খােলাবাজার২৪,শনিবার,২২ ডিসেম্বর,২০১৮ঃআসন্ন সংসদ নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ না দিলে দেশে মহাসঙ্কটের সৃষ্টি হবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরানা পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি করেন।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে কামাল হোসেন বলেন, ‘আর মাত্র ৭ দিন সময় আছে। এর মধ্যে বিরোধীদলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ করুন। প্রচার-প্রচারণার সমান সুযোগ দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। তা না করে ভাওতাবাজির নির্বাচন করলে কেউ মেনে নেবে না। জনগণ স্বীকৃতি দেবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ২১ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা-৪ থেকে ঢাকা-১৮ আসনের প্রতিটিতে একই সময়ে ধানের শীষের পক্ষে জনসভা ও গণমিছিল করার কর্মসূচির ঘোষণা দেন। আর ২৭ ডিসেম্বর বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্বাচনী জনসভা করার কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও নেতাকর্মীদের হয়রানির লিখিত তথ্য তুলে ধরা হয়। ড. কামাল হোসেনের পক্ষে এ লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক।
পরে কামাল হোসেন বলেন, ‘যে তথ্যগুলো দেয়া হয়েছে, তা সত্যিই নজিরবিহীন। আমি ৪০/৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের নির্বাচন দেখছি। কিন্তু, কোনো দিন এমন চিত্র দেখিনি। এটা স্পষ্ট পুলিশ বাহিনী কারও আদেশিত হয়ে এসব অভিযান চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন মানে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেখানে সরকারি দলের লোক থাকে। বিরোধী দলের লোক থাকে। যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের ভোটারদের কাছে যেতে হয়। আবেদন করতে হয়। কিন্তু, আর ৭ দিন পর ভোটের কি অবস্থা হবে, তা সবাই বুঝতে পারছে। আমাদের প্রার্থীদের পুলিশের বিরুদ্ধে কী প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে, তা নজিরবিহীন।’
ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা বলেন, ‘৫০ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, যারা ভোট চাইতে যাচ্ছে, তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে পুলিশ নামিয়ে দেয়া, সরকারি দলের আক্রমণ, আগে কখনো হয়নি। যেভাবে নির্বাচনী পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে, এটা কল্পনাও করা যায় না। এসব অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে সংবিধান লঙ্ঘন করার অপরাধ হবে। সংবিধানকে ভঙ্গ করার অপরাধ হবে। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, নির্বাচনের আগে কিছুতো হবেই। তবে এই অবস্থা দেখতে হবে, তা কখনো ভাবিনি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আর ৭ দিন আছে। এসব যেন অবিলম্বে বন্ধ করা হয়। এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই যেন সরকার এগুলো বন্ধ করে। নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেয়।’
সরকারের উদ্দেশ্যে কামাল হোসেন বলেন, ‘মাথা ঠিক করেন। মাথা ঠাণ্ডা করেন। মাথা সুস্থ করেন। ইলেকশনে জিততে হবে। তাই বলে এভাবে ভাওতাবাজি করে না। এটাকে জেতা বলে না। মানুষের সঙ্গে ভাওতাবাজি করে, ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে নির্বাচনে জেতা সত্যিকারে জেতা নয়। এই সরকার ইতোপূর্বের সব স্বৈরাচারী সরকারকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই আপনাদের ভালভাবে বলছি— আর মাত্র ৭ দিন আছে। এসব বন্ধ করুন। বন্ধ না হলে জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না।’
তিনি বলেন, ‘ভোটবাক্স দখল করে নির্বাচনে জয়লাভ করলে জনগণ সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না। স্বীকৃতি না দিলে এই বিজয়ের কোনো অর্থ হয় না। অর্থহীন বিজয়ের চেয়ে বিজয়ী না হওয়া অনেক ভালো। আমি অনুরোধ করব, নির্বাচন হতে দেন।’
গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘এদেশের মানুষ সচেতন। তারা চায় অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন। এই দেশের মানুষ বহু মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সুতরাং স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, এটা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। এই নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ৪৭ বছর পরে সংবাদ সম্মেলনে আজ কথা বলতে হবে, এর চেয়ে আমার দুঃখের বিষয় নেই।’
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কর্মকাণ্ডে আমি অবাক হয়েছি। সংবিধান লেখার সময় পুলিশের ভূমিকা লেখা হয়েছিল ‘নিরপেক্ষ’। পুলিশ কোনো দল কিংবা রাষ্ট্রের হবে না। তবে এখনকার পুলিশ কাউকে বিরোধীদলীয় মনে করলেই ধরে ফেলে, অর্থাৎ সংবিধানে যে নিরপেক্ষ শব্দটি লেখা আছে, তার ষোল আনা পরিপন্থী কাজ করছে পুলিশ।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রহসন বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। তা না হলে দেশে সঙ্কটময় পরিস্থিতি তৈরি হবে। এখনও সামনে ৭ দিন আছে। এই সময়ের মধ্যে বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধ করে প্রচার-প্রচারণার সমান সুযোগ দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন।’
তিনি বলেন, ‘তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে দাবি করবেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। দয়া করে মিথ্যাচারের এ খেলা বন্ধ করুন। এটা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। জনগণ দেশের ক্ষমতার মালিক। তাদের ভোট দিতে না দেয়া স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এই আঘাত মেনে নেয়া যায় না।’