Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪. মঙ্গলবার ,০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ :  কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়ক নিরাপদ করতে তৎপর হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্টরা। পুলিশও ১০ দিন বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করে। ১০ দিনে ট্রাফিক আইন অমান্য করায় দুই লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৩টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ সবের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ আইন অমান্যের কারণে চালকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৭৪ হাজার ২২৪টি।

গাড়ির ফিটনেসসহ নানা সমস্যার কারণে যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার ২৪৯টি। এ সময়ে জরিমান আদায় করা হয় সাত কোটি আট লাখ ১৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। জব্দ করা হয় পাঁচ হাজার ৪১৮টি যানবাহন। কিন্তু এতো কিছুর পরও থামেনি সড়কে মৃত্যুর মিছিল বা লাইসেন্সহীন চালকদের দৌরাত্ম্য।

সড়ক আজও ফেরেনি শৃঙ্খলা, সড়ক রয়ে গেছে আগের মতোই অনিরাপদ। সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সহীন চালক, বিআরটিএ’র অনিয়ম-দুর্নীতি, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রীদের আইন প্রয়োগের নামে লোক দেখানো কার্যক্রম ও মনভোলানো সকল সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সড়কে সেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছেই।

ঈদ যাত্রায় সড়কের ভোগান্তি চোখে পড়েছে বেশ। ঈদ যাত্রার ১৪ দিনে দেশের সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪৫টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০৭ জন ও আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৯৩ জন বলে জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নামের একটি সংগঠন।

যেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় পরিবহণ মালিক সমিতির নেতারাই বলেছিলেন, সড়কে কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি নামতে দিবেন না তারা। লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতেও গাড়ি দিবেন না তারা। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে দু-একদিন লোক দেখানো পরিবহণ মালিক সমিতির নেতারা কথার বাস্তব রুপ দিলেও এখন আর সেই কথায় নেই তারা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও শেষ, সমিতির নেতারাও ফিটনেসবিহীন গাড়ি লাইসেনসহীন চালকের হাতে তুলে দিয়েছেন। তাতেই সড়ক পূর্বের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলায় ফিরে গেছে।

জানা গেছে, সড়কে ৯০ শতাংশেরও বেশি পরিবহণ সরকার দলীয় নেতা ও আত্নীয়দের নিয়ন্ত্রনে। আন্তঃজেলা রুটেও এ সংখ্যা কিছুটা কম। তবে তা ৬০ শতাংশের বেশি। এ প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনা বা ট্রাফিক আইন না মানার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় সড়ক নিরাপদ করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে হাতে গোনা কয়েকদিন বিআরটিএর বিভিন্ন কার্যালয়ে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা, লাইসেন্স নবায়নসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও এখন আর তা দেখা যাচ্ছে না। সড়কে চালকরা পূর্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে। নিয়ম না মেনেই চালকরা যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার শিশু আকিফা নিহতের ঘটনা, নাটোরের বড়াইগ্রামের দুর্ঘটনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেপরোয়া এনা পরিবহণের সড়ক ছেড়ে খালে পড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনাই সড়ক অনিরাপদের জানান দিচ্ছে।

মালিকপক্ষ দাবি করেন, নগরীতে বর্তমানে যেসব বাস চলাচল করছে সেগুলোর ফিটনেস সার্টিফিকেট রয়েছে। যেগুলোর ফিটনেস নেই সেগুলোকে রাস্তায় নামানো হচ্ছে না।

কিন্তু নগরীর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এখনও চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। আলিফ পরিবহনের এক চালক জানান, পুলিশ আর আগের মতো কাগজ দেখে না। এই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে অনেক ফিটনেসবিহীন গাড়ির মালিকরা।

সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাসেরই সিট নড়বড়ে, দরজা আছে তো জানালা নেই। কোন গাড়ির দরজা থাকলে সে গাড়ির জানালার কাচ ভাঙ্গা। তুরাগ পরিবহণের বেশিরভাগই গাড়িরই বডি থেকে টিন খুলে পড়েছে। সামনের লাইট জ্বললে পেছনের লাইট জ্বলে না, হুইস পাইপ দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে, চলতে গিয়ে নানা রকম অপ্রতিকার শব্দ। অনেক সময় তো বাসের ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চলাচলের ক্ষেত্রে সিটিংবাসগুলোর অসম প্রতিযোগিতার কারণে বেপরোয়া গতি যাত্রীদেরকে আতঙ্কিত করে তুলছে। অনেক সময় ঘটছে ছোট খাট দুর্ঘটনাও।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সড়ককে নিরাপদ করার চেষ্টা করছি। সড়ক পরিবহন সমিতি বিআরটিএর সাথে মিলে অভিযান পরিচালনা করছে। একেবারেই দুর্ঘটনা নির্মূল করা সম্ভব নয়। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর চেষ্টা করছি। অনেকদিন যাবত ধরে চলা অনিয়ম একদিনেই কমানো সম্ভব নয়।

এ অভিযানের একটা রেজাল্ট আসবে, একটু অপেক্ষা করেন। তবে এখন কিছু কমছে, আগামিতে আরো কমবে বলে আশা করছি। সড়কে তার মালিকাধীন এনা পরিবহনের বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে-এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক গণণমাধ্যমকেই একথা বলেছি যে, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অনেক টাকা খরচ করেছি তাদের জন্য। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটছে, অনেক সময় তাদের অবহেলার কারণে। এসব দুর্ঘটনার ব্যাখা দেওয়া অনেক কঠিন। তাছাড়া দুর্ঘটনা তো একেবারে বন্ধ করা যাবে না, কমিয়ে আনা যাবে।’