Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার ২৪.রবিবার,২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮:  ভালো হোক-মন্দ হোক, দিন হোক-রাত হোক, আলো হোক-আধার হোক, হিত হোক-বিপরীত হোক সময় কথা বলে আর কর্ম ইতিহাস হয়ে থাকে। সময় বড়ই নিষ্ঠুর, বড়ই নির্মম-আবার সময় বড়ই সুখময়, সময় বড়ই সুসময়। সময়ান্তে কর্মময় জীবনে কাউকে করে নিন্দিত আবার কাউকে করে নন্দিত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে কেউ কারো জন্য সময়টা বড়ই নিষ্ঠুর-নির্মম করে ফেলতেছে হয়তো সেই কেউ নিজেকে সুখময করার জন্য সময়টা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের জন্য সুসময় করে নিচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সমসাময়িক কর্মকা-ের ভিত্তিতেই ইতিহাসে একদিন সেই কেউ হবেন হয়তো নিন্দিত আর অপরজন নন্দিত। 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যেনো এক খেলা চলতেছে। এই খেলা যেনো ‘সু মন্তর ফুঁ-জাদুকরের জাদু’। জাদুকর যেমন তার ভেল্কি জাদু দেখিয়ে এক ফুলকে বানায় দশ ফুল, এক টাকাকে বানায় দশ টাকা, মানুষ নিস্তেজ করে কাটিয়ে দু’ভাগ করে দেখিয়ে দিয়ে আবার জোরা লাগিয়ে সতেজ করে, ঠিক তেমনি যেনো বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অঙ্গনেও যেনো এক জাদুকরের আবিভার্ব হয়েছে-যেখানে সাত (০৭) খুন হয় মাফ আর গণতন্ত্রের কথা বললে ওরে বাপরে…. বাপ……জাদুকরের জাদুতে তখন কতো কিছু যে হয়ে যায়। যেমন-গুম, অপহরণ, খুন, হামলা-মামলা, গ্রেফতার-রিমান্ড, জেল, জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন ইত্যাদি। বাসা, বাজার বা চলার পথে কোথাও যেনো মানুষ আজ নিরাপদ নয়। অদৃশ্য শক্তির বলে হতে হয় উধাও-যেনো এক জাদু। সেই জাদুর বলে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বনানীর একটি রাস্তা থেকে ড্রাইভারসহ উধাও-গুম, যার খোঁজ আজো মেলেনি। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বিএনপি’র আরেক নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ জাদুর এক ঠেলায় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ রাতে উত্তরায় তার বাসা থেকে উধাও এবং এক বছর ০২ দিন পর (প্রায়) ২০১৫ সালের ১২ মার্চ  খোঁজ পাওয়া যায় ভারতের শিলং এ। কিভাবে তিনি সেখানে গেলেন তার জবাব আজো মেলেনি। এ যেনো আশ্চর্য, অদ্ভুত এক ‘ ‘সু মন্তর ফুঁ-জাদুকরের জাদু’। 

