Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলা বাজার ২৪, বুধবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৮: সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে। সংসদে পাস হওয়া বিলটিতে গতকাল মঙ্গলবার সই করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। আজ এ-সংক্রান্ত নথিটি সংসদ সচিবালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠানো হতে পারে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদে পাস হওয়া অন্যান্য বিলের মতো ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটিও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। এরপর আইনটি সংশোধন হবে কি না, তা নির্ভর করছে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর। সেই সিদ্ধান্ত গতকাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা সচিবদের কাছে যায়নি।

একাধিক মন্ত্রী প্রথম আলোকে জানান, আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রী আলোচনা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন থেকে দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে তাঁর নির্দেশ পেতে সংশ্লিষ্টরা অপেক্ষা করছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পাদক পরিষদের বক্তব্যের সমালোচনা করে ১ অক্টোবর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, স্পিকার একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে বেলজিয়ামে যাওয়ার কারণে বিলটিতে যথাসময়ে সই করতে পারেননি। সোমবার তিনি দেশে ফিরে পরদিন সই করেন। ফোনে জানতে চাইলে স্পিকার বিলে সই করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, বিলটি আইনে পরিণত হচ্ছে। এর পাশাপাশি আলোচনাও চলবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে আইনটি থামিয়ে রেখেই সংশোধন করা হবে। আইনটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অনুমোদন হয়ে যাবে। সরকার চাইলে যেকোনো সময় এটি সংশোধন বা সংযোজন-বিয়োজন করতে পারে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বিলে সই করলে সেটি আইনে পরিণত হবে। এরপর সরকার যদি আইনে কোনো সংশোধনী আনতে চায়, সে ক্ষেত্রে সংসদে নতুন করে বিল আনতে হবে।

সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো বিল রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপনের পর ১৫ দিনের মধ্যে তিনি তাতে সম্মতি দিয়ে সই করবেন। অর্থ বিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বিলটি কিংবা বিলের বিশেষ বিধান বা ধারা পুনর্বিবেচনা বা সংশোধনের জন্য সংসদে ফেরত পাঠাতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতি কোনো কারণে বিলে সই করতে অসমর্থ হলে উপস্থাপনের ১৫ দিন পর তিনি বিলটিতে সম্মতি দিয়েছেন বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ বিলটি আইনে পরিণত হবে।

বঙ্গভবন সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ আজ সকালে নেত্রকোনায় যাবেন এবং সন্ধ্যার আগে বা পরে তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা। সে ক্ষেত্রে কাল বৃহস্পতিবার তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে সই করতে পারেন। সংসদের ২২ তম অধিবেশনে মোট ১৮টি বিল পাস হয়। ইতিমধ্যে ১১টি বিলে তিনি সম্মতি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বাকি সাতটি বিলে সম্মতি দিতে পারেন।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়। প্রস্তাবিত এই আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সম্পাদক পরিষদ ও সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো এর বিশেষ কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছে। সম্পাদক পরিষদ এই বিলের অন্তত ৯টি ধারা নিয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সম্পাদকেরা বলেছেন, প্রস্তাবিত এই আইন বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। দেশ-বিদেশের মানবাধিকার ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোও আইনটির কড়া সমালোচনা করে আসছে।

এ পরিস্থিতিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে পরিষদ সেই কর্মসূচি স্থগিত করে। গত রোববার সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক হয়। সেখানে এই তিন মন্ত্রী সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন। আজ বুধবারের পর আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার যে নিয়মিত বৈঠক হওয়ার কথা, সেখানে বিষয়টি আলোচনার জন্য তোলা হবে বলেও জানান তাঁরা।

এই আলোচনার প্রসঙ্গ আসার পর সংবাদকর্মীদের মধ্যে ধারণা হয় যে আইনটি সংশোধন হবে। কিন্তু সরকারের তৎপরতায় সেই লক্ষণ দেখছেন না তাঁরা।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ মাসের শেষের দিকে বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশন বসতে পারে। সুতরাং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন হলে এই অধিবেশনে বিল উত্থাপন করতে হবে। সংসদ কার্যকর বা চলমান না থাকলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমেও আইনে সংশোধনী আনা সম্ভব।

তথ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, আইনটি সংশোধনের কোনো পরামর্শ বা নির্দেশনা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসেনি। আইনটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কার্যকর হয়ে যাবে। এরপর বিধি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো কিছু যুক্ত করার প্রয়োজন হলে সেটি বিবেচনা করা হতে পারে।

নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘আইন সংশোধন প্রসঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যেটুকু পাওয়া গেছে তা ইতিবাচক নয়। তবে সরকারের তিন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, সম্পাদকদের উদ্বেগ আমলে নিয়েছেন। এতে আমাদের বিশ্বাস হয়েছে যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাক্স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হোক, এটা তাঁরা চান না। এগুলো রক্ষা করেই আইনটি তাঁরা চান।’