Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলা বাজার ২৪,রবিবার , ০৭ অক্টোবর ২০১৮: আদালতের নির্দেশ মতো বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না মর্মে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চকে অবগত করেছেন বেগম জিয়ার আইনজীবীরা।

এর আগে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে পুরান ঢাকার কারাগার থেকে শাহবাগের হাসপাতালটিতে নেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে।

৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিএসএমএমইউতে দুটি কেবিন দুপুর থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। বিকালে খালেদাকে আনার আগে দুপুরে তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র হাসপাতালে আনা হয়।

বেলা সোয়া ৩টার দিকে খালেদাকে নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে পুলিশের সাদা রঙের একটি গাড়ি। এর সামনে-পেছনে ছিল পুলিশ, র‌্যাবের বেশ কয়েকটি গাড়ি। একটি অ্যাম্বুলেন্সও ছিল গাড়িবহরে।

আধা ঘণ্টা পর পৌনে ৪টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌঁছে গাড়িটি; গোলাপি রঙের শাড়ি পরা খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে হুইল চেয়ারে ওঠেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ছয় তলায়।

কারাগারে থাকা খালেদার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকেও গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে উঠতে দেখা যায়। কয়েকটি ব্যাগও এসময় নামানো হয় গাড়ি থেকে।

বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এসময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে; তবে পুলিশের বাধার কারণে তারা দলীয় নেত্রীর কাছে যেতে পারেননি।

পুলিশের বাধায় আটকে বৃষ্টির মধ্যে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে খালেদার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা।

খালেদা জিয়াকে ভর্তির পর বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের কথা জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জলিল চৌধুরী ইতোমধ্যে কেবিনে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে এসেছেন।

তিনি বলেন, “কাল (রোববার) বেলা ১টার পরে মেডিকেল বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা উনার (খালেদা) চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারব।”

তবে বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন দাবি করেছেন, মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা মানা হয়নি।

এর আগে ইউনাইটেড বা বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে গত ৯ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়। এ আবেদনের ওপর শুনানি হয় মঙ্গল ও বুধবার। পরে ৪ অক্টোবর আরেক দফা শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ঘোষিত আদেশে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিএসএমএমইউতে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই তার চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এছাড়া খালেদা জিয়া তার পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোকোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। চাইলে বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে তিনি বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আনতে পারবেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্যকে অপসারণ ও সে স্থলে অন্য তিনজনকে সেখানে নিয়োগদানের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশ অনুযায়ী, সরকারগঠিত বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী ও চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলীর বদলে নতুন তিনজনকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। তবে নতুন তিন সদস্যের মধ্যে কেউ কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে সরকারসমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বর্তমান বা সাবেক সদস্য হতে পারবেন না। বোর্ডের অন্য দুই সদস্য বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ বোর্ডে বহাল থাকবেন।

খালেদার অসুস্থতার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেছিলেন, ‘তার বাঁ হাত ও বাঁ পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে। অসহ্য ব্যথা অনুভব করছেন।’

গত ৫ জুন খালেদার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছিল বলেও তাকে দেখে এসে নিজের ধারণার কথা জানিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মেডিসিনের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী।

এরপর সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানায়, খালেদা অসুস্থ হলেও তার অবস্থা গুরুতর নয়।

তাদের ভাষ্য, অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার আগে থেকেই রিউম্যাটয়েডআর্থ্রাইটিস (গেঁটে বাত) রয়েছে। সে কারণে দুই হাতে ও পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তার হৃদযন্ত্র, রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় জামিন হলেও অন্য মামলায় খালেদাকে আটকে রাখার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। রায়ের পর থেকে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এতদিন নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারটিতে একমাত্র বন্দি হিসেবে ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেখানে ছিলেন।