খোলা বাজার ২৪. শুক্রবার,২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮: বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ১৯ দফা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের চেতনাকে ধারন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিল।
সারা বাংলাদেশের সাধারন মানুষ শহীদ জিয়ার ১৯দফা কর্মসূচীকে ও তাঁর দেশপ্রেমে আকৃষ্ট হয়ে এই দলে বিভিন্ন দল ও মতের ব্যক্তিবর্গ ও সাধারন মানুষ অংশগ্রহণ করে গণমানুষের দলে পরিণত করেছিল। ১৯৮১ সালে ৩০ শে মে চট্টগ্রামে এক অনাকাঙ্খিত ঘটনায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আকাশে এক কালো মেঘ আর্বিভূত হয়। কে দেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব। সেই সময় একজন গৃহিনী সবার অনুরোধে শুরু করেন বিএনপির রাজনীতি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কঠিন দুঃসময় হাল ধরেন। তারপর দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী উপাধিতে ভূষিত হন যেই তিনি হলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি হাল ধরার পর পিছনে আর তাকাতে হয়নি।
এদেশে সবচেয়ে আস্থাভাজন, জনপ্রিয় সংগ্রামী ও আপোষহীন নেতৃত্বের অধিকারী বেগম খালেদা জিয়া প্রতিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জনগণের নেত্রী হিসেবে গণমানুষের সেবা করেন। তিন-তিন বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২ বার বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। জনপ্রিয় এই নেত্রী ১/১১’র মঈন উদ্দিন ফখরুদ্দিনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে যান। দীর্ঘ কারা ভোগের পর ১১ই সেপ্টেম্বর কারামুক্ত হন জনপ্রিয় এই নেত্রী। মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনের আর্শীবাদপুষ্ঠ হয়ে ক্ষমতার মসনদ বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য টার্গেট করেন জিয়া পরিবারকে।
একের পর এক মামলা ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য শত সহ¯্র পরিকল্পনার পর পরিকল্পনা করে এগিয়ে চলেছেন বর্তমান সরকার। মঈন-উদ্দিন ফখরুদ্দিনের রোষানলে ও বর্তমান সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অকালে জীবন হারায় শহীদ জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো। তাঁর জানাযায়ও লক্ষ জনতার ঢল প্রমাণ করে শত বাধা বিপত্তির ভিতরেও বিএনপি ও জিয়া পরিবার কত জনপ্রিয়। যেই দল স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন হঠাৎ করে সেই দল কেন ঘুমিয়ে পড়ল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টমেন্টের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হলো।
সেই দিনও কোন আন্দোলন দেখতে পায়নি দেশবাসী। ২০১৭ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পরিত্যক্ত নাজিমুদ্দিন কারাগারে প্রেরণ করা হলো। দিনের পর দিন মাসের পর মাস চলে গেল। ৭ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলো এখনও তিনি কারাগারে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে আমরা ভাবছি আর ভাবছি। সেখানেও কোন আন্দোলন গড়ে উঠেনি। সরকার নতুন করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সেই প্রস্তুতিতে বিরোধী দলের সকল বাধা উপেক্ষা করে একনেকে ইভিএম কেনার অনুমোদন করিয়েছেন। তারপরেও আমরা ভাবছি।
বিএনপি এমন একটি শান্ত সৃষ্ট ভদ্র দল যেই দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা হাবিব উন নবী খান সোহেলকে গ্রেফতার করার পরেও এখনো ফেইসবুকে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠলেও রাজপথে মাছি তাড়ানোর মতো একজন মানুষ পাওয়া যায়নি। কোথায় সেই ছাত্র দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলসহ বিএনপি? যারা আগামী দিনের এমপি ও মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন পত্রিকার পাতা খুললেই যাদের নামের তালিকা ও ছবি ভেসে উঠছে তারা কি করছেন? শহীদ জিয়ার আদর্শ ও তার রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে এমপি, মন্ত্রী হয়েছেন ভবিষ্যতেও হওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা কি সবাই ঈসা (আঃ) এর যুগে বসবাস করছেন? সেই যুগে কেউ যদি এক গালে চড় মারত অন্য গাল পেতে বলত ভাই ইচ্ছা হলে আরেকটাও মারতে পারেন। আমাদের বিবেক কবে জেগে উঠবে।
একুশে আগষ্টের মামলার রায় ১০ই অক্টোবর ২০১৮সালে ঘোষিত হবে। সেই রায়ে হয়তো বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহ অনেকের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্খিত কোন রায় আসতে পারে। তখনই কি আমরা ভাবব এর পরে কি ঘটবে? প্রতিদিন আমরা সকাল হলেই নয়াপল্টন ও বিভিন্ন সেমিনারে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে ঝড়ে নড়ে-ছড়ে বসি। এই বুঝি কিছু হল। কিন্তু পদ্মা-মেঘনার ভাঙ্গন হলেও আমাদের শীর্ষ নেতার বক্তব্যে দুঃশাসনের পতন হয়না। বিএনপি একটি শান্ত সৃষ্ট ভদ্র দল। সব কিছু দেখে মনে হয়, তাবলিক জামাতের সাথে বর্তমান বিএনপির অনেক মিল রয়েছে। তাবলিক জামাতের আলেম, ওলামারা দাওয়াত দিয়ে যান। তারপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেন ব্যক্তির উপরে। বিএনপির অবস্থাও ঠিক তেমনি। প্রতিদিন বলে যান আর সিদ্ধান্ত যেই জনগণ আর তরুন প্রজন্ম নেবে তারা কোথায় আছে ও কীভাবে আছে তাদেরকে কীভাবে জাগাতে হবে সে বিষয়টি ভাবার সময় কই? বিএনপির সাথে যারা জোটের রাজনীতি করে তারা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে এবং অদ্যাবধি বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল থেকে পাশে রয়েছেন। নতুন করে যুক্ত হয়েছেন “জাতীয় ঐক্য”।
যারা আসতে না আসতেই ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে ইতিমধ্যেই নতুন ঝড় তুলেছেন। নতুন ঐক্যের নেতারা কেউ ঘটা করে বলেছেন, ২ বছর ক্ষমতার দায়িত্ব আমাদের দিতে হবে। কেউ কেউ আবার সু-কৌশলে বলতে চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব মানিনা। আবার জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্যও জোড়ালো বক্তব্য রয়েছে। গত ৯ বছরে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের সহ¯্রাধিক নেতা কর্মীকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। এম. ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ ৫ শতাধিক গুম করা হয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের এই তালিকায় বিএনপির অনেক নেতারও ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। গুম খুনের তালিকায় বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের তালিকাটাও ছোট নয়। তারাও গত ৯ বছরে জোট ছেড়ে কোথাও যায়নি। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে জামায়াত থাকবে না কেন? তত্ত্বাবধায় সরকারের যখন সৃষ্টি হয়েছিল তখন এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলেছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তত্ত্বাবধায়কের রূপকার ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমির আব্বাস আলী খান। তাদের সময় যদি জামায়াত শুদ্ধ হয় এখন অশুদ্ধ হওয়ার কারণটা কি? ছোট বেলায় একটি গল্প শুনতাম “এক হুজুর গ্রামবাসীকে বললেন চুরি করলে হাত কাটা যাবে, সেই গ্রামের এক বুড়ির একটি লাউ চুরি হয়ে গেল। বুড়ি হুজুরের কাছে বিচার চাইতে আসলেন, হুজুর গোপনে জানতে পারলেন লাউ তার ছেলে চুরি করেছে, হুজুর নতুন ফতুয়া দিলেন হুজুরের যদি ছেলে হয় আর সাদাতুন কদু হয় চুরি করা জায়েজ আছে”। আজ তেমনিভাবে ধর্ষণ, খুন, লুটপাট যদি ছাত্রলীগ বা আওয়ামীলীগের সোনার ছেলেরা করে তাহলে জায়েজ আছে।
আর বিরোধী দলের রাজনীতি করলে বেনিটি ব্যাগ চুরির মামলাতেও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কারাগারে যেতে হয়েছে। অদ্ভুদ দেশে উঠের পিঠে বসে আছি আমরা। একজন দাগি স্মাগলার জামিনে মুক্তি পায়, শুধু মাত্র রাজনীতি করার কারণে ভৌতিক মামলায় অনেকে যুক্ত হয়। ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের বিরুদ্ধে ২ শতাধিক মামলা রয়েছে। আর হাবিব উন নবী খান সোহেল এর বিরুদ্ধে ৬০১ টি মামলা রয়েছে।
এখন চিন্তার বিষয় একজন রাজনীতিবিদ কি এমন অপরাধ করলো যার বিরুদ্ধে শত শত মামলা দায়ের করতে হবে। এমন প্রবণতা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে। বিএনপি আর কত দিন শান্ত সৃষ্ট ভদ্র থাকবে? অনুমতি নিয়ে তারা কি তাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে পারবে? আইনের শাসনে কি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন? সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার। নিজে জেগে উঠুন, বিবেককে জাগিয়ে তুলুন। যেই দল আপনাকে নেতা বানিয়েছে, সম্মান দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে, এমপি বানিয়েছে, মন্ত্রী বানিয়েছে, সেই দলের দুঃসময় শুধু কথা দিয়ে আর ফেইসবুকে ঝড় তুলে এড়িয়ে গিয়ে নিজের বিবেকের আদালতের কাঠগড়ায় আসামী হবেন না। আপনারাই এমপি, মন্ত্রী হন, হন দলের শীর্ষ নেতা, কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আর ঘটাবেন না। তারা জেগে আছে। তারা রাজপথে আছে। জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত তারা।
এই মুহুর্তে খামোশ বলার একজন ভাসানী ও শহীদ জিয়ার মত একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। সেই তালিকায় আপনাকে খুঁজছে আগামী দিনের বাংলাদেশ। বিএনপি শান্ত সৃষ্ট ভদ্র একটি দল হিসেবেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত রেখে চলছে।