খোলা বাজার ২৪. শুক্রবার ,১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮: বাংলাদেশে এখন তুঘলকি শাসন চলছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের ছাঁকনি দিয়ে ধরা হচ্ছে। যে জনগণকে পুলিশের নিরাপত্তা দেয়ার কথা অথচ নিত্যদিনের পুলিশের আগ্রাসী অভিযানে দেশের মানুষের জানমাল নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় বিরোধী দলের ৯০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনবিস্ফোরণ ঠেকানো যাবে না।
আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, অসাংবিধানিকভাবে কারাগারে আদালত বসিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় চায় রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে বলেছে ‘যেহেতু খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চাচ্ছেন না, তাই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রায় ঘোষনার দিন ধার্য করুন’। আদালতের কার্যক্রম শেষ করতে লিখিত আবেদনও দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রের অবৈধ কর্তৃপক্ষ আওয়ামী সরকার চক্রান্তমূলকভাবেই দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁকে সাজা দিয়েছে সেটি আবারও প্রমান করলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ। তিনি হাত-পা নাড়াতে পারেন না, হাঁটাচলা করতে তাঁর মারাত্মক অসুবিধা হয়। চিকিৎসক’রা বলেছেন-তাঁর বাম হাত ও পা প্রায় অবশ হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থতার কারণে আদালতে যেতে পারবেন না, বেগম জিয়া সেকথাটিই বলেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ জোর করে আদালতকে ব্যবহার করে বিচারকার্য ছাড়াই রায় দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এটি সম্পূর্ণরুপে ন্যায় বিচারের পরিপন্থী, অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রতিহিংসার বিচার চরিতার্থ করতেই তাড়াহুড়ো করার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষের এই চাপ সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন গুরুতর অসুস্থ, সেকথাটি আদালতকেই তিনি বলেছেন, কিন্তু আদালত তো তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দিলেন না। কারণ সেই আদালত সরকারের হুকুমের বাইরে যেতে পারবেন কী না সেটি নিয়ে জনগণ সন্দেহ পোষণ করে। যেখানে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে হয়, সেখানে নি¤œ আদালত সরকারের চাপ প্রতিহত করে ন্যায় বিচার করতে পারবেন কী ? এখনও পর্যন্ত সেই দৃষ্টান্ত আমরা দেখিনি।
রিজভী আহমেদ বলেন, পোলিও টিকা খাওয়ানোর একটি শ্লোগান আমরা অনেকদিন যাবৎ শুনে এসেছি ‘বাদ যাবে না একটি শিশু’।
এখন সরকার এই শ্লোগানটি ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। অর্থাৎ ‘মামলা-হামলায় বাদ যাবে না একটিও বিএনপি নেতাকর্মী’। দেশে এখন মানুষ নিজের ছায়াকেও ভয় পাচ্ছে। মনে হয়-দেশের প্রতিটি মানুষকে কেউ না কেউ অনুসরণ করছে, গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছে। এমনিতে গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের ক্রমাগত বিস্তৃতি ঘটছে, তার ওপর রাজধানীসহ দেশের আনাচে কানাচে এমন কোন বিএনপিসহ বিরোধী দলের মানুষ বা সমর্থক নেই যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়নি। পাশাপাশি বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের ছাঁকনি দিয়ে ধরা হচ্ছে। জনগণকে পুলিশের নিরাপত্তা দেয়ার কথা অথচ নিত্যদিনের পুলিশের আগ্রাসী অভিযানে দেশের মানুষের জানমাল নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। এদেশে বিদেশী মিশনের কুটনীতিকদেরও নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদুতের উপরও হামলা হয়েছে। কোথাও আওয়াজ শুনলেই সেখানে সরকারী হামলা ধেয়ে আসছে।
তিনি বলেন, পরোয়ানা, গ্রেফতার, হাজতবাস, নিষ্ঠুর বিচার এখন মানুষের নিয়তি। শুধু বিরোধী দল নয়, গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে এই সরকার অপরাধী বানাচ্ছে। সরকারের এই অপরাধের তালিকায় আছেন কোমলমতি স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, অধ্যাপক, শিল্পী, আলোকচিত্রি, সাংবাদিক, অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্ট, যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব মোজাম্মেল হক এর ন্যায় নিরীহ নাগরিক, শিশু, অশীতিপর বৃদ্ধসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। বাদ যায়নি কবরে শায়িত লাশ, প্যারালাইজড্ রোগী, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী, পবিত্র হজ্জব্রত পালনরত ব্যক্তিও। সরকার প্রধানের মনে ত্রাস ও ভয়ের সৃষ্টি হওয়ায় দেশজুড়ে চলছে সরকারী জুলুমের আতিশয্য। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে কুর্নিশ করতে হবে, কোন সমালোচনা চলবে না, এর ব্যতয় হলেই তার ঠাঁই হবে কারাগারে। এই তুঘলকি শাসন এখন চলছে বাংলাদেশে।
কোন কারণ ছাড়াই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত তথ্য মতে গত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে ৩ হাজারের অধিক। আসামী করা হয়েছে নামে-বেনামে প্রায় ৩ লাখ নেতাকর্মীকে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫০০ এর অধিক নেতাকর্মীকে। গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৯০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করার সংবাদ পাওয়া গেছে।
রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, গতকাল দিনরাতে পুলিশ মামলা হামলার বন্যা বইয়ে দিয়েছে। মতিঝিল থানায় বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সিনিয়র যুুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এবং পল্টন থানার একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালামসহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি দলের পক্ষ থেকে এই অসত্য ও বানোয়াট মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।
এছাড়া গতকাল দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ জনাব তরিকুল ইসলাম, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নায়ক উজ্জল, জাসাস সাধারণ সম্পাদক নায়ক হেলাল খান, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ বহু নেতৃবৃন্দের বাসায় পুলিশ হানা দেয় এবং তল্লাশীর নামে ব্যাপক তান্ডব চালায়। দেশের বিশিষ্ট ও জাতীয় রাজনীতিবিদদের বাসভবনে পুলিশ কর্তৃক তল্লাশীর নামে এই ন্যাক্কারজনক তান্ডবের ঘটনায় আমি দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী সরকার ভীরু ও কাপুরুষ, তাদের কোন সাহস নেই। আছে শুধু ভয় ও আশঙ্কা। যদি সাহস থাকতো তবে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচনের পথ সুগম করার জন্য নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতেন। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন হওয়াতে অপরিণামদর্শী স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার এখন হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য। যেকোন মূহুর্তে পিছলে যাবার ভয়ে তারা পুলিশের ওপর নির্ভর করে মামলা হামলা ও গ্রেফতারের শৃঙ্খলে জনগণকে বন্দী করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। জনগণ মনের ক্ষোভ চেপে রাখতে অধৈর্য হয়ে উঠেছে, তাই সর্বত্র প্রতিবাদের সোচ্চার ধ্বণী উচ্চারিত হচ্ছে। যেকোন মূহুর্তে ধেয়ে আসা জনগণের ঘুর্ণিঝড় রুদ্ররুপ ধারণ করবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনবিস্ফোরণ ঠেকানো যাবে না।