Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলাবাজার২৪, রবিবার ২১ অক্টোবর ২০১৮ঃ ফেসবুক ও টুইটার সম্প্রতি যে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছে, তাতে হাজারো লোক কর্মসংস্থান হারিয়েছে তো বটেই, রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের স্বাধীন মত প্রকাশের সবচেয়ে কার্যকর একটা রাস্তা ক্রমেই বন্ধ হয়ে আসছে।

সম্প্রতি ফেসবুক ৮০০টির বেশি অ্যাকাউন্ট ও পেজ বন্ধ । ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অসংগত আচরণ ও ফেসবুক নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া পেজগুলোর মধ্যে অ্যান্টি-মিডিয়ার পেজও রয়েছে। বন্ধ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত এ পেজের প্রায় ২১ লাখ ৭০ হাজার ফলোয়ার ছিল।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের এ পেজ বন্ধ করার কিছুক্ষণের মধ্যে টুইটারও আমাদের অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়। টুইটার অবশ্য এ ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে আছে। তারা আমাদের সব সম্পাদকের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে দিয়েছে। স্থগিত করে দিয়েছে আমাদের দলে কাজ করা অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির অ্যাকাউন্টও। এমনকি আমাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যে অ্যাকাউন্টটি ব্যবহারই করেননি, সেটি পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। এ কাজের কোনো ব্যাখ্যা টুইটার দেয়নি। এ ছাড়া আমাদের অ্যান্টি-মিডিয়া রেডিওর অ্যাকাউন্টে কোনো পোস্ট না থাকার পরও নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আমেরিকান গণতন্ত্র রক্ষার সত্যিকার অভিপ্রায় থেকে এসব কাজ করা হয়েছে, এমন বিশ্বাস যদি আপনার মনে জায়গা করে নিয়ে থাকে, তবে আপনার জানা দরকার এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে। আমেরিকান গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপকারী কথিত রুশ চর ধরার জন্য কিংবা উসকানিমূলক বার্তার বিস্তার রোধের জন্য এ শুদ্ধি অভিযান চলছে, তা কিন্তু নয়। এসব কর্মকাণ্ডের কারণ হলো আমরা যেসব কথা বলছি, সেগুলো আপনাদের কান পর্যন্ত পৌঁছতে দিতে সরকার একেবারেই নারাজ।

এ শুদ্ধি অভিযানের পেছনে কারা আছে, সবার আগে আপনাদের সেটি জানা দরকার। ফেসবুক প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, আমেরিকার নির্বাচনগুলোয় ফেসবুকের অপব্যবহার ঠেকাতে তারা ন্যাটোর অর্থায়নে পরিচালিত আটলান্টিক কাউন্সিলের সঙ্গে কাজ করছে। আপনাদের আরো জানা দরকার, এর সঙ্গে আছে কথিত রুশ প্রচারণার মুখোশ খুলে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত প্রশ্নবিদ্ধ এক ওয়েবসাইট প্রপঅরনট।

সে যা-ই হোক, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করার কারণে আমি যদি রুশপন্থী প্রচারক হয়ে থাকি, তবে বলতে হচ্ছে, আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়; বরং আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতেই পরিবর্তনটা দরকার।

প্রপঅরনটের পেছনে কে আছে তা আমি জানি, এমন দাবি আমি করব না। তবে ২০১৬ সালের নভেম্বরে তাদের প্রতিবেদন প্রচারের আলোয় আসার সময়টা যে কৌতূহলোদ্দীপক, সেটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। ওই নভেম্বরে পেরুতে বিশ্বনেতাদের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক ফাঁকে মার্ক জাকারবার্গকে ডেকে নিয়ে ‘ভুয়া খবর’ ইস্যুটাকে গুরুত্ব দিতে বলেছিলেন। এর আগ পর্যন্ত ভুয়া খবর নিয়ে কখনোই কোনো গুরুত্ব দেননি জাকারবার্গ। এর মানে হলো, খোদ ‘ভুয়া খবর’ কোনো সমস্যা নয়। আসল সমস্যা হলো সত্যিকার খবর নিয়ে ক্ষমতাধরদের মাথাব্যথা।

পেশায় আইনজীবী হওয়ায় জীবনযাপনের জন্য আমি এসব ওয়েবসাইটে লেখালেখির ওপর নির্ভরশীল নই। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু ও সহকর্মী এখানে বিনিয়োগ করেছে। ফেসবুক ও টুইটারে ফলোয়ার তৈরির জন্য তাদের অনেক অর্থ, সময় ও শ্রম খরচ করতে হয়েছে। ফেসবুকের হোমপেজে ‘সাইন আপ’ অপশনের নিচেই লেখা আছে, আপনি সেলিব্রিটি, ব্যান্ড বা ব্যবসার জন্য পেজ খুলতে পারেন। আমার সহকর্মীরা তো ঠিক সেই কাজটাই করেছিল। অথচ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ ছাড়াই পেজগুলো বন্ধ করে দিল।

আমি এমন অনেককেই চিনি, যারা প্রাথমিক শুদ্ধি অভিযান থেকে বেঁচে যাওয়ার পর গতানুগতিক পোস্টের বাইরে অন্য কোনো পোস্ট দেওয়ার সাহস আর দেখাচ্ছে না।

এটাই শুদ্ধি অভিযানের পরিণতি কি না, তা স্পষ্ট নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী সবার ওপর নজর রাখছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কখন কার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে, সেটি কিন্তু নজরদারিতে থাকা ব্যক্তি জানে না। এর মানে হলো, আমাদের সবাইকে নিজ নিজ আচরণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে আপনাকে হয় ফেসবুক-টুইটারের দাবির কাছে মাথানত করতে হবে, অথবা আপনাকে নিষিদ্ধ হয়ে যেতে হবে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিন্নমতের আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। এ রকম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে না তুললে কোনো কিছুই করা সম্ভব হবে না।