খোলা বাজার ২৪. মঙ্গলবার ,১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় থানায় গায়েবি মামলা দায়ের অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দিনদিন অবনতি হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করার পর দুদিনেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তার চিকিৎসা নিয়ে সরকার ছলচাতুরি করছে।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে গতকাল দেশব্যাপি মানববন্ধন পালনকালে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড়, নির্বিচারে গ্রেফতার ও হামলা করার পরও সকল বাধা উপেক্ষা করে মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বন্ধুরা, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করা রাজনৈতিক দলগুলোর সাংবিধানিক অধিকার, তারপরও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অর্থাৎ পুলিশের অনুমোদন নিয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করলেও নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনা ন্যাক্কারনজনক। মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসুচিতে হামলা, গুলি ও নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
মামলা ও গ্রেফতার-
গতকালও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক স¤ক্সাদক জন গমেজকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এছাড়া বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিককে গতকাল থেকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ না পাওয়ায় তার পরিবার ও বিএনপি’র সকল নেতাকর্মী গভীরভাবে উদ্বেগাকুল ও উৎকন্ঠিত। নিশ্চয়ই তিনি সরকারী কোন বাহিনীর নিকটই আছে। আমি অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
টাংগাইল জেলাঃ
সখিপুর পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী আবদুল গনি কমিশনার, উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ভেন্ডার, পৌর যুবদলের সহ-সভাপতি সে›ট্টু খান, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন কমিশনার, সখিপুর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি একাব্বর হোসেনসহ ১৩ জন গ্রেফতার।
চট্রগ্রাম মহানগরঃ
চট্রগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রশিক্ষন বিষয়ক স¤ক্সাদক ইয়াকুব চৌধুরী, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবু মুসা, আকবরশাহ থানা বিএনপির সভাপতি আবদুস সাত্তার সেলিম, সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাংগঠনিক স¤ক্সাদক গোলাম কিবরিয়া গোলাপকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
নোয়াখালী জেলাঃ
চাটখিল থানা বিএনপির নেতা খোকনকে পুলিশ গতকাল গ্রেফতার করেছে।
মামলা ঃ
বগুড়া জেলাঃ
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক ৩ বারের এমপি মোঃ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, বিএনপি নেতা সাজ্জাদুজ্জামান জয়সহ ৯৪ জন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে গাবতলী ও শাহজাহানপুর থানায় বিস্ফোরক আইনে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর
ঢাকা মহানগরঃ
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোঃ গিয়াস উদ্দিন, রামপুরা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জহির, উত্তরা পশ্চিম থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন, কাফরুল থানা বিএনপির নেতা মামুন ও মোহাম্মদপুর থানার আরো দুজনসহ মোট ১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কামরাঙ্গিরচর থানা বিএনপি’র ৩৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিষ্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
নাটোর জেলাঃ
নাটোর জেলাধীন বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক স¤ক্সাদক আবদুল মজিদ সরকার, বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক স¤ক্সাদক আবদুল খালেক সরকার, বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি শামীম হোসেন, সাবেক ছাত্রদল সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুর রহমান সুজন, গোপালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহীন খান, চাপিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি নয়ন, বড়াইগ্রাম পৌর যুবদলের নেতা আবদুর রহমান আকাশসহ ৩০/৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া অজ্ঞাতনামা প্রায় ৪৫০ জনের নামে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ীতে বাড়ীতে প্রতিরাতে হামলা চালাচ্ছে।
ঝালকাঠি জেলাঃ
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক স¤ক্সাদক মেহেদী হাসান খান বাপ্পি, ছাত্রদলের সাধারণ স¤ক্সাদক গিয়াস সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন, যুবদলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান কামাল মলি-ক, শ্রমিক দলের সভাপতি টিপু সুলতানসহ ১৮ জন নেতাকর্মীর বাসায় গতরাতে পুলিশ তল্লাশীর নামে ব্যাপক ভাংচুর করেছে, এছাড়া পুলিশ পার্টি অফিস তালাবদ্ধ করে রেখেছে।
নরসিংদীঃ
ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাদিকুর রহমান ভূঁইয়া সোহাগের শিবপুরের বাসায় পুলিশ তল্লাশী চালায় এবং ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
তিনি বলেন, গতকাল থেকে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ৩০০ জনের অধিক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেবলমাত্র ঢাকাতেই প্রায় ২৭৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমি দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
রিজভী আহমেদ বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকেও একতরফা করতে অবৈধ ভোটারবিহীন সরকার নানা নীলনকশা করেই যাচ্ছে। দেশব্যাপি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় থানায় গায়েবী মামলা দায়ের অব্যাহত রয়েছে। সরকারের নীলনকশার অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী ও সক্রিয় নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের বিরুদ্ধেও ঢালাওভাবে মামলা দেয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকদের তালিকা করা হচ্ছে, কারা বিএনপি করে বা বিএনপি পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ বেছে বেছে আওয়ামী সমর্থিত লোকদেরকে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কার্যক্রম চলছে। মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করা হয়েছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বানানো হয়েছে সরকারের দলীয় বাহিনীতে, বিচার বিভাগের স্বার্ধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, নি¤œ আদালতে এখন ন্যায় বিচার উধাও হয়ে গেছে।
গতকাল জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটা অপরিহার্য। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব সহিংসতার জন্য হেলমেট পরা যেসমস্ত আওয়ামী ক্যাডার’রা দায়ী তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।” সুতরাং দেশ-বিদেশের কারও দৃষ্টিকেই আর ফাঁকি দিতে পারবে না এই ভোটারবিহীন অত্যাচারী সরকার।
তিনি বলেন,গত দশ বছরের বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে, যেভবে হত্যা গুম খুন চালিয়েছে, যেভাবে ক্রসফায়ারের নামে সাধারণ নিরপরাধ মানুষকে খুন করেছে, যেভাবে নিরাপদ সড়ক ও কোটা আন্দোলনের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে, এখনও উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে আছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এখনও শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার চলছে, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। কয়েকদিন আগে ১২ জন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গতকাল গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসীদের দ্বারাই সম্ভব। রাষ্ট্রের মালিকানা এখন বেআইনী সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। এ অবস্থায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, হেলমেট বাহিনী ও ছাত্রলীগ দিয়ে সেই জনরোষ রোধ করা যাবে না। নেকনজরে পড়ার জন্যই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আইনানুগ কাজ না করে সরকারের কথা শুনছে। যতদিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ সরকারের গৃহজাত বাহিনী হয়ে থাকবে ততদিন আইনের শাসন অদৃশ্যই থেকে যাবে। জনগণের মধ্যে আওয়ামী নির্যাতনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, যেকোনো সময় তার বিস্ফোরণ ঘটবেই। অবৈধ সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। কারণ অবৈধ সরকারের প্রধানের ‘বর্বর অহমিকার’ প্রতি ঘৃণা মিশ্রিত রোষে দেশের জনতা আজ উত্তাল। দাঁড়ানোর কোনো শক্ত জমিন তাদের নেই। তাই গাছের পাতা নড়লেও সরকার এখন চমকে উঠছে। তবে এই অবৈধ সরকারের পতনের খবর আলোর গতিবেগের ন্যায় চরম ক্ষিপ্রগতিতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই ফ্যাসিষ্ট রাত্রির অন্ধকার পোহাবেই।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকায় মহানগর নাট্যমঞ্চে এ কর্মসূচি পালনের জন্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ডিএমপি কমিশনারের কাছে অনুমতির জন্য গেছেন বলেও জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির মুরাদ, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুনীর হোসেন, আবদুল আওয়াল প্রমুখ।
