেয় এবং অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের মারধরও করা হয়।
* কোথাও কোথাও ধানের শীষের এজেন্টদের সামনেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নৌকা মার্কার ব্যালট পেপারে দেদারসে জালভোট দিয়ে বাক্সে ঢুকিয়েছে।
* ধানের শীষের সমর্থকদের ব্যালট পেপার নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
* নির্বাচন চলাকালে গণমাধ্যমের কর্মীদের উপরও আক্রমণ করা হয়েছে
* বাসদের মেয়র প্রার্থী ডাঃ মনিষা চক্রবর্তীকে শারীরিকভাবে আঘাত করে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
* বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে নবজাগরনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নারীদের কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিতে ঢুকেছিলেন একজন পুরুষ।
* বরিশালে আ: লীগ ছাড়া সব প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন
* বরিশালের নৌকা মার্কার প্রাথী যেহেতু ক্ষমতাশালী পরিবারের সদস্য, সেখানে সরকারের বাহিনীগুলো তার পক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেছে।
* ব্যালট পেপারে হাত পাখা’র কোন প্রতীকই ছিল না
* ভোটের দিনের দু’তিন আগে থেকে প্রতিদিনই বরিশালে প্রায় দু’শ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় হানা দিতো

 


বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন,
* সিলেটে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কেন্দ্রে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের কমবেশী বের করে দেয়া হয়েছে।
* ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টরা অভিযোগ উত্থাপন করলেও প্রিজাইডিং অফিসার’রা তা কানে তোলেননি।
* ভোট কেন্দ্র দখল করে গোলাগুলি করেছে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। এতে ধানের শীষের দু’জন সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছে।
* অন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের মতো এখানেও ধানের শীষের এজেন্টদেরকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
* কেন্দ্র দখল করে নৌকা মার্কায় একচেটিয়া সিল মারার উৎসবও চালিয়েছে আওয়ামী ক্যাডার’রা
* সিলেটে ১৭ নং ওয়ার্ডের আম্বরখানা দরগা গেট প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মী জালভোট দেওয়ার সময় হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম আলো’র প্রতিনিধি মিজবাহ ছবি তুলেছিলেন, এসময় ছাত্রলীগের কর্মীরা তার মোবাইল কেড়ে নেয় এবং পরে পুলিশ এসে তাকে বেধড়ক মারধর করে। ছাত্রলীগও এই হামলায় অংশ নেয়। হামলায় মিজবাহ’র পিঠ ও ডান হাতের কিছু অংশ কেটে যায়। ছাত্রলীগের কর্মীরা মোবাইল থেকে জালভোট দেয়ার ভিডিও মুছে দেয়। হামলায় আরও আহত হন ডেইলী স্টারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মাসুদ হৃদয়।
* সিলেট সিটিতে ভোটের বদলে কয়েকটি কেন্দ্রে স্থান করে নিয়েছিল দখল, বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি।
* নির্বাচনের আগের দিনেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপি’র সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক
আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়। এর ৪/৫ দিন আগে তার ছেলে রুমান রাজ্জাককেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

তিনি বলেন,এবারের তিন সিটির নির্বাচন খুলনা-গাজীপুর মডেলের ভিন্ন রুপ, তবে এটি ভয়ংকর রুপ
* গণগ্রেফতার চলেছে লাগাতারভাবে।
* নির্বাচনী এলাকার বাহিরে আশপাশ থেকে আওয়ামী লীগের পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন নেতাদের নেতৃত্বে হাজার হাজার বহিরাগতকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঢোকানো হয়েছে।
* তিন সিটি নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়নি, বরং সরকারের অধীনে কমিশন কাজ করেছে।
* পূর্বের নির্বাচনগুলোতে ভোট কেন্দ্রে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হতো, কিন্তু এবারে সাংবাদিকদের সে সুযোগ দেয়া হয়নি।
* প্রায় ২০০’র অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১০০০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবদুস সালাম ও আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।