Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলা বাজার ২৪.শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮:  বিএফডিসির মূল ফটকের সামনে ছোট ও মাঝারি আকৃতির পোস্টার ঝুলছে। ফটক পেরিয়ে ভেতরে যখন প্রবেশ করি তখন সকাল পৌনে এগারোটা বাজে। ভেতরের দিকে হাঁটতে থাকি। রাস্তার দুই পাশেই সারি সারি পোস্টার দেখা যায়। নির্বাচনে পদ প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা এখানে অবস্থান করছেন। তারা আগত ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও হাতে হাতে ছোট আকৃতির পোস্টার বিলি করছেন।

হেঁটে সোজা চলে আসি বিএফডিসির ক্যান্টিনের সামনে। ক্যান্টিনের সামনের পুরো খালি জায়গাটাতেই সামিয়ানা টাঙানো। মাঝে মাঝে চেয়ার টেবিল পাতা। তাতে বসেই নির্বাচনী প্রচারণা যেমন চালাচ্ছেন, তেমনি শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন নবীন ও প্রবীণ নাট্য পরিচালকরা। বলছি, টেলিভিশন নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচনের কথা। আজ সকাল ৯টা থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে বিএফডিসিতে চলছে ভোট গ্রহণ, চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

এ সময় কথা হয় সাধারণ ভোটার ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমন কজনের সঙ্গে। ভোট প্রদান শেষে পুরো নির্বাচন নিয়ে অভিমত জানিয়েছেন তারা।

এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সালাউদ্দিন লাভলু। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি খুবই ভালো, খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ, খুবই উৎসবমুখর। সকাল সকাল এসেই আমি আমার ভোটটি দিয়েছি। ডিরেক্টরস গিল্ডের সমস্ত প্রার্থী যেটা স্বপ্ন দেখে-এই সংগঠনটি আরো এগিয়ে যাক। এই সংগঠনের পেশাদারিত্বের জায়গাটা, ডিসিপ্লিনের জায়গাটা যাতে আরো শক্তিশালী হয়-আমারও সেটাই প্রত্যাশা। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি এজন্য বিজয়ী হবোই সেটা বলা মুশকিল। কারণ এটি নির্বাচন। তবে সবার যে ভালোবাসা, স্নেহ, সম্মান পাচ্ছি তাতে আশা জাগানিয়া।’

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন এস. এ. হক অলিক। তিনি বলেন, ‘ভালো লাগছে সব নির্মাতা আবার একসঙ্গে হয়েছি। আসলে একত্রিত হওয়াটা জরুরি। যে কোনোভাবেই যখন আমরা এক হয়ে যাব তখন পুরো ইন্ডাস্ট্রিটাই এক হবে। আর এক হলেই ভালো কিছু হবে। সবার সরব উপস্থিতি, সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে- তাতেই বোঝা যাচ্ছে যে, আমাদের মধ্যে ইউনিটি আছে আমরা এক। দেখা যাক কি হয়। তবে বিশ্বাস করি, নির্মাতারা তাদের সংগঠনকে ভালোবেসে তার বিবেচনাবোধ থেকে সঠিক প্রার্থীর সঠিক মূল্যায়ন করবেন। আর নির্বাচনের চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে কোনোরকম অভিযোগ নেই। যারা এই নির্বাচন পরিচালনা করছেন তারা আমাদের গুণীজন। তাদের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।’

পরিচালক এস এ হক অলিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। এ নির্মাতা বলেন, ‘পরিচালকরা এলিট শ্রেণির নাগরিক। এখানে সৃজনশীল, গুণীজন, আলোকিত মানুষজন রয়েছেন। সুতরাং এখানে নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকার কথা না। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে। যারা ভোট দিতে আসছেন এসেই একে অন্যকে বুঁকে জড়িয়ে নিচ্ছেন। অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে এটা ভালো লাগছে। এমন পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে ছয় মাস পর পর কেন নির্বাচন হয় না, তা হলে আরো বেশি ভালো লাগত! আমরা ৫৩০জন পরিচালক রয়েছি। কিন্তু সবাইকে কি চিনি? এই নির্বাচন উপলক্ষে সবার সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে।’

