Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার ২৪,বৃহস্পতিবার ১১ অক্টোবর ২০১৮ঃ নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ও দুলালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি থেকে আইন ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে অবৈধ পন্থায় পুকুর থেকে বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, মৃত্যুফাঁদ তৈরী হচ্ছে জনগণের। সুবিধা ভোগ করছে সুবিধাবাদীরা রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নীরব্ ভূমিকায় ।

বালু উত্তোলনের ফলে গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তা ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে গেছে, ঘর-বাড়ি, রাস্তা ও ফসলি জমি পুকুরগর্ভে বিলীন হচ্ছে। দৈনিক শত শত ট্রাক ও ট্র্যাক্টর ভর্তি বালু চলে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।  জমি থেকে বালু উত্তোলনের বিধান না থাকলেও বালু উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে। এতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ড্রেজার ধ্বংস, নগদ জরিমানা করা সত্ত্বেও তাদেরকে  দমানো যাচ্ছে না।

বালু  খেকোরা  প্রশাসনের চেয়ে বেশি শ্বক্তিশালি নাকি জনমনে প্রশ্ন? বছরের পর বছর দিন রাত বালু উত্তোলন চলমান থাকলে ও প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ কিংবা হস্তক্ষেপ না থাকার ফলে ঐ সকল একলাকায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব লেগেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। নিজেদের বাব দাদার পৈত্রিক ভিটে বাড়ী, রাস্তা-ঘাট, কবর স্থান, স্কুল, মসজিদ ও মাদ্রাসা রাক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়,  মাছিমপুর ও দুলালপুর ইউনিয়নের চন্ডীবরদি, চৌঘরিয়া, শাহাবুদ্দিন বাজার সংলগ্ন মির্জাকান্দী, দুলালপুর, শিমুলতালাসহ বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলনের আধুনিক যন্ত্র ও ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে পুলিশের সহযোগীতায় ও দলীয় নেতাদের যোগসাজসে বালু উত্তোলন করছে ঐ এলাকার কিছু প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতাদের একটি সিন্ডিকেট। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে দেখানো হয় ভয়ভীতি সহ নানান মামলার হুমকি।

তাই এ সিন্ডিকেটটির বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে কথা বলতে চায় না।  অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের মাঝে সবচেয়ে আলোচিত বালু  খেকোরা  হলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও দুলালপুর হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক রমিজ উদ্দিন মাষ্টার, দুলালপুর ইউপি সদস্য তাইবুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা সোহেল ফকির, বিএনপি নেতা শরীফ সারোয়ার জুয়েল, আলম, হাবিল, শরীফ, আরমান, খোরশেদ, সুরুজ, জাকির, রজব আলী, মুন্না, জাফর আলী, মনির, ইব্রাহিম, মাজারুল, সুমন, মাছুম, মস্তফা, ফিরোজ, বিল্লাল, সাইফুল মুন্সী, রবি, সারোয়ার, মুঞ্জু, আলম, লিখন, খলিলসহ আরও অনেকেই প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রয় করছে। বালু খেকোরা জানান আমরা মাসিক চাঁদা দিয়ে বালু উত্তোলন করি আমাদের বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় রিপোর্ট ও অভিযোগ করলেও কিছুই হবে না। 

এ বিষয়ে  নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক ব্যক্তিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ফসলি জমি, আমাদের ঘর-বাড়িসহ রাস্তা-ঘাট, কবর স্থান, স্কুল, মসজিদ ও মাদ্রাসা পুকুরগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা কোন রকম ঠাই পেতে জীবনের ঝুকি নিয়ে পুকুরের পাড়ে বসবাস করছি। কিন্তু পুকুর থেকে এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পুকুরের গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে দিনদিন ভয়ংকর রুপ ধারণ করছে পুকুর। হাঠাৎ করে রাস্তা,বসতবাড়ী, পুকুরগর্ভে চলে যাচ্ছে। এখন আমরা রাস্তায় চলাচল করতেও ভয় পাই কখন জানি কোথা থেকে পুকুরগর্ভে চলে যায়। প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখার জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ ও সুধিমহল। 
সূত্রে জানা গেছে, বিগত দিনে আওয়ামলী নেতা রজিম উদ্দিন মাষ্টার এর নেতৃত্বে সকল বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নিয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করা হত। কিন্তু এখন নাকি শিবপুর থানার পুলিশ মাসিক চাঁদা নিয়ে থাকে। 

এ বিষয়ে শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, থানা পুলিশ অবৈধ বালু থেকে কোন প্রকার টাকা নেয়নি। যদি কেউ বলে থাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছে। তবে পুলিশের নামে কেউ টাকা উত্তোলন করলে সঠিক তথ্য প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

উপজেলার সুযোগ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শীলু রায়  জানান আমি শিবপুর উপজেলায় যোগদান করার পর থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ড্রেজার ধ্বংস, নগদ জরিমানা কারে তাদেরকে অর্থ দন্ড দিয়েছি। কিছু দিন পূর্বেও যারা বালু উত্তোলন করেন তারা বলেন ছিলেন এখন থেকে আর বালু উত্তোলন করবে না তারপরও যদি বালু উত্তোলন করে তাদের বিররুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।