মাত্র ৪ মিনিটে এক জাদুতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ টাকা উধাও হয়-স্বর্ণের গরমিল হয়, কয়লা খনির কয়লাও উধাও হয়। কয়লা ধূলে যেমন ময়লা যায় না জাদুকরও তেমনি তার জাদুর কারসাজি ছাড়ে না। এসব নিয়ে যেনো কেউ কথা বলতে না পারেন এমন কি কেউ ক্ষমতায় আসতে না পারেন তার জন্য জাদুমন্ত্রের তন্ত্রে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আউট। ফলে ভোটারদের ভোট আর ভোটার দিতে পারেন নাই। ভোটের আগেই জালিয়াতি-কারসাজির জাদুতে নিজেদের প্রতীকে ব্যালটে ছিল মেরে ভরে রাখে। কেন্দ্রে ভোটার আর নিজেদের ভোট নিজে দিতে পারেন নাই। ভোট দিতে গিয়ে দেখেন তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে নয়তো সাগরেতরা কেন্দ্রে বসে আছে আর বলছে-‘আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে চলে যান আর ভোট দিতে হবে না। এক অদৃশ্য জাদু বলে মৃত ব্যক্তিও তার ভোট দিয়ে যায়। কেন্দ্রের ভোট ১০০% এর বেশীও পরে। আর ভেল্কি জাদু দেখিয়ে ০৫% ভোটকে ৪০% বানায় ই সি। ফলে দেখো যায় ভোটারবিহীন-প্রার্থীবিহীন নির্বাচনে জাদুকররা জাদুতেই জিতে যায়। জাদুর যেনো শেষ নেই। আসছে সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ উপলক্ষ্যে এক জাদুর জাল বিছানো হয়েছে। সারাদেশ ব্যাপী ছাকনির মতো ছাকিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে সাজানো নাশকতার কথিত মামলায়। অথচ দেখা যায় যে কোন আন্দোলন দমাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সশস্ত্রভাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ তথা আওয়ামীলীগ ক্যাডার দ্বারা আক্রমন করতে-তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মনেহয় নাশকতা চোখে পরে না। শুধু চোখে পড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের। তাই তাদের ধরতে সারা দেশব্যাপী দেওয়া হয়েছে অসংখ্য আজগুবি মামলা। এক সুত্রমতে জানা যায় সারাদেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৭৮ হাজারের বেশী মামলায় আসামী করা হয়েছে ৭৮ লাখের বেশী, অজ্ঞাত আসামী আরো ৩৪ লাখের বেশী এবং গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৭ হাজার, খুন হয়েছে প্রায় ৭৭২ জন, গুম প্রায় ৪২৭ জন, নিখোঁজ প্রায় ১৫২ জন এবং আহত প্রায় ৩৩ হাজার। আর ০১ লা সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ইং পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রায় ২০০০ এবং আসামী প্রায় ২,০০,০০০ লক্ষ। কোন জাদুর বলে এসব মামলা আর গ্রেফতার হয় বেছে বেছে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে। অথচ আ’লীগ ক্যাডাররা সশস্ত্র থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দেখেও না দেখার ভান করেন। কোন নাশকতার মামলা করেন না তাদের নামে। এ যেনো এক আশ্চর্য জাদুকরের জাদু-যে জাদুর ভানুমতি খেলা দেখে দেশের মুল জাদুকররা দেশ ছেড়ে পালাবে। কেননা, তাদের জাদু হয়তো আর পাবলিক দেখবে না। পাবলিক তো রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় বড় জাদুর খেলা দেখতেছে। যেখানে একপক্ষ যা খুশি তাই করতে পারতেছে আর অন্য পক্ষ কথা বললে যেনো আতে-ঘা লাগে ফলে শুরু হয় গ্রেফতার। জনগণের কল্যাণে আর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-একনিষ্ট ভুমিকা শুরু থেকে রেখে যাচ্ছেন তাকে  মিথ্যা, সাজানো মামলায় প্রহসনের বিচারে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। জামিন সত্ত্বেও অন্যান্য মিথ্যা মামলায় শোন এ্যারেস্ট দেখিয়ে বন্দী রাখা হয়েছে। তিনি অসুস্থ্য হলেও তার সুচিকিৎসার কোন ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। জনগণের কল্যাণে আর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার তার অবদান দেখে জনগণই তার উপাধি দিয়েছেন “মাদার অব ডেমোক্রোস” অর্থাৎ গণতন্ত্রের মা। আজ সেই মা-বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য দুঃশাসনের কারাগারে বন্দী। তাহলে গণতন্ত্র এখন কোন পর্যায়ে। 

বিএনপি সভা-সমাবেশ ডাকলে তা করারও অনুমতি পায় না সহজে। সভা-সমাবেশ থেকেও আক্রমনাত্মকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আবার সামাজিক গণমাধ্যমে যাতে কেউ সমালোচনা করতে না পারে তার জন্য পাশ করা হলো ডিজিটাল আইন। এতে গণমাধ্যমসহ গণমানুষ সবার টুটি চেপে ধরা হলো। যেনো মানুষের যেমন নিরাপত্তা নেই তেমনি লেখার স্বাধীনতাও নেই। গণতন্ত্র জাদুকরের জাদুর জালে মুমূর্ষু আবস্থায় আছে। আজ যে গণতন্ত্র জনগণ দেখছে তা যেনো-“জাদুকরের জাদুতে-গণতন্ত্র আইসি ইউ-তে”। আর আইসিইউ-তে থাকা সে গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে দেশপ্রেমিক জনগণ ও রাজনৈতিক দলসমূহ ও নেতারা-যারা প্রায় এক দশকেরও বেশী সময় ধরে লড়াই করে আসছেন অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় লড়াইকামী রাজনৈতিক দলসমূহ ও নেতাদের পাশে এবার আপামর জনসাধারনের দাড়াতেই হবে-এখনই সময় জাদুকরের সকল জাদুর কৌশল ছিন্ন করে কাঙ্খিত লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। এতে পাস্পরিক অভিপ্রায় নিয়ে দেশপ্রেমিক জনগণের সাথেও থাকতে হবে লড়াইকামী রাজনৈতিক দলসমূহ ও নেতাদের। অর্থাৎ তাদের পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে থেকে সকল ষড়যন্ত্র ও বেড়াজাল ছিন্ন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতেই হবে এবার। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাঝেই নিহিত আছে- “মাদার অব ডেমোক্রেসি ” অর্থাৎ গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। দেশপ্রেমিক জনগণ ও লড়াইকামী রাজনৈতিক দলসমূহ ও নেতাদের সমন্বয়ে এবার সকল দুঃশাসনের জাদুর জাল ছিন্ন করতেই হবে-মুক্ত করতেই হবে গণতন্ত্রকে তবেই মুক্তি পাবে “মাদার অব ডেমোক্রেসি ” অর্থাৎ গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া। যার সারমর্ম নি¤েœর পংক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়-
জনগণ ধরে ফেলেছে জাদুর মন্ত্র
অধিকার আদায়ে তারা আজ একতাযন্ত্র
পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেই গণতন্ত্র
নির্মুল হবে সকল ষড়যন্ত্র-জাদুরমন্ত্র।
মুক্ত করে আনবেই গণতন্ত্রের মাতা-
বেগম খালেদা জিয়াকে,
দেশের ভার তুলে দিবে জনগণ তাকেই।
তার হাতেই মানায় এ তাজ
তিনিই গণতন্ত্রের অহংকার আজ।


মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।