খোলাবাজার২৪. বৃহস্পতিবার ,০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ : শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অত্যাচারি রাষ্ট্রে পরিনত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী আহমেদ
রিজভী আহমেদ বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালত বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসার স্থলে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেখানে বন্দি নাজিম উদ্দিন রোডের সেই পুরোনো কারাগারে আদালত বসানো হয়। সরকার প্রধানের অদম্য প্রতিহিংসার দ্রুত চরিতার্থ করার জন্য আদালত স্থানান্তরের এই অসাংবিধানিক ন্যাক্কারজনক কাজটি করা হয়েছে। সরকার আইনকানুনের কোন ধার ধারছেনা। আদালতকে বন্দি করা হয়েছে কারাগারে। যেমন দেশের বিপুল জনসমর্থিত নেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে গণতন্ত্রকেই বন্দী করে রাখা। সরকারের উদ্দেশ্য দু’টি, একের পর এক মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে সাজার স্তুপবৃদ্ধিকরা আরেকটি উদ্দেশ্য দিনের পর দিন আটকে রেখে শারিরীক অসুস্থতার আরোও অবনতি ঘটিয়ে বেগম জিয়াকে বিপর্যস্ত করা। গতকালও আপনারা দেখেছেন হুইল চেয়ারে করে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে। হাত-পা নড়াতে তাঁর অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি এতোটাই অসুস্থ্য ছিলেন যে, তিনি রীতিমতো কাঁপছিলেন এবং চেয়ার থেকে দাঁড়াতে পারছিলেন না। বার বার দাবী করা সত্যেও তাঁর সু-চিকিৎসায় সরকার অবহেলা করেছে। চিকিৎসকদের পরামর্শনুযায়ী তাঁর যথাযথ স্বাস্থ্য পরিক্ষা করানো হয়নি। দল ও পরিবারের পক্ষথেকে তার সু-চিকিৎসার দাবী বারবার উপেক্ষা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের কর্মীরা গতকাল স্বচক্ষে দেখলেন এবং তাদের মাধ্যমে জাতি আবারও জানল বেগম খালেদা জিয়া কতটা গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে কারাগারে রেখে নির্যাতন করছেন সরকার প্রধান। পরিত্যাক্ত কারাগারে তাঁকে যে কক্ষটি দেয়া হয়েছে তা বাস করার জন্য অনুপযুক্ত। মেরামতহীন অপরিচ্ছন্ন জ্বরাজীর্ন কক্ষটি দেয়া হয়েছে সরকারের ইচ্ছায়। বেগম জিয়া যাতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিজ কক্ষে নির্বিগ্নে বাস করতে না পারেন, তিনি যেন সারাক্ষন কষ্ট পান সে জন্যই এই ব্যবস্থা। সামগ্রিকভাবে আইন ও বিচারিক কার্যক্রমেই দেখা যায় বেগম জিয়ার ওপর জুলুমের প্রকাশ। দেশনেত্রী অসুস্থ্য থাকলেও জোরকরে হলেও আদালতে নিয়ে আসতে হবে-এই ধরনের এক আক্রশের মনোবৃত্ত্বি ফুটে ওঠে আইনী কার্যক্রমে। গতকালও বেগম জিয়াকে জোর করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। অন্ধকার কারাগারে আদালত গঠন দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করার শামিল। বেগম জিয়ার ওপর সরকারের এই বেআইনী অসদাচরনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বেগম জিয়ার ওপর যে অবিচার চলছে তা মানবধিকার লঙ্ঘন। এটি সরকারের বেআইনী হিং¯্র আচরন। এর জবাব ক্ষমতাসীনদের জনগনের কাছে দিতেই হবে। যে মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছিল, সেই মামলায় তিনি জামিনে আছেন। অর্থাৎ বেগম জিয়াকে এখন বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের সিনিয়র নাগরিক তাঁর প্রতি সরকারের এমন নিষ্ঠুর আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অত্যাচারি রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। নিষ্ঠুর বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনগনের প্রতিবাদ দমন করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনীভাবে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, ও গণতান্ত্রিক রীতি নীতিকে ধ্বংশ করে গণতন্ত্রের মৃতদেহের ওপর এক ব্যাক্তির শাসন কায়েম করা হয়েছে। সরকার এখনও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সমাধানহীন পরিস্থিতী তৈরি করেছে। হুমকিবাজ আওয়ামী মন্ত্রীরা আবারও একতরফা নির্বাচন করার জন্য দেশব্যাপী জাল ফেলেছে। বিগত কয়েক বছরে আওয়ামী চেতনায় জারিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গড়ে তোলা হয়েছে। শেখ হাসিনা আসন্ন নির্বাচন ‘ম্যানেজ’ করার জন্য সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিষ্ঠার সাথে কাজে লাগাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অধীনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই নির্বাচনগুলো ‘জালিয়াতি নির্বাচন’ হিসেবেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চাননা, কারণ এই ধরনের নির্বাচন হলে শেখ হাসিনার লজ্জাজনক পরাজয় হবে। তাই একতরফা ভোটারশূণ্য নির্বাচন করার জন্য শেখ হাসিনা সারাদেশে বিরোধীদলশূণ্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাড়ীছাড়া, পরিবার ছাড়া পলাতক জীবন বেছে নিতে হয়েছে। প্রতি দিন রাতেই পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারীরা বিএনপি নেতাদের বাসা ও বাড়ীতে হানা দিচ্ছে, তল্লাসীর নামে পরিবারের সদস্যদের সাথে করা হচ্ছে দূর্ব্যবহার, গ্রেফতার করছে এবং জলোচ্ছাসের মতো মামলা দিয়ে সারাদেশকে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারের বাহিনীগুলো বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জান্তব হিং¯্রতায় ঝাপিয়ে পড়ছে। দপন-পীড়নের এতো তীব্র মাত্রার পরও জাতীয়তাবাদী শক্তির ক্ষয় হয়নি। জনগনের নিরব ক্ষোভ প্রতিদিন বেড়েই চলছে। সরকার বিরোধী দলের ওপর যত জুলুম করছে ততই সরকারের পতন ঘনিয়ে আসছে। অশান্তির আগুনে ভিতরে-ভিতরে মানুষ দগ্ধ হচ্ছে। জনগনের সাথে প্রতারনার মাশুল সরকারকে দিতেই হবে।
রিজভী আহমেদ আরো বলেন, গ্রেফতার, মামলা ও বাড়ীতে বাড়ীতে তল্লাসী চলছে-
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি‘র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুর বাসায় বারবার পুলিশ তাকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে তল-াসী চালিয়েছে। এছাড়া সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক স¤ক্সাদক ডাঃ রফিকুল ইসলামের সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় তাকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে বারবার পুলিশ হানা দিচ্ছে এবং পরিবারের লোকজনদের কাছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও তার সন্ধান চাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম স¤ক্সাদক আবদুস সাত্তার এর বাসায় পুলিশ তল-াসী চালিয়েছে।
সুত্রাপুর থানাঃ বিএনপির নেতা আবদুস সাত্তার, জাবেদ কামাল রুবেল, আবু সাহেদ মিন্টু, আনু ও দেলোয়ারসহ ২০ জনের নামে গতকাল ২টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
পিরোজপুর জেলাঃ
জেলা বিএনপির সদস্য ও মঠবাড়ীয় উপজেলা বিএনপির সদস্য শামীম মৃধা, শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান, জানখালী ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সেলিম মিয়াকে আজ পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
নাটোর জেলাঃ
সিংড়া উপজেলা বিএনপির নেতা জয়নাল, রতন, আকরাম, সজিবসহ ৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
কুষ্টিয়া জেলাঃ
বিভিন্ন উপ-জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ১০ টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
মেহেরপুর জেলাঃ
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে গতরাতে ২১ জন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে।
নরসিংদী জেলাঃ
মনোহরদী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মোট ২৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছে ১৫ শতাধিক এবং মামলা হয়েছে ১২ শতাধিক, নাম উল্লেখ করে আসামী সংখ্যা ১১ হাজার এবং অজ্ঞাতনামা আসামী সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপি নেতা তকদির হোসেন মো. জসিম এবং আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।