Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলা বাজার ২৪,রবিবার , ০৭ অক্টোবর ২০১৮:  আদালতের আদেশ অনুযায়ী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের চিকিৎসক দিয়ে সঠিক চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁর আইনজীবীরা।

আজ রোববার সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে চারজন আইনজীবী বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ‘সি’ ব্লকের কার্যালয়ে গিয়ে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুনের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান।

পরে মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার পরিচারিকাকে তাঁর সঙ্গে থাকতে দেওয়া, তাঁর পছন্দমতো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং হাসপাতালের বাইরের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার বিষয়ে আদালতের আদেশের কথা তাঁরা পরিচালককে জানিয়েছেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘গাইনোকলজিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্ট যেন খালেদা জিয়ার পছন্দমতো হয়; হাইকোর্টের রায় অনুসারে। হাইকোর্টের রায়ে আরো আছে, হাসপাতালের বাইরের কোনো চিকিৎসককে যদি খালেদা জিয়া দেখাতে চান বা পরামর্শ করতে চান, সেটাও তিনি করতে পারবেন।’

‘আমাদের উদ্বেগের কথা আমরা হাসপাতালের পরিচালককে জানিয়েছি। আমি বলব, অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে উনি বলেছেন, তিনি অবশ্যই এটা দেখবেন যে হাইকোর্টের যে আদেশ আছে, সেই আদেশ অনুযায়ী যাতে তাঁর (খালেদা জিয়ার) পছন্দমতো চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করানো যায়,’ যোগ করেন খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী।

আদালতের নির্দেশ অনুসারে গতকাল শনিবার বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাঁকে হাসপাতালের ভিআইপি ডিলাক্স ৬১১ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে। গতকালই কর্তৃপক্ষ একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে।

মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন চিকিৎসক ডা. এম এ জলিল (মেডিসিন) ও সহকারী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক (নিউমটোলিজ), অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক নকুল কুমার দত্ত (অর্থোপেডিক্স)। এর মধ্যে সজল ব্যানার্জি ঢাকার বাইরে রয়েছেন। তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত আরেকজন চিকিৎসককে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গতকালই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, আজ নতুন গঠিত মেডিকেল বোর্ড বসবে। তারপরই তাঁরা বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসার ব্যাপারে যাবতীয় বিষয় জানাবেন। সেসব বিষয় অবগত করতেই আজ দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএসএমএমইউ পরিচালক। তিনি জানান, আজ খালেদা জিয়ার ব্যবস্থাপত্র পর্যালোচনার সময় তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল-মামুনও উপস্থিত ছিলেন। মেডিকেল বোর্ড আগামীকাল সোমবার আবার বসবে।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আল হারুন জানান, আজ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেননি, শুধু আগের ব্যবস্থাপত্রগুলো দেখেছেন। সেগুলোই পর্যালোচনা করেছেন। চিকিৎসকরা আগের ব্যবস্থাপত্রই বহাল রাখার দাবি করেছেন।

পরিচালক আরো জানান, মেডিকেল বোর্ডের সদস্য সজল ব্যানার্জি ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। তাঁর পরিবর্তে ডা. তাসমিয়া পারভীনকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন। এর পর গত ৭ এপ্রিল তাঁকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেদিনই তাঁকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

কারাগারের নির্জন কক্ষে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য লিখিত আবেদন নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দুবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা করেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়টি তুলে ধরে তাঁকে দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির অনুরোধ জানান বিএনপির নেতারা।

সরকারের পক্ষ থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিবর্তে বিএসএমএমইউ অথবা সিএমএইচে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেন। এতে খালেদা জিয়ার পছন্দের চিকিৎসক ও নিরপেক্ষ চিকিৎসদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার বিষয়ে নির্দেশনা দেন আদালত।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তাঁর পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোকোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আনতে পারবেন। হাইকোর্টের এ নির্দেশনা অনুযায়ী খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণে সম্মত হন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা।