খোলা বাজার ২৪.রবিবার,২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮: মোঃরাসেল মিয়াঃ নরসিংদীপ্রতিনিধিঃ নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চলে পানির ওপর বাঁশের মাচায় কচুরিপানা দিয়ে স্তুপ তৈরি করে ভাসমান পদ্ধতিতে নানা জাতের সবজি চাষ শুরু করেন কৃষক হেলাল খান। ওই স্তুপে চাষ করেন লাউ, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, শসা, ঢেড়শসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় চলতি বছর সবজি চাষের আওতা বাড়িয়েছেন তিনি।
কোনও প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া জৈব পদ্ধতিতে চাষ হওয়ায় বাড়তি খরচ নেই। বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে এসব সবজির চাহিদা থাকায় বাড়তি দামও পাওয়া যায়। হেলালের দেখাদেখি চলতি বছর একই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন তার ভাই কাইয়ুম খান। দুই ভাইয়ের সফলতা ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে চরাঞ্চলের অন্যান্য কৃষকদেরও।
কৃষি বিভাগ বলছে, বর্ষা মৌসুমে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়ানোর মাধ্যমে কৃষকদের স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নরসিংদীর চরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষকৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চার ইউনিয়নের বেশিরভাগ জমিই পানিতে তলিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের পর ধান ছাড়া চাষ করা যায় না কোনও ধরনের সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে নজরপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের কৃষক হেলাল খানের ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ পাল্টে দিয়েছে সে দৃশ্যপট।
নরসিংদীর চরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষহেলাল খান বলেন, ‘কৃষি জমিগুলো বছরের ৬ মাস পানিতে তলিয়ে থাকায় বেকার বসে থাকতে হতো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাঁশ দিয়ে একটি মাচা তৈরি করে তার ওপর ৮/৯ ফুট উচু করে কচুরিপানার স্তুপ ভাসমান সবজি বেড তৈরি করি। এই স্তুূপে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করে ভালো ফল পাই। ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি বেড থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো সবজি বিক্রি করেছি। চলতি বছর ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ৫টি সবজি বেড তৈরি করেছি এবং আশাব্যঞ্জক ফলন পাচ্ছি। ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে ।
কাইয়ুম খান বলেন, ভাইয়ের সফলতায় আমিও ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। সার ও কীটনাশক খরচ না থাকায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ লাভজনক। তাছাড়া বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারেও বাড়তি দাম ও চাহিদা রয়েছে এসব সবজির।
নরসিংদী সদরের নজরপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়া বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে দুই কৃষকের সফলতা দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আগ্রহী এসব কৃষকদেরকে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।নরসিংদীর চরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক লতাফ হোসেন বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করতে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এজন্য ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম এর আওতায় প্রদর্শনী ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রথম বষর নরসিংদী সদর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে নজরপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষির সংখ্যা ছিল ৫ জন। পরের বছর ছিল ২০ জন। চলতি বছর ৫০ জন কৃষক এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন ।