খোলাবাজার২৪.শনিবার ১১ আগস্ট ,২০১৮ঃ একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার প্রজন্মের কর্মকা-ের উপর। প্রজন্মই আগামীতে দেশ ও জাতির মেরুদ-। এ প্রজন্ম যতো বিকশিত-আলোকিত হবে, দেশ ও জাতি ততো উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে। সে প্রেক্ষিতে আমাদের বাংলাদেশেরও ভবিষ্যৎ-আগামীর প্রজন্মের মাঝেই নিহিত আছে। তাই বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম সমন্ধে একটু জেনে নেওয়া যাক।
রাজধানী ঢাকায় আব্দুল করিম ও মীম নামের দু’জন ছাত্র-ছাত্রী’র উপর তিন বাসের রেসারেসিতে ফুটপাতে বাস চাপায় নিহত হওয়ায় প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রজন্মদের অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীদের জাগরণ উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষনীয়। এ প্রজন্মদের জাগরণের কাছে দেশের মন্ত্রী, এম পি, পুলিশ-প্রশাসন, অসচেতন জনগণ সবাই যেন হার মেনেছে। সবারই চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রজন্মরা দুনীতি-স্বজনপ্রীতি, দমন-পীড়ন, নির্যাতন-অত্যাচার, অনিয়ম-অসচেতন-অসাবধানতা-অবিচার ইত্যাদি দেখিয়ে দিয়ে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শিখিয়ে দেয়। কিন্তু প্রজন্মদের মাঝে হঠাৎ করে এ জাগরণ আসে নাই। দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, দমন-পীড়ন, নির্যাতন-অত্যাচার, অনিয়ম-অসচেতন-অসাবধনা-অবিচার ইত্যাদি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে নিজেরা রাজপথে নেমে পড়ে। এর জন্য শতভাগ দায়ী বর্তমান আওয়ামী জোট শাসক ও শাসকের গৃহ পালিত অদ্ভূত সংসদীয় বিরোধী দল-হু.ম. এরশাদের জাতীয় পাটি-যা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে-বিরোধী দল। একটু আলোকপাত করলেই তা সহজেই অনুমেয়।
২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর বিএনপি জোট সরকার যখন তাদের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় তখন সেদিনই আওয়ামীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে তার উপর নৃত্য করে-যা প্রজন্মরা গণমাধ্যমের কল্যাণে সেদিন দেখেছে-এখনও ২৮ অক্টোবর আসলেই গণমাধ্যমের মাধ্যমে আজকের প্রজন্মরা দেখে যাচ্ছে এবং মনের মধ্যে ওই দল সর্ম্পকে বিরূপ ধারনা নিচ্ছে।
আওয়ামীলীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারবে না ভেবে ঠুনকো অযুহাতে দেশে ১/১১ সরকার আনে এবং বলে এ সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। এই ১/১১ সরকার আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেন এবং তার নামে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি-চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি হত্যা মামলাসহ ১৫ টি মামলা করেন। তখন আওয়ামীলীগ থেকে বলা হয় বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে গেফতার করা হয় না কেন ? তাই, তখন অনেকটা সমতা আনার লক্ষ্যে (অনেকের মতামত) সুস্পষ্ট কোন অভিযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও ১/১১ সরকার বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করেন এবং মামুলি অর্থে ৫ টি মামলা দেন। পরবর্তীতে তার পরিবারের উপর (দুই সন্তান) অমানবিক, জীবনহরণকারী অত্যাচার-নির্যাতন, মিথ্যাচার সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়াকে দেশ ছাড়া করতে না পেরে ( শেখ হাসিনাকে ১/১১ সরকার বিদেশে পাঠিয়েছিল) তার নীতি ও আদর্শের কাছে হেরে গিয়ে ১/১১ সরকার নির্বাচন দেন। কথিত আছে সে নির্বাচনে শেখ হাসিনা আতাত করে ক্ষমতায় আসেন।
ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী জোট সরকারের দুঃশাসন একর পর এক চলতেই থাকে। আওয়ামী সরকারের অযোগ্য ও অদক্ষতায় প্রথমেই ঘটে দেশের ইতিহাসে বড় হত্যাকা–বিডিআর হত্যাকা-। আওয়ামী ক্যাডারদের দ্বারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শ্রমিক-দর্জি বিশ্বজিৎ হত্যা। এ বিশ্বজিৎ বিনা অপরাধে ছাত্রলীগের হামলায় জীবন বাঁচাতে অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও আওয়ামী ক্যাডারদের মনে দাগ কাটে নি। এরপর আওয়ামী দুঃশাসনে ঘটে শেয়ার বাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধ্বস-ফলে ক্ষুদ্র বিনিযোগকারীরা পথে বসে-এমনকি আত্মহত্যাও করে। শেয়ার-বাজার কেলেংকারী হোতারা নিজেদের দলের লোক হওয়ায় আজো বিচার করেনি আওয়ামী সরকার। এরপর সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেংকারীতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যায়-যার কোন সুরাহা আজো হয় নাই, অথচ অর্থমন্ত্রী এতোগুলো টাকাকে সামান্য টাকা বলেছিলেন। এরপর আসে সরকারী দলের এক ক্যাডারের দুর্নীতি-অনিয়মের ফলে ‘সাভার ট্রাজেডি’ অর্থাৎ রানা প্লাজা ধ্বস। ফলে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক নিহত হয় এবং হাজার হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হয়ে আজো কোনমতে বেঁচে আছে। সাভার ট্রাজেডির মুল হোতা আওয়ামী হওয়ায় আজো তার বিচার প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামী শাসনের সময় বিরোধী মত ও দলের লোকজনের গুম হওয়ার নতুন সংস্কৃতি চালু হয়-মনেহয় কোন এলিয়ান বাহিনী এসে গুম করে শুধু বেছে বেছে বিরোধী লোকজনদের-তাদের সাথে সরকারের সখ্য থাকার কারণে সরকারী দলের কেউ গুম হয় না। এসব দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম-অসচেতন, অপশাসন প্রজন্মরা দেখছে এবং এখনও গণ মাধ্যমের মাধ্যমে প্রজন্মরা দেখে বা জেনে আসছে।
আওয়ামী সরকার এসব দুঃশাসনে ক্ষমতা যেনো না ছাড়তে হয় তার জন্য সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দিয়ে সংবিধান সংশোধন করেন। আওয়ামীলীগ জোট প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র মতামতের কোন তোয়াক্কা না করেই পুলিশ-প্রশাসন, আওয়ামী সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের উপর ভর করে-জোর করে ভোটারবিহীন-প্রার্থীবিহীন-রাজনৈতিক দলবিহীন-পর্যবেক্ষকবিহীন এক নির্বাচন করে জবর-দখলমূলক ক্ষমতায় আসেন ২০১৪ সালে। যে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল শুন্য, কুকুরও ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে-গণতান্ত্রিক বিশ্বের ইতিহাসে ১৫৩ টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতিয়ে নেন এবং ক্ষমতা থাকার বন্দোবস্ত করেন। যদিও আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনা বলেছিলেন অল্প কিছুদিনের মধ্যে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা হবে-এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। ক্ষমতায় বসে সে কথা বেশরমের মতো চেপে যায় এবং অদ্ভুত গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মাধ্যমে করিয়ে আওয়ামী সরকার তাদের