খোলাবাজার২৪. বুধবার ১৫ আগস্ট ,২০১৮ঃ ২০০৬ সালের ১৫ আগস্ট। সে সময়ের ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দল কেনিয়ার বিপক্ষে আজকের এই দিনে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগারের দেখা পান সবার প্রিয় ‘কৌশিক’ ওরফে মাশরাফি বিন মুর্তজা।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে টসে জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। তার সেই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করে প্রথম ওভারের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন বাঁহাতি পেসার সৈয়দ রাসেল। ১৬তম ওভারে স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের হাতে কেনিয়ার দ্বিতীয় উইকেটের পতন।
১৭তম ওভারে মাশারাফিকে আক্রমণে আনলেন অধিনায়ক খালেদ মাসুদ। ক্রিজে তখন কেনিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ টিকোলো আর মালহার প্যাটেল। ওভারের দ্বিতীয় বলে লেগ বাই থেকে রান নিয়ে প্যাটেলকে স্ট্রাইকে পাঠালেন টিকোলো। এক বল কোনোমতে ঠেকিয়ে পরের বলেই মাশরাফির সুইং না বুঝতে পেরে ব্যাট চালাতে গেলেন প্যাটেল। তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক মাসুদের গ্লাভসে বন্দী হলো বল। জোর আবেদনে সাড়া দিলেন আম্পায়ার হরিহরণ।
নিজের তৃতীয় ওভারে (ইনিংসের ২১তম ওভার) আবারও মাশরাফির আঘাত। এবার তার শিকার টিকোলো। আগের বলেই মাশরাফির বলে চার হাকিয়েছিলেন তিনি। পরের বলেই মাশরাফির দারুণ এক ডেলিভারিকে লেগ সাইডে পিছিয়ে অন সাইডে ফ্লিক করতে গিয়ে প্রায় স্কুপের মতো একটা শট খেলতে গিয়ে ওয়াইড মিড উইকেটে দাঁড়ানো আব্দুর রাজ্জাকের তালুবন্দি হন। মাশরাফির দ্বিতীয় উইকেট।
ইনিংসের ২৩তম ওভারে বল করতে এসে পঞ্চম বলে আবারও উইকেট পেলেন মাশরাফি। এবার তার শিকার তন্ময় মিশ্রা। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে মাশরাফির ছোড়া শর্ট বাউন্স বলে বাঁকানো শট খেলতে গিয়ে তন্ময়ের ব্যাটের কানায় লেগে বল স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। ওই ওভারে মাত্র ২ রান দেন মাশরাফি।
নিজের পঞ্চম ও ইনিংসের ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই কলিন্স ওবুইয়াকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মাশরাফি। বোলার আর উইকেটরক্ষকের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার হরিহরণ। এবার অবশ্য ওবুইয়া নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারতেন। কেননা ক্রিজ ছেড়ে তিনি বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসেনা। নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নিয়ে মাশরাফি তখন দলকে আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছেন। কেনিয়ার স্কোর তখন ২৬.২ ওভারে ৮৩/৬।
ইনিংসের ২৯তম ওভারের শেষ বলে জগদিশ প্যাটেলকে বিদায় করে নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন মাশরাফি। এবার স্লিপে ফিল্ডার রাখার সুবিধা হাতেনাতে পেয়ে যান তিনি। দারুণ এক সুইঙ্গার প্যাটেলের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে স্লিপে দাঁড়ানো ফরহাদ রেজার তালুবন্দি হয়। মাত্র ৮৭ রানে সপ্তম উইকেট হারায় কেনিয়া।
নিজের শেষ উইকেটটি পেতে ম্যাচের ৩৯ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় মাশরাফিকে। ১০৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুকছে কেনিয়া। বল করতে এসে ওভারের পঞ্চম বলে থমাস ওদুইওকে উকেইটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করে কেনিয়ার ৯ম উইকেটের পতন ঘটান মাশরাফি। সেই সাথে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার পেয়ে যান তিনি।
শেষ পর্যন্ত ১০ ওভারে ২.৬০ গড়ে মাত্র ২৬ রান খরচায় ৬ উইকেট তুলে নেন মাশরাফি। কেনিয়া ৪১.২ ওভারে ১১৮ রানে অল আউট হয়ে যায়।
ব্যাটিং করতে নেমে ফরহাদ রেজার ৪৮ বলে অপরাজিত ৪১ আর সাকিব আল হাসানের ৫৩ বলে অপরাজিত ২৫ রানে ২৭ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জেতার পাশাপাশি ৩-০ ব্যবধানে সিরিজও জিতে যায় বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়ের ঘটনা এটি।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারে ম্যচ সেরা নির্বাচিত হন মাশরাফি। শুধু তাই না সিরিজ সেরাও নির্বাচিত হন মাশরাফি। শেষ ম্যাচের পারফরম্যান্স বাংলাদেশের হয়ে সেরা ওয়ানডে বোলিং পারফরম্যান্স হিসেবে সেই সময় রেকর্ডবুকে স্থান পায়।
কেনিয়ার বিপক্ষে ওই সিরিজের তিন ম্যাচেই ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন মাশরাফি। প্রথম ম্যাচে ১০ ওভারে ৪ মেডেনসহ ২৫ রানে ৩ উইকেট, সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৩ রানে ৩ উইকেট দখল করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন মাশরাফি। এক সিরিজের তিন ম্যাচেই সেরা হওয়ার এ এক অনন্য নজির।
শুধু তাই না, ২৭ ওয়ানডেতে ৪৯ উইকেট সংগ্রহ করে ২০০৬ সালে সকল বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির মালিক হন মাশরাফি।