Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪.শনিবার ,০১সেপ্টেম্বর ২০১৮ :  ‘পুতুল’ ডাক নাম। পুরো নাম খালেদা খানম পুতুল। দুধে-আলতা ফর্সা গায়ের রং নিয়ে ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জলপাইগুড়ির নয়াবস্তিতে বিখ্যাত টি ব্যাবসায়ী ‘মজুমদার’ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইস্কান্দার মজুমদার, মাতার নাম সৈয়দা তৈয়বা বেগম। তিনি যে সময় জন্মগ্রহণ করেন, সে সময় বিশ্ব ছিল চরম অশান্তির মধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। সেই ১৯৪৫ সালের ৬ ই আগস্ট ও ৯ ই আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে বিধ্বংসী, ভয়াবহ পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। যা ছিল ইতিহাসের এক কলংকময়, জঘন্যতম ঘটনা। মানুষের আত্মনাদের হা-হা কার আর বিশ্বজুড়ে চরম অশান্তি। এমনি সময় যেন শান্তির বার্তা নিয়ে ইস্কান্দার পরিবারে ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খালেদা খানম পুতুল। আর তার জন্মের পর পরই শেষ হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বজুড়ে মানুষ ধীরে ধীরে স্বস্তির পথে আসতে থাকে। খালেদা খানমও বড় হতে থাকে।
তার জন্মের ২ বছর পরেই ব্যবসায়িক কারণে তার বাবা সপরিবারে দিনাজপুরে চলে আসেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। যদিও ইস্কান্দার মজুমদারদের আদি নিবাস ফেনীতে। পাঁচ বছর বয়সেই খালেদা খানম এর শিক্ষা জীবন শুরু হয় দিনাজপুর মিশনারি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে। এরপর ভর্তি হন দিনাজপুর গার্লস স্কুলে এবং পরবর্তীতে এই স্কুল থেকেই এস এস সি পাশ করেন।
১৯৬০ সালে বিবাহ হয় সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত বগুড়ার ছেলে জিয়াউর রহমান এর সাথে। দু’টি ছেলে সন্তানের জননী তিনি। বড় ছেলে বর্তমান বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো (মৃত্যু ২৫ শে জানুয়ারী ২০১৫)।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে দেশ, জাতি ও দলের প্রয়োজনে বেগম খালেদা জিয়ার আগমন। আর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান এই সময়। তিনি যখন প্রথম দেশ, জাতি ও দলের প্রয়োজনে রাজনীতিতে আসেন তখনকার সে সময়ের চেয়েও বর্তমান সময় যেনো মনেহয় আরো বেশী সংকটপূর্ণ। বর্তমানে মানুষ তার ভোটাধিকার ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারে না। এর প্রমাণ ২০১৪ সালের ৫ ই জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচন ও তার পরে সিটি নির্বাচন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের দিকে দৃষ্টিপাত দিলেই বুঝা যায়। 
যাই হোক, বর্তমানে বাংলাদেশে বৈধ বা অবৈধ হউক প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্টতম গৃহ-পালিত, সাজানো বিরোধী দলীয় নেত্রীও একজন নারী। সংসদের বাইরে সারাবিশ্বের নেতৃবৃন্দের মতে, প্রকৃত বিরোধী দলীয় নেত্রীও একজন নারী। সংসদের স্পিকারও একজন নারী। এইসব নারীদের মধ্যে একজনই শুধু বারবার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন, বিভিন্নভাবে হামলার শিকার হয়েছেন এবং বর্তমানে সাজানো ভুয়া, মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশী রায়ে কারাবন্দী আছেন; যদিও জামিন যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তার জামিন বারবার অযাথাই বিলম্বিত করছেন-যার কথা বলা হচ্ছে-তিনি বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে তিনবারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার রাজনৈতিক দল “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি”। মহান স্বাধীনতার ঘোষক, রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ এর পট-পরিবর্তনে ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের সার্বিক টেকশই ভিত্তিমূল গঠনে-দেশকে সমৃদ্ধশালী, স্ব-নির্ভর, ও উন্নতির কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে ১৯ দফা কর্মসূচির কাজ শুরু করেন। দুর্ভিক্ষ-দারিদ্র্যপীড়িত এ দেশে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে “১৯ দফা” পেশ করেছিলেন-তা ছিল এদেশের ‘গণমানুষের মুক্তির সনদ’। পরবর্তীতে জাতির একটি নিজস্ব পরিচয়-“বাংলাদেশের বাঙালি-অবাঙালি, বেদে-সাঁওতাল, চাকমা, গাড়ো, খাসিয়া, মণিপুরি প্রভৃতি সকল জাতি-উপজাতির জনগোষ্ঠীকে ভাষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত এর সব কিছুর ঊর্র্ধ্বে সকল নাগরিকের প্রথম রাষ্ট্রীয় পরিচয় “বাংলাদেশি” পরিচয়কে তুলে ধরেন এবং দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও প্রত্যাশাকে সম্মান করে “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ” সংবিধানে প্রতিস্থাপন করেন-যেখানে আমাদের নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয় অক্ষুণœœ থাকে” এবং জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই ১৯৭৮ সালে ০১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান আর্দশ ও নীতি নিয়ে জাতি, দেশ ও দলকে স্বার্থকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের  সার্কিট হাউজে কতিপয় সেনা সদস্যদের দ্বারা নিহত হন। 
বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান দেশের জন্য শহীদ হওয়ার পর দলের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসার কোন ইচ্ছাই ছিল না। দলের কোন্দল মেটাতে ও দলীয় নেতা-কর্মীদের অনুরোধে এবং দেশ ও জাতির প্রয়োজনে তার স্বামীর রেখে যাওয়া উন্নয়ন ও অগ্রগতির বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশীদের নিজস্ব পরিচয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড়াবার (যা জিয়াউর রহমান শুরু করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন) পথে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বুক ভরা ব্যথা হৃদয়ে লুকে রেখে, চোখের পানি চোখে রেখে দেশ, জাতি ও দলের প্রয়োজনে রাজনীতিতে নাম লেখান। তিনি একেবারে গৃহ-বধূ থেকে ১৯৮২ সালের ৩ রা জানুয়ারী রাজনীতিতে আসেন। তবে ২১ বছর ধরে তিনি জিয়াউর রহমানকে স্বামী হিসেবে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, সেনাবাহিনীর একজন তেজস্বী সৈনিক (মেজর বা অন্য পদে কর্মরত) হিসেবে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে, একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেখেছেন।