অপশাসন, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, দমন-পীড়ন, নির্যাতন-অত্যাচার, অনিয়ম-অবিচার ইত্যাদি চালাতে থাকে। এতে দেশ ও জাতির স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে, জনকল্যাণার্থে ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অবিরত সংগ্রাম করে যাচ্ছিছিলেন, এ সরকার তখন ১/১১ সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ভূয়া-জালনথির কারসাজিতে প্রহসনের বিচারের রায়ে সাজা দিয়ে নির্জন, স্যাঁতস্যাঁতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কারাবন্দী করে রেখেছেন। এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে বেগম খালেদা জিয়া জামিন পেলেও আওয়ামী সরকার ১/১১ এর পর ক্ষমতায় এসে বেগম খালেদা জিয়ার নামে আরো মিথ্যা-সাজানো-ভূয়া মামলা দেন এবং সেসব মামলায় শোন এ্যারেস্ট দেখিয়ে বন্দী র্দীঘায়িত করতেছেন তাদের অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার (৯০ দশকেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়া ভূমিকা রাখেন) জনগণ বেগম খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ অর্থাৎ ‘গণতন্ত্রের মা’ উপাধি দেন। তিনি জনগনের কাছে দেশনেত্রী থেকে হয়েছেন দেশমাতা। অথচ অপরদিকে আওয়ামী প্রধান তার নিজের নামের প্রায় ১৬ হাজার কোাটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি-চাঁদাবাজির এমনকি হত্যা মামলাসহ প্রায় ১৫ টি মামলা তুলে নেন-যার কয়েকটি বিচারাধীন ছিল। গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রতিনিয়ত এসব প্রজন্মরা দেখে যাচ্ছে।
২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারী পুলিশ-প্রশাসন, আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের উপর ভর করে জোর করে ভোটারবিহীন-প্রার্থীবিহীন-রাজনৈতিক দলবিহীন-পর্যবেক্ষকবিহীন এক নির্বাচন করে জবর-দখলমূলক ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী দুঃশাসন আরো বেপরোয়াভাবে বেড়ে যায়। দেশের ইতিহাসে জবর-দখলমূলক ভোটের সংস্কৃতি আওয়ামীলীগ চালু করে। যেখানে বিরোধী দলের প্রার্থীকে-ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো হয়, এজন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয় নতুবা তুলে নিয়ে গিয়ে দুরে কোথাও রেখে আসা হয়। ভয়-ভীতি, অস্ত্রবাজি করে কেন্দ্র জনমানব শুন্য করে আওয়ামী ক্যাডাররা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী (আংশিক) একাকার হয়ে নৌকায় ছিল মেরে ব্যালট বাক্স ভয়ার। সেখানে ১০০% এর বেশী ভোট পরে, মৃত ব্যক্তি অলৌকিক ক্ষমতায় এসে ভোট দিয়ে যায়, না-বালক ছেলেরা আওয়ামী ক্যাডারদের ডাকে অনেকটা ভয়ে সাড়া দিয়ে এসে একাধিক ভোট দিয়ে যায়, ইভিএম কেন্দ্রে ডিজিটাল জাদুতে প্রায় সব ভোট শুধু নৌকা মার্কায় পায় (সম্প্রতি সিটি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে)। সকল নির্বাচনে শুধু আওয়ামীরাই এতে বিজয় হয়ে যায়, গণতন্ত্র এতে মারা যায়। (সুত্রঃ সাম্প্রতিক জাতীয় দৈনিকগুলো) আর আওয়ামী সরকারের দৌরাতœ-দুঃশাসন রয়েই যায়। বিরোধী দল বিএনপি প্রতিবাদ বা কথা বললেই প্রতিদিন আওয়ামী ক্যাডার-প্রশাসন দ্বারা মার খায়। জনগণ এসব দেখে করে শুধু হায় হায়-যেনো তারা অসহায়, প্রজন্মরা এসব গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেখে দেখে যায় আর মনকে শুধু ভাবায় দেশ-জাতির জন্য কি করা যায় ?
