
খোলা বাজার ২৪,শুক্রবার,৩০ নভেম্বর ২০১৮ঃ দেশে প্রথমবার কারাগারে বালিশ দেওয়া হলো বন্দিদের। এ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, কারা ইতিহাসে দেশে প্রথম বন্দিদের মাঝে বালিশ বিতরণ করা হলো। এত দিন প্রত্যেক বন্দি তিনটি কম্বল পেত। যার একটি বালিশ হিসেবে ব্যবহার করত। আইজি প্রিজনস অনুষ্ঠানে বন্দিদের জন্য কয়েকটি টিভি সেটও সরবরাহ করেন।
তিনি বলেন, শিগগিরই কারাগারে বন্দিদের সকালের নাশতায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে । রুটির সঙ্গে শুকনো গুড়ের টুকরার পরিবর্তে সবজি, হালুয়া এবং খিচুড়িসহ সপ্তাহের একেক দিন একেক আইটেম নাশতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে বন্দিদের নাস্তার ব্যয় হিসেব করে আর্থিক অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি এর অনুমোদন ও বাস্তবায়ন অতি শিঘ্রই হবে।”
এখনও ব্রিটিশ আমলের আইন-কানুন অনুযায়ী দেশের কারাগারগুলো পরিচালিত হচ্ছে। কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে পরিচালিত করতে আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এজন্য নীতিমালা ও আইনের কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
“সে আইন পরিবর্তিত হচ্ছে এবং সেটার জন্য ইতিমধ্যে খসড়া নীতিমালা ও আইন লেখা হয়ে গেছে। সেটা পার্লামেন্ট থেকে অনুমোদন পেলে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারব।”
ইফতেখার আরও বলেন, স্বজনদের সঙ্গে ১৫ দিন অন্তর কারাবন্দিরা টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশে ৬৮টি কারাগারে বুথ স্থাপনের কাজ শেষ হলেই কারাবন্দিরা সে সুযোগ পাবেন।
“এছাড়া কারাবন্দিদের তৈরি করা পণ্য ও দ্রব্য বিক্রি করে যে লভ্যাংশ পাওয়া যায়, তার অর্ধেক অর্থও পারিশ্রমিক হিসেবে বন্দিদের দেওয়া হবে।”
এর আগে তিনি বন্দিদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন এবং কারাগার পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে এআইজি (অর্থ) সুরাইয়া আক্তার বলেন, কাশিমপুরের চারটি, নেত্রকোণা জেলা কারাগার এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ বালিশ বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে।
“এসব কারাগারে প্রাথমিকভাবে মোট ১৬ হাজার চারশ বালিশ বিতরণ করা হয়। প্রতিটি কভারযুক্ত বালিশের মূল্য পড়েছে ৪৮৬ টাকা। পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দিকে বালিশ দেওয়া হবে।”
কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ৫-৬ গুণ বেশি বন্দি: আইজি প্রিজন
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাপাইনবাবগঞ্জ,সিরাজগঞ্জসহ বেশ কিছু কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে ৫-৬ গুণ বেশি বন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন।
এসব কারাগারের পরিসর বাড়াতে হবে, না হলে নতুন কারাগার বানাতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
কাশিমপুর কারাগারে বন্দিদের মাঝে বালিশ বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগদানশেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
কারাগারের সার্ভিসের উন্নতি করতে হলে কারাগারের কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধির কথাও বলেন তিনি।
“একেকটা কারাগারে মাত্র দুইজন কর্মকর্তা কাজ করে থাকেন। লোকবলের অভাবে কোনো কোনো কারাগারে একজন কর্মকর্তাও কাজ করছেন। একজনের পক্ষে সবদিকে সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য বিষয়। কারাগারে কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি করলে তারা হয়ত আরও ভালো পারফর্ম করতে পারবে।”
আইজিপি বলেন, “চিকিৎসা সার্ভিসে আমরা প্রায় ব্যর্থই বলব। কারণ চিকিৎসার জন্য যে মেডিকেল অফিসার দরকার তা আমাদের নেই। দেশের ৬৮টি কারাগারে মাত্র ৮জন চিকিৎসক (বদলীকৃত) আছেন। আর মাত্র ১১টি অ্যাম্বুলেন্স আছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাটাকে অনেক বেশি ইমপ্রুভ করতে হবে।”