খোলা বাজার ২৪,শুক্রবার , ০৫ অক্টোবর ২০১৮: বেসরকারি উদ্যোগে দেশের সর্ববৃহৎ ও উত্তরাঞ্চলের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল। গতকাল বেজা কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
বেজা সূত্র অনুযায়ী, যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩৫ দশমিক ৯৩ একর। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্র বৃদ্ধির জন্য এখানে একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
১১টি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেডের মালিকানাধীন এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাতগুলো হলো— টেক্সটাইল, অ্যাপারেল ও পাটজাত দ্রব্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পাল্প ও কাগজ, সিরামিক, রাসায়নিক দ্রব্য, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস, প্লাস্টিক, চামড়াজাত দ্রব্য/জুতা, আইটি পার্ক, গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি, ফার্নিচার, এলপিজি টার্মিনাল, ইস্পাত, প্রক্রিয়াজাত মত্স্য এবং জাহাজ শিল্প।
অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ভূমি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিষেবা ও অন্যান্য সুবিধাদি স্থাপনের জন্য মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। এখানে পর্যায়ক্রমে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে এবং কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি), ডরমিটরি, পাঁচ তারকা মানের হোটেল, স্বাস্থ্যসেবা, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ও বিনোদন কেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে তোলা হবে। এছাড়া দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তোলার কারণে যেসব জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রায় ১০০ বিঘা জমির ব্যবস্থা রেখে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এর ভূমি উন্নয়নের প্রস্তুতিমূলক সব কাজ শেষ করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষ নাগাদ ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, দেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারি আওতায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি আইন ও বিধি মেনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এ খাতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের অবকাঠামো কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এদিকে মহেশখালী ও সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোরীয়, জাপানি, চীনা ও থাই প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ, মোহাম্মদ আইয়ুবসহ সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেডের উদ্যোক্তা-পরিচালক মাহামুদ হাসান খান, আনোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, মো. নজরুল ইসলাম ও শেখ মনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের সমন্বিত উদ্যোগে উত্তরাঞ্চলের জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। লালমনিরহাটের বুড়িমারী, দিনাজপুরের হিলি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের সুব্যবস্থার কারণে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য রফতানি ও সরবরাহ সুবিধাজনক হবে।