Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলাবাজার২৪.শুক্রবার ০৩ আগস্ট , ২০১৮ঃ নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হলে তবেই সড়কে গাড়ি নামাবেন তারা।

গত ২৯ জুলাই ঢাকায় বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বেশ কিছু গাড়ি ভাংচুর হয়। সমালোচনার মুখে পড়েন পরিবহণ শ্রমিকদের নেতা নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও।

পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফেরার প্রত্যাশা প্রকাশের পরদিন শুক্রবার সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন মালিক-শ্রমিকরা।

শুক্রবার সড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থান আগের কয়েক দিনের মতো নেই; এর মধ্যে পরিবহণ মালিক কিংবা শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধের কারণে সারাদেশে জনদুর্ভোগ চলছে।

বাস মালিকরা বলছেন, সড়কে ভাংচুরের কারণে পরিবহণ শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইছেন না। অন্যদিকে পরিবহণ শ্রমিকরা বলছেন, মালিকরা বাস নামাতে নিষেধ করেছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ত উল্লাহ শুক্রবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্ররা বাস ভাংচুর করছে এজন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।”

বাস চলাচল বন্ধের কোনো নির্দেশনা মালিকরা দিয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওইভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ভাংচুর করছে, তাই বাস বন্ধ রয়েছে।”

কবে নাগাদ বাস চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে- জানতে চাইলে সঠিক দিনক্ষণ না জানিয়ে এনায়েত বলেন, “ছাত্ররা ভাংচুর বন্ধ করুক, বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

বাস মালিক সমিতির নেতা এনায়েত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও নেতা। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

এনায়েত উল্লাহর মালিকানাধীন এনা পরিবহনের ফেনী জেলা ব্যবস্থাপক হাসান চৌধুরী বলেন, “গত কয়েক দিনে ঢাকায় আমাদের বেশ কয়েকটি বাস ভাংচুর করায় ঢাকা থেকে গাড়ি আসতে পারেনি। এজন্য আজ ভোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।”

বাস বন্ধের বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলন চলাকালে সড়কে ৩২৫টি বাস ভাংচুর করা হয়েছে, ১১টি বাস পোড়ানো হয়েছে। “আমরা এই পরিস্থিতিতে সড়কে বাস নামাতে নিরাপদ বোধ করছি না। এভাবে বাস ভাংচুর করলে, পুড়িয়ে দিলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।”

শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক বলে মেনে নিয়ে কালাম বলেন, “কিন্তু সড়ক নিরাপদ কি শুধু বাস আর ড্রাইভার ঠিক হলেই হল? সড়কে জায়গায় জায়গায় গর্ত। এগুলোও তো দুর্ঘটনার কারণ। সড়কও ঠিক করতে হবে।”

বাস চলাচল কখন শুরু হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকার যদি বলে সড়ক নিরাপদ, তবে আমরা যে কোনো সময় বাস নামাব।”

ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সকালে একদল পরিবহণ শ্রমিককে সড়কে অবস্থান নিয়ে গাড়ি আটকাতে দেখা গেছে।

 

 

 

 

চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটের চলাচলকারী ইউনিক পরিবহণের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিরাপত্তা না থাকায় অঘোষিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ আছে।”

সড়কে শ্রমিকদের অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, “গাড়ি বন্ধ থাকায় তারা যাত্রাবাড়ির সড়কে দাঁড়িয়ে আছে, এটা অবরোধ বা সে ধরনের কিছু না।”

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে অবহেলা থাকলে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন করার দাবি রয়েছে শিক্ষার্থীদের, তা মেনে আইন সংস্কারের আশ্বাসও দিয়েছে সরকার।

তবে সে ধরনের আইন হলে তা ঠেকানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গাবতলীর এক পরিবহণ শ্রমিক।

অরিণ পরিবহনের ওই কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন আইন করে সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান করা হলে তা কোনো পরিবহন শ্রমিক মেনে নেবে না।

অঘোষিত এই ধর্মঘটে ঢাকার সড়কে যেমন বাস চলছে না, তেমনি দূর পাল্লার বাসও ছাড়ছে না। আবার বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার পথেও বাস ছাড়ছে না।

সিলেট সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। এ অবস্থায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।”

ফেনী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও গাড়ি ভাংচুরের কারণে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালকরা। শ্রমিকরা অপারগতা প্রকাশ করায় সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।”

ফেনী আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নে সাধারণ সম্পাদক আজম চৌধুরী বলেন, “বাসচালকরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে চাইছে না। শুধু চালকরা নয়, যাত্রীরাও নিরাপদ থাকছে না। এ কারণে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।”

উত্তরাঞ্চলের রংপুর থেকেও কোনো বাস চলছে না। কাদের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলছেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবু আজগর আহমেদ পিন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস বন্ধের ব্যাপারে আমাদের সমিতির সঙ্গে কেউ কথা বলেনি। তবে আমার যেটা ধারণা করছি, নিরাপত্তাজনিত কারণেই হয়তো চালকরা বাস চালাচ্ছেন না।”

রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, “আমিও জানি না, কাদের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।”

ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের জয়পুরহাটের ব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকায় বিভিন্ন পরিবহনে ভাংচুর করা হয়েছে। আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি।”

জয়পুরহাট জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান বেদারুল ইসলাম বেদিন ধর্মঘট ডাকার কথাও জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিবহনের নিরাপত্তার জন্য  অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।”

 

জয়পুরহাট টার্মিনালে অলস বসে আছে বাসগুলো 

জয়পুরহাট টার্মিনালে অলস বসে আছে বাসগুলো

 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান পিটার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সারাদেশে যে বিক্ষোভ কর্মসূচি করছে তার সঙ্গে বাস মালিকেরাও একমত।

“কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। তারা বাসে ভাংচুর চালাচ্ছে। ফলে শ্রমিক ও যানের নিরাপত্তার কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে রাতে বাস চলাচল করতে পারে বলে জানান মনজুর।

ময়মনসিংহ জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির বাস বিভাগের সম্পাদক বিকাশ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তায় বের হলেই শিক্ষার্থীরা ইচ্ছামতো বাস ভাংচুর করছে। এতে মালিকরা লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই নিরাপত্তার অভাবে শুক্রবারও ঢাকামুখী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়।”

পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হলে বিকাল থেকে বাস চলাচল আবার শুরু হতে পারে বলে জানান বিকাশ।