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এসবে জড়িয়ে যাওয়ার কারণ আওয়ামী মন্ত্রী এমপি’রা টাকা খেয়ে বা তাদের নিজেদের লোকদের জোর করে চাকুরিতে ঢোকায়-যার প্রমাণ নারায়নগঞ্জের সাত খুন ঘটায় আওয়ামী এক মন্ত্রীর জামাতা-যে ব্যাবের চাকরি করতো। এঘটনাও প্রজন্মরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেনে আসতেছে।
আওয়ামী শাসনের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়ে যায়, ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র মারা যায়, সম্প্রতি ভল্ট থেকে স্বর্ণও উধাও, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উধাও। এগুলো যায় কোথায় ? প্রজন্মদের তা ভাবায়। প্রজন্মরা এর হিসাব চায়, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায়, আইন-বিচার-সুশাসন চায়। আব্দুল করিম ও মিমদের বাস চাপায় হত্যার বিচার চায়-তারা আজ নিরাপদ সড়ক চায়। তাই তারা স্কুল ছেড়ে রাস্তায় নামে দাবী-দাওয়া নিয়ে।
তাদের হাতে শোভা পায় বিভিন্ন শ্লোগান-‘আমরা ন্যায় বিচার চাই’। “আমার ভাই কেন কবরে, খুনিরা কেন ঘুরে বাইরে’। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। `SAVE OUR FUTURE' `It wasn't an Accident. It was A Crime-A MURDER'
“যদি তুমি ভয় পাও
তবে তুমি শেষ,
যদি তুমি রুখে দাড়াও
তবে তুমি বাংলাদেশ”।
‘মা তুমি চিল্লু করো না-দাবী আদায় করেই ঘরে ফিরবো। কাল আমার কিছু হলে যেন তোমার দাবীর জন্য ভাবতে না হয়।’ ‘ জনপ্রতিনিধিদের সপ্তাহে অন্তত তিন দিন গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হবে’। …ইত্যাদি সব শ্লোগান নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নামিয়ে দেখিয়ে দিল বিনা ভোটের সরকারের মন্ত্রীরা-এমপিরা, সচিবরা, সরকারী কর্মকর্তারা, পুলিশ বাহিনীরা কতোটা দুর্নীতিবাজ, আইন ভঙ্গকারী। এরা কেউই আইন মানেন না। ছাত্ররা রাস্তায় দাড়িয়ে যখন গাড়ীর লাইসেন্স চেক করতে লাগলেন তখন বেড়িয়ে এলো থলের বিড়াল। দেখলেন সরকারের আজ্ঞাবাহী পুলিশ বাহিনীর মাথায় হেলমেট নেই অথচ এই পুলিশ বাহিনীই এর জন্য রাস্তায় জনগণের জরিমানা করে টাকা তুলে বা ঘুষ খায়। পুলিশের গাড়ীতে ছাত্ররা গাজা পায়। সচিবের গাড়ীতে তার ড্রাইভার লাইসেন্স নেই, গাড়ীর লাইসেন্স নেই বা কোন কাগজাদিও নেই। বিচারপতির গাড়ীরও কাগজ নেই-ছাত্ররা তার গাড়েিত লেখে দেয় বিচারপতি চোর। মন্ত্রীরা সংসদে আইন পাশ করে অথচ মন্ত্রীর গাড়ী যখন উল্টো পথে যাচ্ছিল তখন ছাত্ররা থামিয়ে দিলেন এবং গাড়ী থেকে মন্ত্রীকে নামতে বাধ্য করেন এবং সেই গাড়ীটিও ফিরিয়ে দেন। ছাত্রদের হাতে বিনা ভোটের এই সরকার যেন রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেলেন। ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে লেন অনুযায়ী শৃঙ্খলাভাবে গাড়ী দাড় করিয়ে পারাপারের সুযোগ করে দেন। যেনো এটা ঢাকা নামের নতুন এক শহরের জন্ম। তাই বলা যায়-
“ছাত্র-ছাত্রীরা অর্থাৎ প্রজন্মরা-
নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে
দুর্নীতি-দুঃশাসন তুলে ধরেছে,
নিয়ম-শৃঙ্খলা দেখিয়ে দিয়েছে
বিশ্ব বিবেককে যে নাড়া দিয়েছে
দু’হাত ভরে বাহাবা পেয়ে যাচ্ছে”।
ছাত্রদের এ নায্য আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংস্থা ও সংগঠনগুলোও এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাত্মতা প্রকাশ করলেন। অবিভাবকরা নামেন রাস্তায় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে যেমন-‘আমি একজন মা-সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তামুক্ত থাকতে চাই’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এতে সমর্থন দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।
তারপরেও দেখা যায় সরকারী দলের ক্যাডাররা, ছাত্রলীগ, যুবলীগরা আর তাদের সাথে একান্ত অজ্ঞাবাহী ক্রীতদাস পুলিশ (আংশিক) জনগণের বা ছাত্রদের পাশে না থেকে ঐসব ক্যাডারদের সাথে একাকার হয়ে নিরীহ কিশোর ছাত্রদের উপর ও বিশ্ববিদ্যারয়ের ছাত্রদের উপর হামলা চালায়-এতে অনেকেই বলাবলি করে ছাত্রদের উপর হামলায় সরকারের মদদ আছে। এতেও কিশোর ছাত্র সমাজ থামে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো দাবী-দাওয়া সব মেনে নেওয়া হল কিন্তু ছাত্ররা তাতেও থামে না। এর জবাবে এক ছাত্র তার আইডি কার্ড দেখিয়ে বলে-এই যে আমার লাইসেন্স, সরকার যে আমাদের দাবী মেনে নিয়েছেন তার লাইসেন্স কোথায় ? কেননা, ছাত্ররা দেখছে এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া বা চাকুরিপ্রার্থী ছাত্রদের সাথে কি রকম প্রতারণা করেছেন সরকার। সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাড়িয়ে বলেছিলেন-সব কোটা বাতিল। কোন কোটা থাকবে না। অথচ সময় গড়িয়ে গেলেও কোন প্রজ্ঞাপন জারি হয় নাই-এতে আদালতের কথা বলে । তাই, ছাত্ররা ইতিমধ্যে জেনে গেছে ভোটারবিহীন এ সরকারের সরকার প্রধান থেকে আতি-পাতি নেতারা কারো কথার কোন দাম নেই এবং সবারই একই সুর। অবশ্য এর আগেও ছাত্ররা সরকার প্রধানের প্রতারণা দেখেছেন। সরকার প্রধান ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারী ভোটারবিহীন-প্রার্থীবিহীন-রাজনৈতিক দলবিহীন নির্বাচনের আগে বলেছিলেন-এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। এরপরে অল্প সময়ের মধ্যেই সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা হবে। অবৈধভাবে ক্ষসতায় গিয়ে তা আর পালন করেন নাই। তাই আগের এসব প্রতারণা দেখে ছাত্ররা মুখের প্রতিশ্রুতি আর বিশ্বাস করেন না। হয়তো সরকার বেশী বাড়াবড়ি করলে ছাত্ররা আরো কঠিন হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়াতে পারে। ভোটারবিহীনভাবে কেন ক্ষমতায় আছেন এর হিসাবও চাইতে পারে। কেন দেশে আজ ভোট সুষ্ঠ হয় না। ছাত্ররা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর পর থেকে স্থানীয় ও জাতীয় সকল নির্বাচনে সরকারী দলের তথা আওয়ামীলীগদের নোংরা হস্তক্ষেপ অবলোকন করে আসছে। বিরোধী দল তথা বিএনপি এসবের প্রতিবাদ করলে কি অন্যায়ভাবে আইন-কানুনের মাথা খেয়ে তাদের উপর মামলা-হামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, রিমান্ড-জেল-জুলুম, গুম-খুন-অপহরণ বা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় তা ছাত্রসমাজ দেখেছে। তাই ছাত্ররা গণতান্ত্রিক এই দেশে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধস্বরূপ গণতন্ত্রের হিসাব চাইতে পারে। হিসাব চেয়ে কিন্তু রাস্তায় প্যøাকার্ড হাতে দাড়িয়েছে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির নিঃষ্পাপ শিশুটিও। এই সাগর-রুনির বিচারতো দুরের কথা-সাগর রুনির হত্যার প্রতিবেদন ৫২ বারেরও বেশী বার জমা দিতে গেলেও বারবার পিছিয়েছে। তাই পিতা-মাতার হত্যার বিচার না পেয়ে তাদের শিশু মেঘও রাস্তায় নামে। মেঘের প্ল্যাকাডে লেখা ছিল-
‘নিরাপদ সড়ক চাই
বাস চাপায় নিহত আপু-ভাইয়াদের খুনের বিচার চাই
ছোটদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ চাই
আমি মিম্মি-বাবার(সাগর-রুনি)খুনের বিচার চাই
'I Wan't justice'
দেখা যায় রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, গণ্যমান্য ব্যক্তি অবিভাবক সবাই ছাত্রদের আন্দোলনে সমর্থন দেয়। কেননা, বাংলার ইতিহাসে ছাত্রসমাজ কখনো মাথা নতো করেন নাই-বিজয় তাদের হয়েছেই। এই ছাত্রদের হাতে রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যানারও কিন্তু দেখা গেছে। ছাত্রদের হাতে ব্যানারে লেখা আছে– 'We Wan't justice'
“৪৭ বছরের পুরনো রাষ্ট্রের সংস্কার কাজ চলছে
সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত”।
-আমি/আপনি/সবাই
পাঠকগণ কি বুঝা যায় ? যেনো প্রজন্মের বাংলাদেশঃ বির্বতনের ধ্বনি শোনা যায়। এই ছাত্র সমাজের বির্বতনের আগেই আওয়ামী সরকারের টনক নড়া উচিত। কেননা, দেশের জনগণ আজ তাদের অধিকার-ভোট দিতে পারেন না। ভোট চুরি নয়-ডাকাতিতে আওয়ামীলীগ জোট-তাদের ছাত্রলীগ-যুবলীগ, সন্ত্রসী-ক্যাডার দ্বারা এবং পুলিশ প্রশাসনও (আংশিক) তাদের সাথে যোগ দেয়-ফলে এতই ভোট ডাকাতি হয় যে-দেশে আওয়ামীলীগ ছাড়া কেউই তেমন ভোট পায় না। আগে ভোটের শ্লোগান ছিল ‘আমার ভোট আমি দিব-যাকে খুশি তাকে দিব’। আওয়ামীলীগ এতই ভোট ডাকাতি করে যে, এখন জনগণের কাছে তা হযেছে-‘ আমার ভোট আমি দিব-তোমার ভোটও আমি দিব’। আর এসব নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন যেনো বোবা, অন্ধ, নির্বিকার।
জনগণ বলে এতই যদি আওয়ামীলীগ জনপ্রিয় হয় তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে সহায়ক সরকার বা তৃতীয় কোন পক্ষের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায় কেনো। দুর্নীতি-দুঃশাসন এতই করেছেন যে আওয়ামী সরকার নিরপেক্ষ, সুষ্ঠ, অবাধ, অংশগ্রহণ নির্বাচন দিতে ভয় পায় ? আওয়ামী সরকারের আরো ক্ষমতায় থাকার এসব জারি-জুড়ি কিন্তু ছাত্রসমাজ বুঝে ফেলছে। ছাত্র-সমাজ জানে কি অন্যায়ভাবে মিথ্যা, সাজানো মামলায় ভূয়া-জালনথির কারসাজিতে প্রহসনের বিচারেরর রায়ে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী-শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন মওকুফকারী প্রধানমন্ত্রী এবং উপ-বৃত্তিচালুকারী প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মাতা-গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে নির্জন, অস্বাস্থ্যকার, স্যাঁতস্যাঁতে কারাগরে বন্দী করে রেখেছেন এবং উচ্চ আদালত কর্তৃক জামিন সত্ত্বেও নানা অযুহাতে অন্যান্য মিথ্যা-ভূয়া মামলায় বন্দী করে রেখেছেন-তা এই ছাত্রসমাজ সবই জানে। তাই সরকারের জন্য ভালো সময় থাকতে ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাদ দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সহায়ক সরকার বা তৃতীয় কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে মুক্ত হওয়া-তা না করে যদি সরকার আবার ২০১৪ সালের মতো কুকুর মার্কা-ভোট ডাকাতির নির্বাচন করতে যান তাহলে হয়তো ছাত্র সমাজের বিবর্তনের জাগরণ দেখা যেতে পারে। হয়তো ছাত্ররাই তাদের অনুধাবন শক্তি জাগ্রত করে নিজ নিজ স্কুল, কলেজগুলোর ভোট কেন্দ্র বলিষ্টচিত্তে-শক্তহাতে পাহাড়া দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সহায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং যার ফলে হয়তো সরাকরের ছাত্রলীগ-যুবলীগ, সন্ত্রসী-ক্যাডার, আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনও (আংশিক) পিছু হটে যাবে ভোট ডাকাতি থেকে। কেননা, ইতিমধ্যে রাস্তায় নামিয়ে তারা শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা দেখালো। যা সারাবিশ্ব বাংলাদেশের ছাত্র-সমাজের কাজ তাক লাগিয়ে দেখল আর অবাক হলো, সেই সাথে এও সংকেত পেলো-‘বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ মাথা নোয়াবার নয়-তারা করবে একদিন বিশ্ব বিজয়”।
মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।