Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খােলাবাজার২৪,বৃহস্পতিবার,১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা তৃতীয় কোনো শক্তির উত্থানের আলামত কি না -তা খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।


বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে আইনশৃঙ্খলা  রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে  অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, গত দুই দিন ধরে নির্বাচনী প্রচারে সহিংসতার ঘটনা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তির পাঁয়তারা কি-না খতিয়ে দেখতে হবে।

সিইসি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ২০১৪ সালে একটা ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল সে অবস্থার আলোকে আমাদের এ বছরের নির্বাচনের প্রস্তুতির রূপরেখা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ছিল-তবুও আমরা দেখেছি পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে, প্রিজাইডিং অফিসার নিহত হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছে, শত শত মানুষ নিহত হয়েছে, শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, সেটা কী প্রেক্ষিতে হয়েছিল, সেটা আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, সে প্রসঙ্গ আলোচনা করার প্রয়োজন আমি মনে করি না। সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে, ভুলে গেলে চলবে না। সে অবস্থা থেকে কীভাবে উত্তরণ করা যায়, সে অবস্থার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেই পরিবেশ পরিস্থিতির সৃষ্টি যাতে না হয়, সেদিকে সতর্কতার সাথে দৃষ্টি রাখতে হবে।

এবারের নির্বাচনে আপনাদের দায়িত্ব জনগণের জীবন রক্ষা, মালামাল রক্ষা, দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত রাখা।

প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল শতকরা ৯৫ ভাহের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। কেবলমাত্র ব্যালট পেপার ছাপানোর মতো টুকিটাকি কাজ বাকি আছে। ভোটকেন্দ্র নির্ধারিত হয়েছে, ভোটারদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আমি প্রত্যাশা করব, পেশাদারি ও নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা ও মানসিকতা নিয়ে এবারের নির্বাচন মোকাবিলা করতে পারব। এবারে যেন সেবারের মতো তাণ্ডব না ঘটে, সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা কিন্তু আশঙ্কাগুলো একেবারে অবহেলা করতে পারি না। প্রতীক বরাদ্দের পরদিনই যে ঘটনা, তা যতো তুচ্ছ হোক না কেন-দুটো জীবনের মূল্য অনেক। এখানে-ওখানে ভাঙচুর প্রতিহত করা–এগুলোর পেছনে কী শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ নাকি ২০১৪ সালের মত ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে কি না-সেটিতে নজর নিতে হবে।

কে এম নূরুল হুদা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্ক নজরদারি রাখতে হবে। একটা ঘটনা হালকাভাবে দেখলে চলবে না। দোষ চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতির খোলস থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন হবে। নিভৃত শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না-তা খতিয়ে দেখতে হবে। নির্বাচন নিয়ে যখন স্বতঃফূর্ত গণজাগরণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তখন খুনের ঘটনা, হামলার ঘটনা-বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।

সিইসি আরো বলেন, এদেশে স্বাভাবিক সামাজিক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা হোক-তা না চাইতে প্রভাবশালী মহল সক্রিয় থাকতেই পারে। তাদের বিষয়ে সকলের সচেতন থাকা প্রয়োজন।

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহার করতে চাই কেননা মাস্তানদের হাতে ভোটারদের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বাক্স ছিনতাইকারীর হাত থেকে ভোটারদের মুক্তি দিতে হবে। তার প্রধান ও প্রথম উপায় যে পদ্ধতিতে ভোট চলছে, তার পরিবর্তে আরেকটি পদ্ধতি আনতে হবে।

নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করে ইভিএম এর বিকল্প পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ভোটারদের নিশ্চয়তা প্রদান সম্ভব হবে। ইভিএম সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে শতকরা ৮০ ভাগ অনিয়ম দূর করা সম্ভব হবে। সমগ্র নির্বাচন ইভিএমের অধীনে নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। এটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কারণ বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের অনিয়ম দূর করতে এটাই একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম বলে আমি মনে করি।

পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সব বাহিনীর কৌশল অবলম্বন করতে হবে। সব গোয়েন্দা সংস্থার সতর্ক নজরদারি বাড়াতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিজিবিকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিশ্চয়তা, তাদের দিকে নজর রাখবেন। নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আলাদাভাবে দেখতে হবে। যেন তারা ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে। প্রত্যেক এলাকার মাস্তান ও গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের তালিকা তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, ভোটের ভাগ্য সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে আটক করতে হবে। প্রয়োজনে ২০১৪ সালের অবস্থা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ছক তৈরি করতে হবে। বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।

এ সময় হয়রানিমূলক কিছু না করার অনুরোধ জানান সিইসি।