এরপর ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারী সংবাদপত্রে এক বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে দেশবাসীকে তার রাজনীতিতে পর্দাপনের সিদ্ধান্তের কথা জানান এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি’র সদস্য পদ গ্রহণ করেন। অল্পদিনেই বেগম খালেদা জিয়ার দলের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ও নেতা-কর্মীদের সমর্থন আকাশচুম্বী হয়ে যায়। অতঃপর তিনি ১৯৮২ সালের মার্চে সিনিয়র ভাইস চেযারম্যান হন। ওদিকে দলের চেয়ারম্যান জনাব আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হওয়ার ধীরে ধীরে বেগম খালেদা জিয়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েই দলের প্রায় সব দেখভাল করতে লাগলেন। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার এর কাছ থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাতের আধারে বঙ্গভবনে ঢুকে বন্দুকের নলের মুখে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করে সামরিক আইন জারি করেন এবং নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বাতিল ও সংবিধান স্থগিত করেন এবং সেই সাথে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ফলে দেশের রাজনীতিতে এক অস্থিরতা দেখা দেয়। ওদিকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোট গঠিত হয় এবং বেগম খালেদা জিয়া ৭ দলীয় জোটের নেত্রী নির্বাচিত হন এবং আওয়ামীলীগও ১৫ দলীয় জোট গঠন করেন।
এমনি পরিবেশ পরিস্থিতিতে  ১৯৮২ সালের ১ লা এপ্রিল থেকে স্বৈরাশাসক জেনারেল এরশাদ ঘরোয়া রাজনীতি করার অনুমতি দেন এবং বেগম খালেদা জিয়া  ১৯৮২ সালের ১ লা এপ্রিল ভাষণ দেন। সে ভাষণে তিনি বলেন, “আমি এরশাদকে মানি না। তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে সামরিক শাসনের অবসান করতে হবে”। তার এ আপোসহীন, দৃঢ় মনোভাব বক্তব্য প্রকাশের পর এরশাদ বিরোধী আন্দোলন যেন তুঙ্গে উঠল এবং আশার আলো দেখা দিয়েছিল। সারা দেশে এরশাদ বিরোধী ক্ষোভ চলতে থাকল। ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারীতে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৮৩ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী বিক্ষোভ চলাকালে জয়নাল, জাফর ও দিপালীকে গুলি করে নিহত করা হয়। এতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন জোড়ালো হতে থাকে। বেগম খালেদা জিয়াও দৃঢ়প্রত্যয়ী, আপোসহীন মনোভাব নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে দল ও জোটকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ১লা এপ্রিল ১৯৮৩ সালে জেনারেল এরশাদ ঘরোয়া রাজনীতি করার অনুমতি দিলেন। বেগম খালেদা জিয়া অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ায় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর তাকে গৃহবন্দি করে রাখে এবং ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ প্রেসিডেন্ট হন। এরই মধ্যে ১৯৮৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। চেয়ারপার্সন পদের জন্য বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন পত্র তুলেন নি। ফলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৯৮৪ সালের ১০ মে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। এতেই দলে তার বিপুল জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার পরিচয় পাওয়া যায়। দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এরশাদের পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে আন্দোলন বা সংগ্রাম চালিয়ে যেতেই থাকেন। এরশাদ এর মধ্যে গণভোট ও উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। বেগম জিয়া এ নির্বাচনও বর্জন করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। ফলে ১লা মার্চ ১৯৮৫ তে বেগম খালেদা জিয়াকে জেনারেল এরশাদ আবার গৃহবন্দি করে রাখেন এবং ২২ ও ২৩ এপ্রিল ১৯৮৫, উপজেলা নির্বাচন করেন। 
এছাড়াও জেনারেল এরশাদ বসে নেই। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সারাদেশে সামরিক আইন জারি করেন-ই এবং ‘জাতীয় পার্টি’ নামক রাজনৈতিক দল গঠন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকেন এবং ১৯৮৬ তে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে প্রকাশ্যে রাজনীতি চালু হওয়ায় আন্দোলন আরো জোরদার হতে থাকে।
অপরদিকে স্বৈরাচার এরশাদকে ক্ষমতা থেকে তাড়ানোর জন্য তখন শেখ হাসিনা অধীন আওয়ামী লীগ জোট ও বেগম খালেদা জিয়া অধীন জোট একজোট হয়ে আন্দোলন চালাতে থাকেন।। এক পর্যায়ে ১৭ মার্চ ১৯৮৬ সালে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে চট্টগ্রামের লাল দীঘি ময়দানে জোটের পক্ষে শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন- “এরশাদের পাতানো নির্বাচনে জোটের নীতি ভঙ্গ করে যে অংশগ্রহণ করবে-সে ‘জাতীয় বেঈমান’।”  অত:পর ঢাকায় এসে তিনি (শেখ হাসিনা) ২০ মার্চ ১৯৮৬ সাল, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বায়তুল মোকাররমে মিছিলের জন্য হাজার হাজার নেতা-কর্মী আসলে শেখ হাসিনা আর আসেন না; শেষে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই সেদিন মিছিল বের হয়। আর শেখ হাসিনা পরে এরশাদের সেই পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং সেই সাথে নিজের জবানে নিজেই ‘জাতীয় বেঈমান’ হয়ে যান। অপর দিকে স্বৈরাচারের সাথে কোন আপোস না করে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে নির্বাচন বর্জন করেন বেগম খালেদা জিয়া অধীন জোট। বিনিময়ে তিনি ( বেগম খালেদা জিয়া) ৫ মে ১৯৮৬ আবার গৃহবন্দি হন।  
স্বৈারাশাসক এরশাদ বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করে গৃহবন্দী করে ৭ মে নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর শেখ হাসিনা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে ধীরে ধীরে সরে আসেন। অন্যদিকে ১৯৮৭ সালের প্রথমে বেগম খালেদা জিয়া একাই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে এ আন্দোলনে শেখ হাসিনার জোট এসেও শামিল হয়।  প্রথমে শেখ হাসিনার আওয়ামী জোট স্বৈরচার এরশাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সহযোগিতা করলেও শুরু থেকেই বেগম খালেদা জিয়া সমস্ত নির্যাতন তথা গৃহবন্দী সহ্য করে বিএনপি জোটকে যুগৎপৎ আন্দোলনে চালিয়ে নিয়ে যান। ১৯৮৭ সালে দুই জোটের এরশাদ বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বেগম খালেদা জিয়া জনতার সঙ্গে রাজপথের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য ১১ নভেম্বর ১৯৮৭ রাতে হোটেল পূর্বাণীতে রাত কাটানোর জন্য অবস্থান করলেন। আর তখন জেনারেল এরশাদ রাত সাড়ে দশটায় শত শত পুলিশ হোটেল পূর্বাণীতে পাঠালেন। পুলিশ হোটেলের কক্ষের দরজা ভেঙ্গে রাত ১১ টা ৫৩ মিনিটে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করলেন কিন্তু এতে আন্দোলন থামল না। জেনারেল এরশাদ দেশব্যাপি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করলেন। এতেও আন্দোলন চলতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন স্বৈরাচার এরশাদ।  বেগম খালেদা জিয়া ইস্পাত লৌহ সিদ্ধান্তে কোন প্রকারের আপোস ছাড়াই স্বৈারাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। এভাবে আসে ১৯৯০ সাল। ১৯৯০ সালের ৪ জানুয়ারী সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও ২৪ জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করা হয়।  ১৯৯০ তে এসে বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন আন্দোলনে একরকম সবাই এসে যোগ দেয়। শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচার এরশাদ আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে হার মেনে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। তারিখটি ছিল ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। তখন শর্তে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি সাহাব উদ্দিন আহমেদ। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা ছাড়ার পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় এবং সে নির্বাচনী প্রচারণায় বেগম খালেদা জিয়া দেশ ও জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে গঠনমূলক ভাষণ দেন এবং বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৪ টি আসন পায়, আওয়ামীলীগ ৮৪ টি আসন পায়। বিএনপি ক্ষমতা লাভ করে। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, ‘খালেদা জিয়ার সরকারকে এক মহুর্তের জন্যেও শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না।’ শেখ হাসিনা তথা আওয়ামীলীগের বিরোধীতা সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়া উন্নয়ন ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। নেহাতে বিরোধীতা করার জন্য অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বিরোধী দল আওয়ামীলীগ ১৯৯৪ সালের ২৮ শে ডিসেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করে আন্দোলন করেন। অতঃপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ও জামায়াতের আন্দোলনের মধ্যেই সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন বেগম খালেদা জিয়া সরকার এবং সে নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু আওয়ামীলীগ ও জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ধ্বংসাত্মক রাজনীতি চালিয়ে যেতেই থাকে।  আওয়ামীলীগের (পরে জামায়াতও যোগ দেয়) ১৭৩ দিনের হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলন, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ফলে দেশ প্রায় ধ্বংসের দাড়প্রান্তে যায়। অতঃপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং ১২ জুন ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের আসনে বসেন এবং আসন সংখ্যা ১১৬ টি। শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে ধরাকে সরাজ্ঞান করতে লাগল। দেশ ও জনগণের তেমন উন্নয়ন না করে অত্যাচারের স্ট্রীম রোলার বিএনপি’র উপর চালাতে থাকল। জনগণ আওয়ামী শাসন প্রত্যক্ষ করতে লাগল আর সময়ের অপেক্ষায় থাকল। ১লা অক্টোবর ২০০১ জনগণ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেল তখন তারা উৎসব ও আমেজের সহিত সারা দেশব্যাপি ভোট দিল। সে নির্বাচনে বিএনপি জোট দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী আসনে বিজয়ী হল। যেন ভূমিধ্বস এক বিজয়। ১লা অক্টোবর ২০০১ এর ২৯৮ টি আসনের মধ্যে বিএনপি জোট পায় ২১৩ টি আসন, আওয়ামীলীগ পায় ৬২ টি আসন, বাকি আসন অন্যান্যরা পায়। বিএনপি জোটের সেই শাসনের সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে বেশ এগিয়ে গিয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া সরকারের সময় রাজনীতিতে এত কাদা ছোড়াছুড়ি ছিল না। দেশের জনগণও অনিরাপদ ছিল না। দেশে বিরাজমান ছিল ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ। দেশে ছিল সুখী-সমৃদ্ধশালী সহবস্থান সমাজ। আজ তা কোথায় ? ভাবতে অবাক লাগে। 

অতঃপর বেগম খালেদা জিয়া সরকার দেশের সংবিধানের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছাড়েন। কিন্তু আওয়ামীলীগ সেই ২৮ অক্টোবরেই ক্ষমতা ছাড়ার দিনে বায়তুল মোকাররমে হত্যাযজ্ঞ চালায়।  সংবিধান অনুযায়ী সেই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২২ শে জানুয়ারী ২০০৭ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। আওয়ামীলীগ অযাথাই তাল-বাহানা করতে থাকে এবং নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়; সেই সাথে যেহেতু ভোটের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনে  ভিতরে ভিতরে ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং দেশে ১/১১ নিয়ে আসে। দেশে ১/১১ আসলে আওয়ামীলীগ ঘোষণা দেয় ১/১১ তাদের আন্দোলনের ফসল। আওয়ামীলীগ ১/১১ আসার পর তাদের ষড়যন্ত্র চালাতেই থাকে। ভিতরে ভিতরে ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের সাথে আঁতাত করে বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করে। এই ষড়যন্ত্রের ফাঁকে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনদের ভিতরে ক্ষমতার লোভ জাগে। ফলে তারা মাইনাস ওয়ান থেকে টু ফর্মূলায় যায়। অর্থাৎ শেখ হাসিনার নামেও মামলা দেয় এবং কোনঠাসা করে রাখে। এক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাদাবাজি, হত্যামামলাসহ  মোট ১৫ টি মামলা হয় এবং বহাল থাকে। কথিত আছে সে সময় গুরুতর তেমন কোন অভিযোগ না পেয়েও শুধুমাত্র সমতা আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোন দোষ বা ত্রুটি বা অযুহাত না পেয়ে বেগম জিয়ার নামে মাত্র ৫ টি মামলা করেন। শেখ হাসিনার মামলাসমূহ হলো–বেপজায় পরামর্শক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা, ফ্রিগেট ক্রয় দুর্নীতি মামলা, মেঘনা ঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্নীতি মামলা, খুলনায় ভাসমান বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা, ৮ টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় দুর্নীতি মামলা, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণ দুর্নীতি মামলা, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ মামলা, আজম জে চৌধুরীর দায়েরকৃত চাঁদাবাজি মামলা, আওয়ামীলীগ নেতা নূর আলীর দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলা, কাজী তাজুল ইসলাম ফারুক এর দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলা ও একটি হত্যা মামলা। 
আর বেগম খালেদা জিয়ার নামে দায়ের করা ৫ টি মামলা হলো-জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা। 
শুধু মামলায় নয়, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কারণে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন ও শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রের শিকার হয় সে সময় জিয়া পরিবার। সে সময় জিয়া পরিবারের উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় অত্যাচার।  ২০০৭ সালের ৭ মার্চ অনাকাঙ্খিতভাবে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন-শেখ হাসিনার ত্রয়ী ষড়যন্ত্রের শিকার হন জনাব তারেক রহমান। তাকে সে দিন গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীতে তার নামে মিথ্যা অযুহাতে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়। এরপর আগেই বলা হয়েছে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন এর ভিতর ক্ষমতার উচ্চভিলাষ পেয়ে বসে। ফলে তারা শেখ হাসিনার নামেও মামলা দেন এবং তাকে গ্রেফতার করেন। তখন শেখ হাসিনা বা আওয়ামীলীগ থেকে ধোঁয়া তোলা হয় শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করছে তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করতে হবে। একদিকে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনদের ক্ষমতার লোভ অন্যদিকে আওয়ামীলীগের অযাথাই মিথ্যা ধোঁয়ায় উনারা (মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন) সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে তারাও বেগম জিয়াকে তার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোসহ ২০০৭ সালের ৩ রা সেপ্টেম্বর  ভোর আনুমানিক ৫ টা ৪০ মিনিটে ক্যন্টনমেন্টের মঈনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেফতার করেন। এবং বেগম খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যা অযুহাতে মামলা দেন।  গ্রেফতারের পর ছেলেসহ বেগম জিয়াকে সকাল ৮ টায় কোর্টে নেওয়া হয়। বেগম খালেদা জিয়া কোর্টে বলেন, “তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে। এই মামলা ষড়যন্ত্রের মামলা।” অভিযোগ সর্ম্পকে বলতে গিয়ে বলেন, “বিএনপি পাঁচবার এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশের উন্নয়ন আর কল্যাণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আমার ও বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এ দেশের জন্য আমরা নিবেদিতভাবে কাজ করেছি।” এ প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমার, আমার পরিবারের বা ছেলেদের অর্থের কোন লোভ নেই, অর্থের কোন প্রয়োজন নেই। এ দেশের জনগণের ভালবাসা এবং সমর্থন আমরা সবসময় পেয়েছি এবং পেয়ে যাচ্ছি।” তিনি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে বলেন, “আমার প্রিয় দেশবাসিকে বিনীতভাবে জানাতে চাই, আমি ও আমার পরিবার সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। মহামান্য আদালতকে সবিনয়ে জানাতে চাই, আমরা সর্ম্পূণ নির্দোষ। তাই মিথ্যা মামলা থেকে সুবিচার চাই। শুধু আমি নই, যে কোন নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।”  তিনি আরোও বলেন, “আমি আজ একটি কথা বলতে চাই, এ দেশের কাজ করতে গিয়ে আমার দু’টি পা পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে গেছে। এ দেশে বন্যা, টর্নেডো ও ঘূর্ণিঝড় হলে আমি ছুটে গেছি দুর্গত এলাকায়। মানুষের সহযোগিতায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি।” তিনি আরো বলে, “আমি কাউকে প্রভাবিত করিনি, আমাকেও কেউ প্রভাবিত করেনি। আমি ও আমার পরিবার সব সময় দেমপ্রেমের পরিচয় দিয়ে এসেছি এবং যতদিন বেঁচে থাকব এ দেশের কল্যাণেই নিজেকে নিয়োজিত রাখব।” তিনি সে দিন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বিএনপি-কে ভাঙ্গার বিরুদ্ধেও দেশবাসীকে সোচ্চার থাকার অহবান জানান এবং দেশবাসীর কাছে তার ও তার পরিবারের জন্য দোয়া চান।  
এরপর বেগম খালেদা জিয়াকে সাব-জেলে বন্দি রাখা হয়। বন্দি থাকা অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে দেশের সাতশত সাংবাদিকের যুক্ত বিবৃতি ছিল একটি সাহসী পদক্ষেপ।

……..এর পরেও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন প্রকারান্তে শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ছিল ইস্পাত দৃঢ় কঠিন দেশপ্রেম। যে দেশপ্রেম এতটাই দৃঢ় ছিল যে, মানসিকভাবে তাকে কষ্ট দেওয়া তথা কোন কিছুই তাকে টলাতে পারেন নি।  সে সময় ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন শাসক বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিক নির্যাতন স্বরূপ তার দুই ছেলের উপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। তারপরও তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের সাথে আপোস না করলে নির্যাতনের এক পর্যায়ে তার বড় ছেলে জনাব তারেক রহমানের মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি দেশ চান না সন্তান চান। তখন স্নেহময়ী-মমতাময়ী এক মা-বেগম খালেদা জিয়া কোন আপোস না করে দৃঢ় মনোভাব নিয়ে খাঁটি দেশ প্রেমিকের মতো বলেন “আমি দেশ চাই। এ দেশ আমার মা। এ দেশে আমার স্বামীর ঘর। আমার মা আর এ ঘর ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। এ দেশের জনগণের মাঝে থেকে সুযোগ পেলে তাদের সেবা করে যেতে চাই। দেশের বাহিরে আমার কোন ঠিকানা নাই”। নিজের পেটের সন্তানদের উপর অমানবিক, জীবন হরণকারী নির্যাতন সত্বেও দেশ ও দেশের জনগণের প্রতি কতো দেশপ্রেম ও মাতৃকল্যাণকামী হলে এমন কথা বলতে পারেন। এমন নিষ্ঠুর নির্যাতন সত্ত্বেও সে সময় তিনি একটা অগণতান্ত্রিক সরকারের চেয়ে নিম্নমানের হলেও একটি গণতান্ত্রিক সরকার চেয়েছিলেন।
তার সন্তানদের উপর অমানবিক, নিষ্ঠুর, বর্বরতম, জীবনহরণকারী অত্যাচার চালালে তিনি দেমপ্রেমে অটল থেকেছিলেন। কথিত আছে সে সময় না-কি বেগম জিয়াকে সৌদি আরব সপরিবারে পাঠানোর অভিলাষ ছিল মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার দেশপ্রেমের কাছে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনদের এই অভিলাষ বা ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়ে যায়।  তিনি এ দেশ ও এ দেশের মানুষ ছেড়ে কোথাও যেতে চান নি। এ সিদ্ধান্তে তিনি ছিলেন অটল। এ প্রসঙ্গে  তিনি বলেছিলেন, “মা, জননী, জন্মভূমি আমার বাংলাদেশ। এ দেশই আমার ঠিকানা। এর বাইরে আমার কোন ঠিকানা নেই। এ দেশেই জন্মেছি আমি। এই দেশেই মরতে চাই।” 
তিনি আরো বলেন, “এই দেশের মাটি ছাড়া আমি এবং আমার পরিবারের কোন ঠিকানা নেই। এই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না, কোথাও না।” তার এসব সরল, খাঁটি দেশেপ্রেমের উদ্বৃতিতেই বুঝা যায় এই দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার দরদ কতো গভীরে প্রোথিত।
আর এর বিপরীতে আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা চিকিৎসার অযুহাতে প্যারোলে লন্ডনে গিয়েছিলেন ( কথিত আছে তখন না-কি তিনি শর্ত দিয়েছিলেন বেগম জিয়াকেও দেশের বাইরে পাঠাতে হবে।) যখন দেখলেন দৃঢ় মনোভাবসর্ম্পণ বেগম জিয়াকে তারা (মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার) দেশের বাইরে পাঠতে পারলেন না তখন শেখ হাসিনা দেশে আসার জন্য একেবারে উদগ্রীব হয়ে গেলেন। এবং শেষ পর্যন্ত বেগম জিয়া এই দেশ ও দেশের মানুষ ছেড়ে বিদেশে না যাওয়ায় শেখ হাসিনা লন্ডনে গিয়েও আবার ফিরে আসলেন। এতে কার দেশপ্রেম কতোটুকু অনুমান করা যায় না কি ?
