খোলা বাজার ২৪. সোমবার ,১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘সফল নেতৃত্ব’, আর্থিক উন্নয়ন ও সাংগঠনিক দক্ষতা ছাড়া দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রে সরকার গড়তে বিজেপি যে তিন বিষয়কে হাতিয়ার করতে চাইছে, সেগুলোর অন্যতম রাজ্যে রাজ্যে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তৈরি। বাকি দুটির একটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, অন্যটি নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন। বিজেপির দুদিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এই তিন বিষয়ের ওপর এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয় যে রাজনৈতিক প্রস্তাবের বাইরে এ নিয়ে দলীয় সভাপতি অমিত শাহ আলাদাভাবে এক বিবৃতি জারি করেন।
বিষয়গুলো পৃথক হলেও তিনটিই একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেই সম্পর্ক হিন্দুত্বের। এনআরসির মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের বাংলাভাষী মুসলমানদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো। অল্প কিছু বৌদ্ধ ও হিন্দু ছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও প্রায় সবাই মুসলমান। নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে যাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে, তারাও মুসলমান নন। অর্থাৎ ভোটের প্রচারে এই তিন বিষয় তুলে ধরার মধ্য দিয়ে বিজেপি আসলে ‘হিন্দুত্ববাদের প্রসার ও হিন্দু রক্ষার’ কথাই বড় করে বলতে চাইছে এবং চাইছে ২০১৯ সালের ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণের পথ প্রশস্ত করে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে।
এনআরসি তৈরি নিয়ে আসাম সরকার এখন পর্যন্ত যা করেছে, সে জন্য অমিত শাহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সেনোয়ালের প্রশংসা করেন। তাঁকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যাবতীয় কাজ যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয়। বৈঠকে শাহ জানান, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাটসহ অন্য অনেক রাজ্য থেকে এনআরসি তৈরির দাবি উঠছে। যে যে রাজ্যে দল ক্ষমতায় রয়েছে, সেখানে এই কাজ করা হবে। আগামী নির্বাচনে বিষয়টিকে বড় করে প্রচারে তুলে আনতে হবে। শাহ এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড ও বিহারের পাশাপাশি গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উল্লেখ করে বলেন, সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সমস্যা অনুপ্রবেশ। অনুপ্রবেশের কারণে উন্নয়নের সুফল বিফলে যাচ্ছে।
অমিত শাহ বলেন, ‘এনআরসির কোনো রকম সমালোচনা আমরা শুনতে রাজি নই। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বছরের পর বছর ধরে অনুপ্রবেশ ঘটে যাচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের ভোট পেতে আঞ্চলিক শাসক দলের নেতা-নেত্রীরা (ইঙ্গিত স্পষ্টতই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি) শুধু অন্ধ সেজেই থাকছেন না, আসামের এনআরসির বিরোধিতাতেও কোমর কষে নেমেছেন। সমস্যার সুরাহায় এনআরসির প্রয়োজনীয়তাকে বিজেপি এসব রাজ্যে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করে তুলবে।
এনআরসির পাশাপাশি বিজেপি সভাপতি জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ভারতে চলে আসার বিষয়টি। বৈঠকে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে আসা সে দেশের কাছে অবশ্যই একটা বড় সমস্যা। এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে ভারত উদ্যোগী। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্তরে ভারত সক্রিয়। শাহ বলেন, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, জম্মুসহ বিভিন্ন এলাকায় বহু রোহিঙ্গা চলে এসেছে। তারা দেশের অন্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো হবে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকেও বিষয়টি তোলা হয়। রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে দুই বাহিনীকে কঠোর হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএসএফকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাসহ যেকোনো অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করে বিজিবির সাহায্যে যেন পুশব্যাক করা হয়।
তৃতীয় যে বিষয়ের ওপর অমিত শাহ জোর দেন, তা নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন। দলীয় ও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে সেই দেশের ‘অত্যাচারিত’ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি ও শিখেরা ভারতে চলে এলে তাদের আশ্রয় দেওয়া হবে এবং সাত বছর পর নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নাগরিকত্ব আইনে এ জন্য সংশোধন আনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিলটি আপাতত রাজ্যসভায় স্থায়ী কমিটির বিবেচনাধীন। অমিত শাহ বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারে এই বিষয়কেও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে।