খোলা বাজার ২৪.সোমবার,২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান। সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তাদের পক্ষে দুই আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও মো. আক্তারুজ্জামান নাজিম উদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে এই আবেদন করেন। এই আদালতের বিচার কার্য পরিচালনা করছেন বিচারক আখতারুজ্জামান। ‘ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা’ জানিয়ে করা আবেদনে আদালত ও বিচারক পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে আগামী ২০ কার্য দিবস মামলার শুনানি স্থগিত রাখারও আবেদন জানানো হয়।
বিচারক আখতারুজ্জামান এ বিষয়ে দুই আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর মঙ্গলবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। এছাড়া আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিন বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ক্লায়েন্ট আমাকে জানিয়েছিল যে এই আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাবো না। আমি সেই অনুযায়ী আদালতে একটা অনাস্থা জানালাম। একটা দরখাস্ত দিয়ে বললাম যে আমার ক্লায়েন্টের আপনার প্রতি কোনও আস্থা নেই। যেহেতু আস্থা নাই এবং এটা একটা আইনসঙ্গত বিধান। আমি ক্রিমিনাল ল' এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের ১০-এর ৩ ধারা উল্লেখ করে বলেছি যে আপনি আদালতের কার্যক্রম দয়া করে স্থগিত রাখেন। যেহেতু আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়েছে, আমাকে একটা যৌক্তিক সময় দেন যাতে মামলার সার্টিফায়েড কপি তুলে হাইকোর্ট ডিভিশনে মামলাটা যেন ফাইল করতে পারি।’
আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘এই আবেদনটা করার পর বিচারক আসামির জামিনটা বাতিল করলেন। আসামি কখনও জামিনের মিসইউজ করেন নাই। আর অনাস্থার আবেদনের বিষয়ে তিনি কাল (মঙ্গলবার) আদেশ দেবেন।’
এদিকে আদালত সূত্র জানায়, মামলার অন্যতম প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার আবেদন করেন। এ সময় মামলার বাদী ও তদন্ত সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর বিরোধিতা করলে বিচারক আখতারুজ্জামান আগের মতোই কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলাটির বিচারকাজ চালাতে আইনগত কোনও বাধা নেই বলে আদেশ দিয়েছেন বিচারক আখতারুজ্জামান। আদালত বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে আসতে অনিচ্ছুক হওয়ায় এ মামলার অন্য আসামিদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার বিচারকাজ চলবে।
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তখনকার একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলার আগে থেকেই হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।
পুরনো কারাগারে আদালত বসানোর আগে মামলাটির কার্যক্রম রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে চলে আসছিল। এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি অপর আরেকটি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।