অতঃপর গ্রেফতারের প্রায় নয় মাস পর শেরে বাংলা নগরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজির করা হলে খালেদা জিয়া জরুরি অবস্থার অবসান চান এবং অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেন। তিনি তখন আরো বলেন, “পরগাছা দালাল দিয়ে দেশ চলে না। চাইলেই যে কাউকে মাইনাস করা যায় না।” সেই সাথে জরুরি অবস্থানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে গিয়ে তিনি বলেন, “জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচন হয় না।”  
বেগম জিয়ার এমন দৃঢ় মনোভাবের কাছে নতি স্বীকার করেই শেষ পর্যন্ত মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু সে নির্বাচন ঘোষণার আগেই ভিতরে ভিতরে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন শেখ হাসিনার সাথে অনেকাটই আপোস করে ফেলে যে, ক্ষমতায় আসলে যেন তাদের (মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন) কোন বিচার বা ক্ষতি না করে। অতঃপর নির্বাচনের দিন দেখা গেল সন্ধ্যার মধ্যেই প্রকাশ পায় সব ফলাফল-বিশেষ করে একটি চ্যানেল তো মনেহয় উৎসাহী বেশী ছিল। আর সে নির্বাচনের ফলাফল সবারই জানা।
সেই ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে সেই কঠিন সময়ের কথা নিজেই বলেছিলেন এভাবে, “মানুষ হিসেবে আমি ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে ছিলাম না। ব্যর্থতার গ্লানিও অনেক সময় আমাকে র্স্পশ করেছে; কিন্তু যে সীমাহীন কুৎসা ও অপপ্রচারের শিকার আমাকে হতে হয়েছে, সেটা কি আমার প্রাপ্য ? আপনারা দেখেছেন, অপপ্রচারের পথ ধরেই আমাকে আপনাদের কাছ থেকে মাইনাস করার, বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা হয়েছে। এ অপচেষ্টা ব্যর্থ হলে আমাকে বিনা অপরাধে ছয়মাস গৃহবন্দি ও এক বছর নির্জন কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমি আমার মায়ের মৃত্যুর সময়ও তার পাশে থাকতে পারি নি। গুরুতর অসুস্থ সন্তানদেরও দেখতে দেওয়া হয় নি। তারপরও যতদিন বাঁচি আপনাদের মাঝেই থাকব। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশই আমার একমাত্র ও শেষ ঠিকানা।”
সত্যি সত্যিই তো ১/১১ এর সময় বেগম খালেদা জিয়া হিমালয়সম কঠিন দৃঢ়তায় নিজেকে দাড় করে রেখেছিলেন। সন্তানদের উপর জীবন হরণকারী অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করা, অল্প বয়সে স্বামী মারা যাওয়ার পর যে গর্ভধারিনী মা এতটা বছর ছায়ার মতো পাশে ছিলেন সেই মায়ের মৃত্যুর সময়ও তাকে পাশে থাকতে দেওয়া হয় নি। মৃত্যুর পর দেখতে দেওয়া হলেও সন্তানদের দেখতে দেওয়া হয় নি। অথার্ৎ তারেক রহমান, আরাফাত রহমান (মরহুম), বেগম খালেদা জিয়াকে আলাদা আলাদাভাবে আলাদা সময়ে এনে দেখানো হয়েছে। কতোটা জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করেও তিনি এই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য দেশপ্রেমে অটল ছিলেন। কোন কিছুতেই তার দেশপ্রেমে ষড়যন্ত্রকারীরা ফাটল ধরাতে পারেন নি। তার অঢ়েল দেশপ্রেমের কারণেই সে সময় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। কেননা, যদি সেদিন বেগম খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যেতেন তাহলে কি শেখ হাসিনা আর চিকিৎসার অযুহাতে লন্ডনে যাওয়ার পর দেশে ফিরে আসতে পারতেন। আসতে চাইলেও মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে দিতেন না। ফলে তারাই (মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন) ক্ষমতায় জেকে বসতেন। কাজেই বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের উপর জীবনহরণকারী শত অত্যাচারের পরও এ দেশে তিনি সে সময় কোন আপোস না করে গণতন্ত্রটাকে (বেগম খালেদা জিয়া) বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এবং এখনও গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আপোসহীন লড়াই করে যাচ্ছেন।
২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে সেনা বিদ্রোহে বেশ সংখ্যাক (৫৭ জন) দেশপ্রেমিক সেনা নিহত হয়, শেয়ার বাজারের টাকা লুটপাট হয়, হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক কেলেংকারীতে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ দ্বারা সাধারণ খেটে খাওয়া যুবক বিশ্বজিতের হত্যা, নারায়নগঞ্জে ৭ খুন প্রভৃতি আরো অনেক ঘটনা ঘটে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর যেন এক ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্য আরেক ঘটনা সামনে আসে। এভাবে দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে মাত্র তিন মাস সময়ের মধ্যেই শেখ হাসিনার ১৫ টি মামলা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তুলে নেন। আর মামলা তুলে নিতে যে দু’টি বেঞ্চ গঠিত হয় তা হলো- একটি বেঞ্চের বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিক, অপর বেঞ্চের বিচারপতি ছিলেন এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি বোরহান উদ্দিন। এই দুই বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি ছিলেন যথাক্রমে বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদা ও এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এলে মেয়াদের শেষ সময়ে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদা ও বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরি মানিক-কে আতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর পর রাষ্ট্রপতি তাদের স্থায়ী নিয়োগ দিতে পারেন বা নাও দিতে পারেন। পরবর্তীতে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে তারা স্থায়ী নিয়োগ পান না। তারপর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে ঔ দুই বিচারপতির ভাগ্য যেন খুলে যায়। আদালতের একটি রায়ের দোহাই দিয়ে তারা ২০০৯ সালের ২২ মার্চ হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে পুনঃরায় স্থায়ী নিয়োগ পান। যার কারণে শেখ হাসিনার কাছে এই বিচারপতিদ্বয়ের কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না। ফলে তারা অতি অল্প সময়ের ব্যবধানেই শেখ হাসিনার ১৫ টি মামলা তুলে নেন। বিচারপতি দু’জনার পরিচয় হলো-
বিচারপতি শামসুল হুদার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এই শামসুল হুদা প্রায় ১৯ বছর গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একবার তিনি উপজেলা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০১৫ সালে ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে নিজেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের পরিচয় দেন এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের ব্যানারে তিনি একাধিক সভা-সমাবেশও করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিকও এবং তার বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে।
