Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার ২৪, মঙ্গলবার ,০৯ অক্টোবর ২০১৮ঃ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে প্রহসনের মঞ্চে পর্দা ওঠার পর কী দৃশ্যমান হবে তা নিয়ে চারিদিকে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে মঙ্গলবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে  এ মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশিত ফরমায়েশী রায় বাস্তবায়নের জন্যই নানা কিছু করা হচ্ছে। যেমন প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল আমরা দেখলাম-সর্বোচ্চ আদালতে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত একজন মন্ত্রীকে হাইকোর্ট খালাস দিয়েছে। এই খালাস কার নির্দেশে হয়েছে সেটির জন্য বেশী লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। জনগণও তা বুঝে নিয়েছে। আগামীকাল ২১শে আগষ্ট বোমা হামলা মামলার রায়ও সরকারের ইচ্ছার বাইরে হতে পারবে কি না তা নিয়েও জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। নি¤œ আদালতের বিচারকদের ওপর প্রতিনিয়ত চাপের কারণে মানুষ এখন ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন,  বিচারিক আদালত থেকে ২১শে আগষ্টের বোমা হামলার মামলাটি নিয়ে এসে আওয়ামী লীগ নেতাকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যেভাবে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে সেদিনই মানুষের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে তারেক রহমানকে ফাঁসাতেই সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে মামলার সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আবার যাকে ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল, যদিও সে পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং পুরো মামলায় আর কোন সাক্ষী বলেনি যে, তারেক রহমান এই মামলায় জড়িত। এই মামলা নিষ্পত্তির আগে মুফতি হান্নানকে কেন ফাঁসি দেয়া হয়েছিল সেটি নিয়েও জনমনে এখনও সংশয় রয়েছে। সুতরাং এই মামলায় নির্দোষ জনাব তারেক রহমানকে জড়ানোর ঘটনাপঞ্জী প্রতিহিংসা পূরণেরই নগ্ন বহি:প্রকাশ।
এর আগে পূর্বানুমতি নিয়ে ২৩-০৬-২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একই ভেন্যুতে সমাবেশ হয়েছিল, যা ছিল সুষ্ঠু ও শান্তিপূণ। কিন্তু কেন পুলিশের পূর্বানুমতি ছাড়াই মুক্তাঙ্গন থেকে ২১শে আগষ্টের সমাবেশের স্থান ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিন্যু আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে স্থানান্তর করা হলো ? এটির কোন ব্যাখা আওয়ামী নেতারা আজও দেয়নি। ২১শে আগষ্টের বোমা হামলা সম্পূর্ণ রহস্যঘেরা, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা।
অবস্থা পর্যালোচনা ও এতদ্ বিষয়ক অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে, মর্মান্তিক ঐ ঘটনা সংঘটিত হতে পেরেছিল শুধুমাত্র রহস্যজনক কারনে নিরাপত্তা প্রদানকারী পুলিশকে যথেষ্ট সময় পূর্বে না জানিয়ে আকস্মিক সমাবেশ স্থল পরিবর্তন করায়।

তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বিএনপি বরাবরই জনগণের শক্তিকে অবলম্বন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী যেকোন কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। সরকারের কোন উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যই আমি নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
অতীতের মতো বর্তমান অবৈধ সরকার নানাভাবে নিজেরাই নাশকতার সৃষ্টি করে ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো পরিকল্পনা করে তা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এর দায় চাপাতে পারে। এজন্য আমি নেতাকর্মীদেরকে সতর্ক থেকে দলীয় কর্মসূচি সাফল্যমন্ডিত করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
এই ভোটারবিহীন অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গণবিরোধী কাজের জন্য সম্পূর্ণরুপে গণবিচ্ছিন্ন। সেজন্য মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র, কুটিল চক্রান্ত, অশুভ পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করছে বলেই ইতোমধ্যে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায় গায়েবী মামলায় সারাদেশ ভাসিয়ে দিয়ে গ্রেফতারের ধুম শুরু করে ক্ষমতাসীনরা। পূর্বের বিচ্ছিন্ন ধারার হামলা, মামলা এখন নিরবচ্ছিন্ন ধারায় পরিণত হয়েছে। টার্গেট বিএনপি, বিএনপি-কে ধ্বংস করতে না পারা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাই ক্ষমতায় থেকে তিনি যা করছেন তা চক্রান্তমূলক। এই চক্রান্ত গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, নাগরিক স্বাধীনতা, বিবেক, মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে। এই চক্রান্ত বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের বিরুদ্ধে। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ০৭ অক্টোবর ২০১৮, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ্ এর গ্রামের বাড়ীতে তল্লাশীর নামে তান্ডব চালিয়েছে পুলিশ। আমি পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
মাদারীপুর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান, শিবচর উপজেলা বিএনপি নেতা ইথু চৌধুরী, বাবুল মাতবর, ছাত্রদল নেতা মাহবুবুল হক হিরুসহ ৭ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গতকাল বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য শাহ নুরুল কবির শাহীন, ফুলপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, তারাকান্দা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য আনোয়ার হোসেন মিটুলকে গতরাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবী করছি।
গাজীপুরে একটু আগে কাপাসিয়া থানা বিএনপি নেতা নজরুল ইসলামকে তার বোর্ডবাজারস্থ বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ।
কিছুক্ষণ আগে মৎস্যজীবী দল নেতা নাদিমসহ কয়েকজনকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 
গত ০৩ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা জেলা শাখার নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল উদ্দিন হাশেমীকে একদল সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেছে। সন্ত্রাসীদের এই কাপুরুষোচিত ও বর্বরোচিত ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে ফয়সাল উদ্দিন হাশেমীকে হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবী করছি। নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।

তিনি বলেন,  এছাড়া গত ৬ অক্টোবর ২০১৮ রাতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আল আশরাফ মামুনের বাসায় পুলিশ তল্লাশী চালিয়ে তার নিজস্ব ল্যাপটপসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে গেছে। বাসায় ভাংচুর চালিয়েছে। আমি পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।