Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

খোলা বাজার ২৪, বুধবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৮:  বিশ্বজিৎ দত্ত : বড় প্রকল্প করতে গিয়ে বড় ঋণের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে সরকার। এমনকি পদ্মাসেতুর ঋণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। গতকাল বিশ্বব্যাংক ২০১৮ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টের উপর আলোচনা করতে গিয়ে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর সরকারের ঋণ নিয়ে এ কথা বলেন।
হোসেন জিল্লুর বলেন, বাংলাদেশের প্রথম বড় প্রকল্প ছিল যমুনা সেতু। সেটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার। টাকার অংকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। পদ্মাসেতু নির্মাণে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীতে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অভন্ত্যরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। পরোক্ষ বিদেশি ঋণও রয়েছে। এভাবে সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে আসলে অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে। এই সেতু নির্মাণ হলে কী লাভ হবে তার কোন স্টাডি আমাদের কাছে নেই। জনগণের কাছে পদ্মাসেতুর এসব বিষয় পরিস্কার করা দরকার।
পরে আহসান মনুসুরও বলেন, পদ্মাসেতুতে রেলসংযোগ পুরোটাই বিদেশি ঋণে করা হচ্ছে। এভাবে কোন ধরনের লাভক্ষতির হিসাব না করেই নানা মেগা প্রকল্প করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক ১২শ কোটি ডলার ঋণ দেয়নি। কিন্তু পুনর্বাসনে ও জলবায়ুর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একই পরিমাণ অর্থ দিয়েছে।
এ পর্যন্ত ২৭ বিলিয়ন ডলারের মেগাপ্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তারমধ্যে রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পতেই ব্যয় হবে ১৩ বিলিয়ন ডলার। এটি সম্পূর্ণ বিদেশি ঋণে করা হচ্ছে। এখন যে প্রকল্পই নেয়া হয় তা বিলিয়ন ডলারের নীচে আর হয় না। কিন্তু এগুলো বিদেশি ঋণে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঋণের ফাঁদে পড়তে চলছে সরকার। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এ জাতীয় ঋণের যন্ত্রণা টের পাচ্ছে। এখন এ ফাঁদ থেকে তারা আর বের হতে পারছে না। আবার উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ঘোষণায় ঋণের সুদ বাড়িয়ে দিয়েছে সকল ঋণদান সংস্থা এমনকি বিশ্বব্যাংকও। প্রকল্প বাস্তবায়নে কেউ সঠিক ব্যয় বলছে না। প্রকল্প সাসটেইনেবল কীনা তাও বলছে না। গত দুই বছর ধরে সরকারের আয়- ব্যায়ে ফারাক বাড়ছে। যা ঋণাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। ইমপোর্ট বাড়ছে। সেই তুলনায় এক্সপোর্ট নাই। তার মানে হলো অর্থ পাচার হচ্ছে। এটি রোধ করার কোন ব্যবস্থা নাই।
আহসান মনসুর আরো বলেন, অর্থনীতি বৃদ্ধির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই বৃদ্ধি কাদের কাছে পৌঁছছে। এখনো দেশে ৪ কোটি দরিদ্র লোকের বাস। তিনি বলেন, রেমিটেন্সও কমে আসছে। গত বছরেও ১ মিলিয়ন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু টাকা আসছে না। আগে সরকারের রিজার্ভে ছিল এক বছরের আমদানি ব্যয় মিটানোর সমপরিমান অর্থ। এখন তা ৩ মাসে এসে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে সুদের হার ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারের নয়-ছয় নীতি এখানে কাজ করেনি। হুকুম দিয়ে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটা আমরা আগেই বলেছি। তিনি বলেন, উন্নত দেশে পরিনত হতে হলে সরকারের ট্যাক্স ও জিডিপির রেশিও ১০ থেকে ১২ শতাংশ যথেষ্ট নয় । বিশ্বের কোন দেশই তা পারেনি।