Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

খোলাবাজার২৪. বৃহস্পতিবার ১৬ আগস্ট ,২০১৮ঃ  ইংল্যান্ডে আগামী বছর বসছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আসুন দেখে নেই, এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে কারা বেশি পেসার না স্পিনার?

ইংলিশ কন্ডিশন বরাবরই পেসারদের। সামনের ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে এই ইংলিশ কন্ডিশনে। পেসারদের জিভে তাই এখনই জল চলে আসার কথা। বাংলাদেশ দলে তেমন কেউ বলতে শুধুই মাশরাফি বিন মুর্তজা। মোস্তাফিজের কথা উঠতে পারে। কিন্তু তাঁর হাতে মাশরাফির মতো নির্ভরতা কোথায়? এসব নিয়ে সমর্থকদের খুব বেশি আক্ষেপও থাকার কথা না। বাংলাদেশ যে বরাবরই স্পিনারদের দেশ, এক মাশরাফি ছাড়া তেমন টেকসই পেসার উঠে এল কোথায়?

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বোলিংকে এখনো স্পিননির্ভর বলেই ভাবা হয়। এ অবশ্য নতুন কিছু নয়। মোহাম্মদ রফিক, এনামুল হকদের হাত ঘুরে সেই আস্থাটুকু এখন সাকিব-মিরাজদের হাতে। স্পিনারদের এই ভিড়ে মাশরাফি যেন পেসারকুলের নিঃসঙ্গ শেরপা। আগের সেই তছনছিয়া পেস আর নেই। বয়স তা শুষে নিলেও ধার কমেনি তাঁর। ৩৪ বছর বয়সী মাশরাফি এখনো বাংলাদেশের সেরা পেসার! ওয়ানডেতে এক ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলিং-পরিসংখ্যানও তাঁর—২৬ রানে ৬ উইকেট।

মাশরাফির যৌবন যাঁরা মনে রেখেছেন তাঁদের কাছে সে ম্যাচটি ভোলার নয়। ২০০৬ সালে কেনিয়ায় স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করেছিল হাবিবুল বাশারের দল। সিরিজ-সেরা ২২ বছর বয়সী মাশরাফি। প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ-সেরা। পরের ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ৫৩ বলে ৪৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। আর শেষ ম্যাচে এসে কেনেডি ওটিয়েনো-স্টিভ টিকোলোদের ব্যাটিং অর্ডার মাশরাফির একার তোপেই পুড়ে খাক! ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে কেনিয়াকে বেঁধে ফেলেছিলেন ১১৮ রানে।

সেই দিন, সেই সময়, যদি আজ কারও মনে পড়ে তাহলে কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। মাশরাফির ক্যারিয়ারের হিরণ্ময় সেই দিনটার এক যুগ পূর্তি যে গতকাল হয়ে গেল!

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা বোলিং-পরিসংখ্যানের তালিকা ঘাঁটতে গেলে একটি আপ্তবাক্য মিথ্যা বলে মনে হবে। সেটি বাংলাদেশ স্পিননির্ভর দল। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে শুনুন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ বোলিংয়ের মধ্যে স্পিনার মাত্র একজন! আর শীর্ষ চারটি বোলিংই পেসারদের। মাশরাফির পর রুবেল হোসেন। ২০১৩ সালে ঢাকায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনিও ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। শুধু ইকোনমি রেটে মাশরাফির চেয়ে পিছিয়ে। এরপরই মোস্তাফিজ (৬/৩৪, প্রতিপক্ষ ভারত, ২০১৫) ও তাসকিন (৫/২৮, প্রতিপক্ষ ভারত, ২০১৪)।

শীর্ষ দশ বোলিংয়ে যে একমাত্র স্পিনার আছেন তিনি জায়গা পেয়েছেন তিনবার। আবদুর রাজ্জাক। মোস্তাফিজ জায়গা করে নিতে পেরেছেন দুবার। একবার করে জিয়াউর রহমান ও আফতাব আহমেদ। এ দুজন ঠিক ‘এক্সপ্রেস পেসার’ না হলেও মিডিয়াম পেসার। আর তাই পরিসংখ্যান কিন্তু সেই বহুচর্চিত ‘মিথ’কে ঠেলে দিয়েছে প্রশ্নের মুখে—বাংলাদেশের বোলিং কী সত্যিই স্পিননির্ভর দল?
হ্যাঁ, এটা প্রমাণিত যে বেশির ভাগ ম্যাচে স্পিনারদের কেন্দ্র করেই বোলিংয়ের ‘গেম প্ল্যান’ সাজাতে হচ্ছে। পেস বোলিংয়ে মাশরাফির যোগ্য সঙ্গী না থাকলে যা হয় আরকি। অন্য প্রান্তে কত সম্ভাবনা আসছে-যাচ্ছে, অপমৃত্যু ঘটছে! মোস্তাফিজে ধারাটা থামার স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। কিন্তু বাস্তবে তা অনূদিত হতে এখনো অনেক পথ বাকি।

তারপরও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পেসারদের অবদান মোটেও খাটো করে দেখার উপায় নেই। বরং বলা ভালো, স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের অবদান বেশি! পরিসংখ্যান বলছে, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পেসারদের মোট উইকেটসংখ্যা ১০২০ আর স্পিনারদের ৯৭৭। স্পিনারদের যেখানে ৩১৮টি মেডেন, পেসারদের সেখানে ৪২৮টি।

সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্পিনারদের তুলনায় বেশি ধারাবাহিক ছিলেন পেসাররা। ওয়ানডে সিরিজে তো শীর্ষ তিন উইকেটশিকারি ছিলেন মাশরাফি, মোস্তাফিজুর ও রুবেল। এ তিনজনের সম্মিলিত শিকার ১৭ উইকেট। আর স্পিনারেরা মিলে নিয়েছেন ৫ উইকেট! বোঝাই যাচ্ছে, ইংলিশ কন্ডিশনের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কারা বেশি প্রাধান্য পাবে। পেসাররা কিন্তু সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।