এই দুই বিচারপতিই অল্প সময়েই ২০১০ সালের ০৩ রা মার্চ থেকে ৩০ মে এর মধ্যে মাত্র তিন মাসেই রাজনৈতিক বিবেচনায় শেখ হাসিনার নয়টি মামলা তুলে নেন এবং বাঁকি ছয়টি মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক আখ্যা দিয়ে তুলে নেন। এমনকি একটি হত্যা মামলাও ছিল এর মধ্যে। শুধু শেখ হাসিনাই নয় আওয়ামীলীগের সব নেতাকর্মীদের মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় তুলে নেওয়া হয়। আর অপর দিকে বেগম খালেদা জিয়ার (গুরুতর কোন অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও) নামে ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের সময়ে হওয়া মাত্র ৫ টি মামলা তুলে নেওয়া তো দুরের কথা বরং বিভিন্ন মিথ্যা, ভিত্তিহীন অযুহাতে আওয়ামী জোট সরকার আরো মামলা দেন এবং প্রতি সপ্তাহেই বকশিবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা দেওয়ার তারিখ দেন। আর বিএনপি’র অন্যান্য নেতাদের মামলা তুলে নেওয়া তো দুরের কথা বরং সারা বাংলাদেশে ২০ হাজারেরও বেশী মামলায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীদের নাম আছে। (সুত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৯ জানুয়ারী ২০১৭) । সারা দেশেই অজ্ঞাত নামে অনেক মামলা আছে।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে বিএনপি ও জিয়া পরিবার ও বেগম খালেদা জিয়ার উপর একের পর এক মামলা-হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করছেন।

………বেগম জিয়াকে মানসিক কষ্টে রাখতে দুই ছেলেকে দেশের বাইরে রেখেই মামলার সাজা দিয়েছেন আওয়ামী সরকার-যাতে তারা (বেগম জিয়ার দুই সন্তান) দেশে আসতে না পারে। এমনকি জনাব তারেক রহমানকে একটি মামলা থেকে নি¤œ আদালত বেখুসুর খালস ঘোষণা করলে আওয়ামীলীগ সেটা আপিল করে আবার সাজা দেয়-এতে প্রতিহিংসার চরিত্র সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ পায়। জিয়া পরিবার বা বেগম জিয়ার প্রতি শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসা এখানেই থেমে থাকে নি-২০১০ সালের ১৩ই নভেম্বর শেখ হাসিনা সরকার তার প্রশাসনের লোক দিয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অবৈধ ঘোষণায় এক কাপড়ে জোড় করে উচ্ছেদের  মাধ্যমে বেগম জিয়াকে সেনাবাহিনীর বাড়ী থেকে বের করে দেয়। এ বাড়ী ছিল বেগম জিয়ার চল্লিশ বছরের সংসার জীবনের স্মৃতি-বিজরিত বাড়ী। এটা কোন ধরনের নিম্ন-মনের নির্যাতন ভাবা যায় ?  অথচ এ বাড়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারই তাদের নামে বরাদ্দ দিয়েছেল। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণেই স্মৃতি বিজরিত এ বাড়ী থেকে আদালতের সাজানো রায়ে বের করে দেওয়া হয়। 

এরপরও বেগম জিয়া অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নি। বিএনপিকে ঠিকই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তখন শুরু হয় আওয়ামী সরকারের নতুন কৌশল। তারা বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে গুম, অপহরণ, গুলি করে পঙ্গু করতে শুরু করে। সেই যে ২০১০ সালে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াছ আলী ও তার আগে বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম থেকে শুরু হয়েছে যার শেষ এখনও হয় নাই, চলছেই…..। কথা বললেই মামলা-হামলা, জেল-জুলুম, রিমান্ড-গ্রেফতার ইত্যাদি। 
এত কিছুর পরও বেগম জিয়া থেমে নেই-লড়াই করেই যাচ্ছেন। আর আওয়ামীলীগ তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য ২০১১ সালে ৩০ জুন সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেন। যদিও রায়ে ছিল পরপর দুইবার তত্ত্বধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে। সরকার সেদিকে না হেটে ক্ষমতার জোরে প্রশাসনিক সহায়তার কঠিন-রীতিবিরুদ্ধ পথে হাটেন।
ওদিকে বেগম জিয়াও অবাধ, স্বচ্ছ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বধায়ক সরকার তথা সহায়ক সরকারের জন্য সারা দেশে রোডমার্চ করেন। এতে ব্যাপক সাফল্য পান। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তাদের সংশোধনী করা সংবিধানের দোহাই দিয়ে এগুতে থাকে। আসে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচন কালীন সময়। 
অথর্ব, মেরুদ-হীন, লাজ-লজ্জাবিহীন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ তো বহু দুরের কথা আওয়ামী লীগদের পক্ষপাতে কাজ করে যায়। জনগণের ভোটের অধিকার ও সঠিক রায়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে বিএনপি তথা বেগম জিয়া অবিচল থাকেন। আর আওয়ামী লীগ তথা শেথ হাসিনা নিজেকে অর্থাৎ শেখ হাসিনা-কে প্রধান মন্ত্রী রেখেই নির্বাচনে যাওয়ার একতরফা পথে এগুতে থাকেন-এ কাজে অন্ধের মতো সমর্থন দেন আওয়ামী লীগকে ভারত (তখন কংগ্রেস ক্ষমতায়)। এমনি পরিস্থিতিতে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের ঘোষণা দেন। বেগম জিয়া জনগণের ভোটের অধিকারে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনা বলেন এটা সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সবার মতামতের ভিত্তিতেই সব দলের অংশগ্রহণে আবার একটি নির্বাচন করা হবে। অর্থাৎ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কেউ ছাড় দিলেন না। ও দিকে শেষ পর্যন্ত এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলে প্রশাসনের সহায়তায় কয়েকদিন গুম হয়ে থাকেন এবং পরে প্রকাশ পায় তিনি অসুস্থ, তার চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কতো বড় নির্লজ, বে-হায়াপনা কথা। আবার এরশাদ তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করতে চাইলে নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার না করে বহাল রাখেন। ওদিকে এরশাদও গুম বা অন্তরীণ হয়ে থাকেন। নির্বাচন কমিশন শুধু এ কাজই নয়। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের তারিখ পার হয়ে গেলেও আজ্ঞাবাহী ক্রীতদাসের ন্যায় আওয়ামী জোটকে অর্ধেকেরও বেশী আসন ১৫৪ টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেন-যা শুধু বাংলাদেশে নয় পুরো বিশ্বে এক নজিরবিহীন, অবিশ্বাস্য ঘটনা। মানুষ কতোটা বে-শরম হয়ে থাকলে এমন কাজ করে নেয় বা করে। 

কিন্তু বেগম জিয়া জনগণের ভোটের অধিকারের লড়াইয়ে “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ অব্যাহত রাখেন। ইতিমধ্যে অথর্ব, লজ্জাহীন, মেরুদ-হীন, আজ্ঞাবহ ক্রীতদাস নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসে। বেগম জিয়া একতরফা এ নির্বাচন বাতিলের আহবান জানান । সরকার ভীত হয়ে বেগম জিয়ার গুলশানের কার্যালয় পুলিশ দিয়ে ঘেড়াও করে রাখে। আদেশ জারি করে কেউ জটলা হয়ে ঘোরাফেরা করতে পারবে না ও মোটর সাইকেলে একজনের বেশী উঠা যাবে না। শুরু হয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে ৫% ভোট পরে। সারা দেশে ব্যালট পেপার ছিনতাই, আওয়ামী ক্যাডার ও তাদের নিযন্ত্রিত পোলিং কর্মকর্তাদের দ্বারা জোর করে ছিল মেরে নেওয়া, এক ব্যক্তি কর্তৃক একাধিক ভোট নেওয়া ইত্যাদি অনিয়ম। কেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য, অনেক কেন্দ্র আছে যেখানে কুকুর ঘুমিয়ে ছিল। ৫৯ টি কেন্দ্রে কোন ভোটই পরে নি। প্রায় ১১১ টি কেন্দ্র বিক্ষুব্ধ জনগণ পুড়িয়ে ফেলে। এই নির্বাচনে সহিংসতায় প্রায় ১২৩ জন মারা যায়। নির্বাচনের দিনই মারা যায় ১৯ জন।
এই নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, অনেক মন্ত্রী-এমপি-রা তাদের নিজেদের ভোট পর্যন্ত দেন নি। সারদেশ ঢাকা থেকে অবরুদ্ধ করে রেখে দেশবাসীদের জিম্মি করে একরকম এ নির্বাচন হয়। যে নির্বাচনে আগেই অর্ধেকের বেশী আসনে আওয়ামীলীগ জোট বিজয়ী হয়ে থাকে-যে নির্বাচনে ছিল না কোন বিদেশী র্পবেক্ষণকারী সংস্থা বা পর্যবেক্ষক-একমাত্র ভারত ছাড়া। এমন কি দেশী নাম-করা কোন সংস্থাও ছিল না। তবুও দু-একটা সংস্থা থাকলেও দুপুরের আগেই অনিয়মের কথা বলছেন। 