প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে রাজ আরো বলেন, ‘যদি বিজয়ী হই তবে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন করব। টেলিভিশন মিডিয়া একটি ইন্ডাস্ট্রি। অর্থের দিক থেকে এটা যে বড় একটি ইন্ডাস্ট্রি সেটা হয়তো সরকার জানে না। সে তুলনায় আমরা অনেক পরিচালক দুর্বিষহ অবস্থায় আছি। শুধু নিয়ম আর পরিকল্পনার অভাবে এটা হচ্ছে। অনেকের অভিযোগ তারা কাজ পান না, অন্যরা কাজ পাচ্ছেন। এর জন্য শুধু একটা পরিকল্পনা দরকার। তারপরও আমি যোগ্যতায় বিশ্বাস করি। সব কিছু মিলিয়েই সংগঠনে সুন্দর একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বিদেশি সিরিয়াল যেমন আমরা ডাব করে চালাই, এমন একদিন আসবে যেদিন আমাদের নাটক বিদেশিরা ডাব করে চালাবে।’

জনপ্রিয় পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী এই নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সকাল সকালই নিজের ভোট প্রদান করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘একদম প্রথমে আমি আমার ভোট প্রদান করেছি। অর্থাৎ প্রথম ছয়জন ভোটাদাতার মধ্যে আমি একজন। পরিবেশটা খুবই সুন্দর যদিও গরমটা একটু বেশি। কিন্তু এমন উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে, এই গরম আর গরম মনে হচ্ছে না। পরিচালকরা ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ কম হয়। নির্বাচন উপলক্ষে সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আনন্দে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছে। খুবই উৎসবমুখর পরিবেশ, খুবই ভালো লাগছে।’

প্রথমবার কোনো নির্বাচনে অংশ নিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক রিয়াজুল রিজু। এই নির্বাচনে তিনি সাংগঠনিক পদে লড়ছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজু বলেন, ‘জীবনে প্রথমবার কোনো নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে চরম টেনশনের মধ্যে আছি। এই পরিবেশের সঙ্গে একদমই পরিচিত না। ক্লান্ত এজন্য শরীর বসে যাচ্ছে কিন্তু টেনশনে আবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছি।’

আরেক নাট্য নির্মাতা মাহমুদ দিদার। তবে তিনি এ নির্বাচনে কোনো পদে লড়ছেন না। এসেছেন নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। ভোট প্রদান শেষে দিদার বলেন, ‘নির্বাচন মতাদর্শের একটি বিভাজন তৈরি করে। ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচনে সেটা হচ্ছে। দৃশ্যত সবার পথ একই। সব মিলিয়ে এখানে আজ উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এটা এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করছে।’

মাবরুর রশীদ বান্নাহ্ এসেছেন ভোট প্রদান করতে। তিনি কোনো পদে লড়ছেন না। ভোট প্রদান শেষে বান্নাহ্ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছি। এখনো সে পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন পরিবেশ সাধারণত দুই বছর পর পর দেখা যায়। এই পরিবেশ আমাদের কাছে অনেকটা ঈদের মতো। কারণ এদিনই সবার সঙ্গে দেখা হয়। আবার দুই বছর পর দেখা হবে।’ 

ডিরেক্টরস গিল্ডের মোট ভোটার ৪৯০ জন। তাদের ভোটে ২০ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হবে নতুন কমিটি। এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আমজাদ হোসেন। তার সহকারী হিসেবে রয়েছেন মামুনুর রশীদ ও এস এম মহসীন।

এবারের নির্বাচনে ২০টি পদে মোট ৫২ জন প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ২ জন, সহ-সভাপতি ৭ জন, সাধারণ সম্পাদক ৩ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৪ জন, অর্থ সম্পাদক ২ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৩ জন, প্রচার সম্পাদক ২ জন এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সভাপতি পদে সালাহউদ্দিন লাভলু ও সৈয়দ আওলাদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এস এ হক অলিক, এস এম কামরুজ্জামান সাগর, মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন