খােলাবাজার২৪, রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮: বাসযোগ্য, উন্নয়নমুখী ও মানবিক সমাজ গঠন, সকল সেবা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত করার প্রত্যাশায় রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর কাছে আরও উদারতা ও সহনশীলতা চায় তরুণ প্রজন্ম। তাদের প্রত্যাশা, সহিংসতার পথ পরিহারের পাশাপাশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠলে মুক্তিযোদ্ধাদের লালিত স্বপ্ন অনুযায়ী স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে যাবে দ্বারে দ্বারে।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে (রোববার) এমন প্রত্যাশার কথাই বললেন তরুণ প্রজন্মের কয়েকজন প্রতিনিধি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বর্তমান সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন তারা। বলেন দেশ নিয়ে নিজেদের স্বপ্নের কথাও।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী শারীফ অনির্বাণ বলছিলেন, ‘সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকে আমি বাংলাদেশের রাজনীতির একটি ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখছি। কেননা আমরা জানি আমাদের দেশের রাজনীতি প্রতিহিংসার রাজনীতি। সেখানে একটা সমাধানের জন্য যে সকলে এসেছে, এটা ক্ষমতাসীন দলের যেমন উদারতা, তেমনি তথাকথিত বিরোধীদলের সহনশীলতাও বলতে পারেন। আমি মনে করি যে এর মধ্য দিয়ে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে পারে।’
ভোটে জিতে যে দলই সরকারে আসুক, তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল আলম। তার কথা, ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বড় উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিগুলোর বাস্তবায়নের উপরেও জোর দেওয়া জরুরি। বেকারত্ব দূরীকরণ এবং নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধসহ সাধারণ জনগণকে ব্যক্তিগত রোষানলের বাইরেও রাখতে হবে রাজনীতিকদের।’
তরুণ নির্মাতা মাহফুজ হক প্রিন্স অবশ্য তারুণ্য নিয়ে ভাবতে বলেন রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। তিনি বলেন, ‘আমরা তরুণ সমাজ সবসময় চাই দেশের উন্নয়ন হোক। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মানবিক ঢাকা, বাসযোগ্য শহর, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধার দরজা খোলা রাখা এবং দুর্নীতি ও সব জনসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিমুক্ত করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মনিরুল ইসলাম মনে করেন, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো, বেকারদের কর্মসংস্থান, বিনা উৎকোচে চাকরির ব্যবস্থা, কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকিপূর্বক আধুনিক যন্ত্রপাতির সংমিশ্রণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হস্তক্ষেপ না করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। এ বিষয়গুলোর ওপর নজর দিলেই দেশের মঙ্গল হবে বলে বিশ্বাস মনিরুলের।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ্জোহারা বলেন, এমন হয় যে, সরকার নতুন দল আসার পর রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে তারা তাদের মতো করে ঢেলে সাজাতে চান। ফলে এতেই কেটে যায় অনেকটা সময়। আবার বিভিন্ন কারণে নতুন সরকার আসার কারণে বন্ধ হয়ে যায় আগের সরকারে চলতে থাকা উন্নয়নমূলক কাজগুলো। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ জনগণকেই।
তবে রাজনৈতিক সব পক্ষেরই উচিত, সরকার বদলালেও যেন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধারাবাহিক থাকে, সেটা নিশ্চিত করা- বলেন ফাতেমা।
শামস আল তামাস সান বলেন, নাগরিকবান্ধব গণতান্ত্রিক সমাজে অপরাধীরা যেনো কখনোই পার না পায় সুপারিশ অথবা দলীয় পরিচয়ে। তেমনি চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে ঘুষ এবং লবিংমুক্ত। শিক্ষা হবে বাস্তবসম্মত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হবে ন্যায় ও কর্তব্যপরায়ণ। তারা হবে জনগণের- কোনো দলের না। থাকবে না নৈরাজ্য, হিংসা। জনগণের থাকবে সঠিক মতপ্রকাশের অধিকার। তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নতি এমনিতেই হবে।