এমনি একটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকে যায় আওয়ামীলীগ আর ভিতরে ভিতরে সহায়তা করে যায় পাশ্ববর্তী একটি প্রতিবেশী দেশ। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। অল্প সময়ের মধ্যেই সবার মতামত নিয়ে সুবিধাজনক পদ্ধতিতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা হবে। এক বছর চলতে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা অন্যান্য আওয়ামী জোট মন্ত্রী-এমপিদের মুখে নির্বাচন সর্ম্পকে কোন টু শব্দও নেই। এই সময় বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দেন এবং সংলাপ ও নির্বাচনের আহবান জানান। কিন্তু সরকারের যেনো সে দিকে কর্ণপাত নেই।
একপর্যায়ে বেগম খালেদা জিয়া ২০১৫ সালের ৫ ই জানুয়ারী জনগণদের সাথে নিয়ে গণতন্ত্র হত্যা দিবস অর্থাৎ কালো দিবস এর ডাক দেন। এতে ভোটারবিহীন তথা পায়ের তলায় মাটিবিহীন সরকার ভয়ে ভীত হয়ে সারা দেশব্যাপি বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের ধর-পাকড় শুরু করে। বেগম জিয়াকে গুলশানে তার কার্যালয়ে আটকে রাখে এবং ৫ জানুয়ারী বের হয়ে আসতে চাইলে তার গাড়ির উপরে মরিচের গুড়া স্প্রে বা পেপার স্প্রে করে। এতে বেগম জিয়া আহত হন। শুধু তাই নয় তার গুলশান অফিসের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন এবং চারদিকে কয়েক শত পুলিশ মোতায়েন করে রেখে দু’পাশে রাস্তায় ১৩ টি বালি ও মাটির ট্রাক রেখে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন এবং কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেন না। এ দিকে ভিতরে কিছু নেতাকর্মীসহ বেগম জিয়া আটকে থাকেন।  সরকার পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। ঢাকার প্রবেশমুখে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠি-সোটা নিয়ে অবস্থান নেয় এবং বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান-বাজনা করতে থাকে। জল, স্থল ও রেলপথ সরকার বন্ধ রাখে। মিডিয়ার কল্যাণে দেখা গেছে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী এক ট্রেন যমুনা সেতু পার হলে পুলিশ-প্রশাসন ও আওয়ামী ক্যাডাররা গতিরোধ করে থামিয়ে দেয়। এভাবে সারাদেশ অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামীলীগ সরকার।
এতে বেগম খালেদা জিয়া সারা দেশব্যাপি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা করেন। সরকার বেগম জিয়াকে তার কার্যালয়ে আটকে রেখেও আন্দোলন থামাতে পারেন না। এদিকে সরকার বাস মালিকদের আনসার বাহিনী, পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় বাস বা ট্রাক চলাচল শুরু করতে শুরু করান। আর তৎক্ষণাৎ কে বা কারা সেই সব চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা মারতে শুরু করে। আওয়ামীলীগ দোষ দেয় বিএনপি জোটদের। আর বিএনপি দোষ দেয় আওযামী লীগদের । উভয়েই একে অপরের প্রতি কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করেন। কে বা কারা করে এর কোন সুরাহা হয় না। শুধু চলে দোষারূপ। বেগম জিয়া এতেও দমে না গিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে দেওয়ার লড়াই অব্যাহত রাখেন। এমন অবস্থায় মালয়েশিয়াতে চিকিৎসারত বেগম জিয়ার ছোট ছেলে জনাব আরাফাত রহমান কোকো মার যান (২৫ জানুয়ারী ২০১৫)। বেগম জিয়া শোকাহত হয়ে পড়েন এবং সেই সাথে দেশবাসীও শোকাহত হয়। এক সময় সরকারের গৃহবন্দী অবস্থায় থেকে ধীরে ধীরে শোক কেটে উঠতে শুরু করেন কিন্তু তিনি দেশপ্রেমের টানে, জনগণের অধিকারের কথা ভেবে দমে যান না। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে দেওয়ার লড়াই অব্যহত রাখেন। সরকার এতে বেগম জিয়াকে থামাতে না পেরে গুলশান কার্যালয়ে খাবার বন্ধ রাখেন-পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের লাইনও বন্ধ রাখেন। বেগম জিয়াকে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিহীন আধারের মধ্যে অভূক্ত রাখেন। ভাবা যায় স্বাধীন দেশে কোন মধ্যযুগীয় নির্যাতন বা অত্যাচার। বেগম জিয়া এতেও দমে যান নি। এতে দেশ-বিদেশ হতে নিন্দার ঝড় বয়ে যায় ভোটারবিহীন সরকারের উপর। এক পর্যায়ে সরকার তিন সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং বেগম জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের তালা খুলে নেন, ধীরে ধীরে সেখান থেকে পুলিশও সরাইয়ে নেন। তিনমাস অবরুদ্ধ থাকার পর বেগম জিয়া বের হতে পারেন তার কার্যালয় থেকে। কিন্তু তিনি জনগণের অধিকার, নিরাপত্তা, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য একটু ছাড় দিলেন না। 

অতঃপর সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেন। বেগম জিয়া নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে যান-পথে আওয়ামী ক্যাডাররা হামলা করে, পুলিশ প্রশাসন কিছুই করে না তাদের (আওয়ামী সন্ত্রাসীদের)। ঢাকা-সিটি কর্পোরেশন উত্তর এর নির্বাচনী প্রচার কালে কারওয়ান বাজারে হামলার শিকার হন এবং ঢাকা-সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণ এর প্রচার কালে প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলামোড়সহ বিভিন্ন জায়গায়  প্রশাসনের উপস্থিতিতেই হামলার শিকার হন। এতেও বেগম খালেদা জিয়া বিন্দুমাত্র আপোস করেন নি ভোটারবিহীন, জবর-দখলকারী সরকারের কাছে। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখা গেল অনেকেই ভোট দিতে পারে নি। অনেক ভোটারদের মুখেই বলতে শোনা গেছে, ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে বলে আপনার কষ্ট করে ভোট দিতে হবে না। আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। বহু জায়গায় থেকে বিএনপি এজেন্টদের জোর করে পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং কথিত আছে বাসে করে ঢাকার রাহির থেকে লোক এনে ভোট করে নেন। অথচ সেদিন ঢাকার ভিতর বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। নির্বাচনের দিন বিএনপি তিন সিটি নির্বাচন ভোট বর্জন করে। দুপুরেই মধ্যেই জাতীয় পার্টিসহ প্রায় ২৫ টি দল ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বাতিলের আহবান জানিয়ে নির্বাচন বর্জন করেন। 
তারপরও বর্তমান সরকার থেমে নেই। উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলো একই ধারায় করে নিয়েছে। দেখা গেছে বিএনপি পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতেই দেন নি। কিংবা আগেই তারা প্রভাব খাটিয়ে সিল মেরে নিযেছে নয়তোবা রক্ষক-ভক্ষক হয়ে ছিল মারছে। এমনো দেখা গেছে (পত্রিকা ও টেলিভিশনে) পুলিশের সামনেই এমন ঘটনা ঘটছে। পত্রিকা মারফতে জানা গেছে-এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি প্রার্থীদের হুমকি-ধুমকি দিয়েছে এবং ভোটারদের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করেছে। বিএনপি বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আসল রূপ সারা দেশব্যাপি জনগণের সামনে উন্মোচনের জন্য উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল এবং নিয়ে যাচ্ছে। ভোট যেমন অনিরাপদ তেমন দেশের জনগণও আজ অনিরাপদ। সকাল বেলা মা তার সন্তানরে অফিস-আদালতে যেতে বিদায় দিয়ে শঙ্কায় থাকে বেলাশেষে তার সন্তান ঠিকঠাকভাবে ফিরে আসতে পারবে কি-না ? শঙ্কা থেকে যায় গুম-খুন বা অপহরণের। ভোটাধিকার, মানবাধিকার, নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা চারপাশে এমনি আশংকাজনক যে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাও অহরহ বাংলাদেশের পরিস্থিতি সর্ম্পকে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে।
যেমনঃ মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বা অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৮৪ জন। এর মধ্যে থেকে ৪৪ জনের মৃত্যুদেহ উদ্ধার হয়েছে, পরে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৩৬ জনকে, পরিবারের কাছে ফিরে আসেন ২৭ জন এবং বাকি ১৭৭ জনের ভাগ্যে কি ঘটেছে, সে সর্ম্পকে কিছু জানা যায় নি। 
এসব তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে-দেশের পরিস্থিতি কেমন ? বিদেশীরাও আমাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।

……এমনি অবস্থায় গুম-খুন-অপহরণ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস নির্মূল করে টেকশই উন্নতিশীল দেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং দেশের মানুষের স্থিতিশীল নিরাপত্তা, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য শত মামলা-হামলা, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করে আজও বেগম খালেদা জিয়া কোন আপোস ছাড়াই লড়াই করে যাচ্ছেন। নিরাপদ, অধিকারসমৃদ্ধ সুখী-সম্প্রীতি, স্থিতিশীল, টেকশই উন্নতি’র গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে- গণতন্ত্র, জাতি গঠন, সুশাসন, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, পরিষেবা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ, অর্থনীতি, গবেষণা ও উন্নয়ন, জনমিতিক লভ্যাংশ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিদেশে কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ, মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, কৃষিও কৃষক, শ্রমিক কল্যাণ, নগরায়ন ও আবাসন, নিরাপদ খাদ্য ও ঔষধ, স্বাস্থ্যসেবা, যুব-নারী ও শিশু, জলবায়ুর পরিবর্তন, পানি সম্পদ, নীল অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প, যোগাযোগ, পর্যটন, সম্পদ সংরক্ষণ, সামাজিক ব্যাধির সমস্যা, ভুমিকম্প, র্পাবত্য চট্টগ্রাম ও অনগ্রসর অঞ্চল এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমৃদ্ধ বিষয়াবলীর ভিত্তিতে “ভিশন ২০৩০” জাতির সামনে বেগম খালেদা জিয়া  ১০ মে ২০১৭ তারিখে তুলে ধরেন।
এতে দেশের জনগণ ভাবছে এবং মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে-“বেগম খালেদা জিয়াঃ আপোসহীন-খাঁটি দেশপ্রেমিক এক নেত্রীর নাম।” কেননা তিনি রাজনীতিতে আসার পর মানুষের ভোটের অধিকার তথা গণতন্ত্র ফিরে আনতে ৯ বছর আপোসহীনভাবে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন (শেখ হাসিনা যদিও আপোস করে স্বৈরাচার এরশাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং নিজের জবানিতে নিজেই  ‘জাতীয় বেঈমান’ হয়েছিলেন।) এবং শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র পনঃপ্রতিষ্ঠিত করে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বে ২য় মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি সারা বিশ্বে অনন্য-অতুলনীয় এক নেত্রী। কেননা, তার স্বামী-দেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও মুক্তিযুদ্ধের একজন খেতাবপ্রাপ্ত রীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সেনাপ্রধান, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, স্ব-নির্ভর বাংলাদেশের স্থপতি, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার এবং দেশের জন্য শহীদ এক রাষ্ট্রনেতা এবং তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) নিজে দেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী, [বিশ্বের এমন আরএকটি দেশ নেই-যেখানে স্বামী মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও মুক্তিযোদ্ধা, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং সেনা প্রধান ছিলেন আর স্ত্রী দেশের ইতিহাসে (গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত) প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী] দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে তিনি নারী প্রতিদ্বন্দ্বিদের মধ্যে যে কয়টিতে যে কয়বার অংশগ্রহণ করেছেন সব কয়টিতে বিজয়ী নেত্রী  (শেখ হাসিনা বা রওশন এরশাদ-রা এ রেকর্ড অর্জন করতে পারেন নাই), নব্বই দশকে তিনিই টানা নয় বছর জেল-জুলুম উপেক্ষা করে স্বৈরাশাসকের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ২০০৭ সাল ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন এর সময়কালে শত নির্যাতন, জেল-জুলুম, অত্যাচার সত্ত্বেও গণতন্ত্র টিকিয়া রাখা এবং ২০১৩ সালে সংবিধান সংশোধনীর পর থেকে মানুষের ভোটের অধিকার ও ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারী গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যার মতো অবস্থা থেকে মামলা-হামলা, কার্যালয়ে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসবিহীন অবস্থায় বন্দি ও অভূক্ত থেকে (সরকার বাহির থেকে কোন খাবার ঢুকতে না দিয়ে), আদরের দুই সন্তান থেকে দুরে থেকে (জনাব তারেক রহমান লন্ডনে এবং আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়াতে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান), অত্যাচার সহ্য করে দেশের মানুষের অধিকার, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অবৈধ বা জবর-দখলকারী এই ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন…….।আর এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোট সরকার ভীতু হয়ে সাজানো মামলায় প্রহসনের রায়ে গণতন্ত্রের মা-দেশমাতা তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ থেকে নির্জন, স্যাঁতস্যঁতে, অস্বাস্থ্যকর, পরিত্যক্ত ভবনে কারাবন্দী করে রেখেছেন। জামিনযোগ্য মামলায় জামিন বারবার বিভিন্ন অযুহাতে আটকে দিচ্ছেন এবং এক মামলায় জামিন পেলেও অন্য মিথ্যা মামলায় তাকে শোন এরেস্ট দেখিয়ে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। ….এসব ঘটনায় দেমের মানুষ উদ্বিগ্ন। আজ দেশের আপামর জনসাধারণও গণতন্ত্রের মা-দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চায়। 
…………জনগণ ভাবছে সময়ান্তে সকল বাধা অতিক্রম করে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেনই পাবেন এবং দেশের মানুষের অধিকার, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সফল তিনি (বেগম খালেদা জিয়া)  হবেন-ই হবেন।
[বিঃদ্রঃ এই লেখায় বেগম খালেদা জিয়ার উল্লেখিত উক্তিগুলো সৈয়দ আবদাল আহমদ এর লেখা ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ বই থেকে নেওয়া। এবং এই নিবন্ধে বেগম খালেদা জিয়া ৩ বার প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দেশ ও জাতির জন্য যে সব উন্নয়নমূলক কর্মকা- করেছেন তা উল্লেখ করা হয় নি।]


মো: মিজানুর রহমান- লেখক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট।