Sun. Apr 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪, রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ :যে কোন কাজ স্বাভাবিকের চেয়ে বিচ্যুত ঘটলে যা হয় তা অন্যরকম। বর্তমানে বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়। এই সময় প্রচার-প্রচারণায় মূখর থাকবে সকল প্রার্থী এটাই স্বাভাবিক। তার চেয়েও বড় স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ সকল প্রশাসন ও সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান থাকবে এক্কেবারে নিরপেক্ষ- পক্ষপাতহীন ও প্রভাবমুক্ত। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে এই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একটু দৃষ্টি দিলেই কি দেখা যায় তা পাঠকগণ উপলব্ধি করতে পারবেন ?


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১০ ডিসেম্বর ছিল প্রতীক বরাদ্দ এবং এরপর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু…..। কিন্তু কি দেখা গেল প্রতীক বরাদ্দের প্রথম দিন থেকেই সারাদেশেই বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর পুলিশি হামলা, গুলি ও লাঠিচার্জ চলছে অবিরতভাবে। আর অন্যদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আওয়ামীলীগদের মিছিল চলছে। পুলিশ তাদের কিছুই করেননি। নির্বাচনী প্রচারণায় সেনাবাহিনী নামানোর কথা ছিল ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এক ঘোষণায় বলা হয় সেনাবাহিনী নামবে ২৪ ডিসেম্বর থেকে। ২৪ ডিসেন্বর থেকে কি আসলেই সেনাবাহিনী নামবে ? এটা জনমনের ভাবনার বিষয় ? ১৫ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী না নামানো এবং পেছানোর ফলে আওয়ামী বাহিনী যেনো আরো বেপরোয়া হয়েছে।

স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় নোয়াখালী ১ আসনের বিএনপি’র প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে। সোনাইমুড়ীতে গণসংযোগ চলাকালে সেখানকার ওসির গুলিতেই তিনি গুলিবিদ্ধ বা আহত হয়েছেন ? 


ঢাকা ৮ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় সেগুনবাগিচায় বিএনপি প্রার্থী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের উপর আওয়ামীরা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। পুলিশ সেখানে কোন ভূমিকায় পালন করেননি। ঢাকা-৯ আসনে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা আব্বাস নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী সন্ত্রসীরা পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলা চালালে-পুলিশ আওয়ামী ক্যাডারদের গ্রেফতার না করিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। এতে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে যে, পুলিশের দ্বায়িত্ব কি আওয়ামীলীগের রক্ষক আর বিএনপি’র ভক্ষক হিসেবে থাকা। 


নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে-ততই যেনো বিএনপি’র প্রার্থীতা বাতিল আর স্থগিত বাড়তেছে। গণতন্ত্রের প্রধাননেত্রী গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি আসনেই প্রার্থীতা বাতিল করে দিয়েছেন কোর্ট। আর এই কোর্ট যে কার ইশারায় চলে তা জনগণ বুঝে ফেলেছেন আর বুঝাতে হবে না। এ যাবত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে ৮ জনের। হয়তো আরো হতে পারে..। অথচ আওয়ামীলীগের প্রার্থী দেশের বাহিরে অবস্থান করলেও, কথা ঠিকমতো বলতে না পারলেও প্রার্থীতার কিছুই হয় না। কোর্ট বুঝি কোন গ্রহের বাসিন্দা যে তারা শুধু বেছে বেছে বিএনপি প্রার্থীদেরই প্রার্থীতা বাতিল করে-নাকি কোর্ট কোন জাদুকরের জাদুতে, কার বা কোন ইশারায়, কোন অদৃশ্য শক্তির বলে বলীয়ান হয়ে শুধু ধানের শীষ প্রতীকেরই প্রার্থীতা বাতিল করে। এখন পর্যন্ত ভূল করেও শোনা যায় নি যে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল হয়েছে।

প্রার্থীতা বাতিল করাই যেনো শুধু শেষ নয়। বিএনপি’রা কোথাও পোস্টার লাগাতে গেলে পুলিশেরা বা আওয়ামীরা অস্ত্রসহ ধাওয়া করে এবং ধরে নিয়ে যায় বিএনপি কর্মীদের। পোস্টার লাগাতে দেয় না। আওয়ামীদের অস্ত্রসহ ধাওয়া যেনো পুলিশ দেখতে পাননা অথবা দেখেই না দেখার ভান করেন। তখন যেনো তাদের সন্ত্রাসী মনে হয় না বা নাশকতা দেখতে পান না। আর বিএনপি নাম শুনলেই যেনো তারা নাশকতার কল্পকাহিনীর গল্প বানাতে পারেন।

আর এহেন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন কতোটা বেলজ্জা, সরকারের একান্ত অনুগ্রহ আজ্ঞাবহ ক্রীতদাস হলে বেশরমে মতো বলতে পারে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠ, কোথাও কিছু হচ্ছে না। বিএনপি নেতারা অনিয়ম অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গেলে নির্বাচন কমিশন শুনে আর অভিযোগ নেয় এরপর আর কিছুই করেন না। যেনা ঢোরা শাপ-খাবে দাবে কিছুই করবে না কিন্তু কামড় দিলে হয়তো রক্ষা নাই। নির্বাচন কমিশন যেনো তাই অভিযোগ নিবে আর শুনবে এতে আওয়ামীদের বিজয় আনতে যতো অনিয়ম আর হামলা-মামলা, ভোট চুরি-ডাকাতি, মিথ্যা বলাসহ যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই করবেন বা করতে সহায়তা করবেন আর বিএনপিদের নিপীড়ন করবেন-যা ঢোরা শাপের কামড়ের মতো।

পুলিশ তথা আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও আওয়ামীদের  এ হামলা বা গুম হওয়ার আশংকা থেকে রেহায় পাননি বিএনপি’র মনোনয়ন পাওয়া মহিলা প্রার্থী-কর্মী বা সেলিবেট্রিও (তারকারাও)। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কক্সবাজার-১ আসনে হাসিনা আহমদ নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন। নাটোরে বিএনপি প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। আওয়ামী ক্যাডাররা তার বাসার সামনে দিয়ে মোটর সাইকেলে স্লোগান দিয়ে দিয়ে যায়, পুলিশ কিছুই করেন না বরং তাকে অনেকটাই অঘোষিত গৃহবন্দী করে রেখেছেন। সিরাজগঞ্জে বিএনপি’র প্রার্থী রুমানা মাহমুদ পুলিশের ও আওয়ামী ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছেন এবং সেই সাথে সেখানকার বিএনপি কর্মী মেরিনা বেগম মধ্যযুগের ‘আইয়্যামে জাহেলিয়া’ যুগের মতো পুলিশি বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার নির্মম শিকার হয়েছেন। পুলিশ তার দুইটি চোখেই গুলি করে নষ্ট করে দিয়েছেন-যা তিনি নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজে বলছেন। ভাবা যায় এটা কোন গণতন্ত্রের লক্ষণ যেখানে বিরোধী দল প্রচারণা চালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন এবং পুলিশের গুলিতেই দুইটি চোখ হারিয়েছেন।
আমাদের এই বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের লেবাস ধরে যেন চলছে ক্ষমতাসীনদের ও তাদের তৈরি প্রশাসন দিয়ে দুরভিস্বন্ধিমূলকভাবে নির্মম-নিষ্ঠুর অত্যাচার-নির্যাতনের এক যজ্ঞ। আরো একটা উদাহরণে পাঠকগণ পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপা। রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন-দ্বয়ের পরেই যার স্থান। বাংলাদেশের এমন কোন মানুষ নেই যে তার গান শুনেন নি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের ক্ষেত্রে তিনি যেনো মধ্যমনি। ব্যক্তি জীবন, শিল্পী জীবন, রাজনৈতিক জীবন সব জীবনেই তিনি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন মনের ও জীবনের অধিকারী। দুই ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে সুখের সংসার তার। জনসেবার জন্য এবার তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। অথচ তিনি নির্বাচনী প্রচারণা ঠিকভাবে চালাতে পারছেন না। থাকতেছেন ভয় আর আতংকের মাঝে। নিজেকে গুম হওয়ার আশংকায় ভূগছেন। সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যটন মডেলে গিয়ে তিনি এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলছেন, ‘কালো কাচের একটি গাড়ী তার গাড়ীর পিছনে পিছনে আসে এবং এক পর্যায়ে প্রায় ধরে ফেলে তখন কনকচাঁপা তার ড্রাইভারকে বলেন অন্যদিকে গাড়ী নিয়ে যেতে। প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী বিএনপি প্রার্থী কনকচাঁপা সর্বদা গুমের আশংকা করছেন। তিনি বলছেন, তিনি তো অন্য কারো মার্কায় ভোট দিতে নিষেধ করেননি; তিনি নিজের প্রতীক ধানের শীষে শুধু ভোট চেয়েছেন। এতে যদি তার মরণ হয় তাহলে যেনো যমুনার তীরে তাকে দাফন করা হয়। 

………….পাঠকবৃন্দ উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারতেছেন নিশ্চয় বাংলাদেশে এই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ সর্ম্পকে। এখানে যেনো চলছে এক অন্যরকম প্রচারণা। একদল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্র ছায়ায় সব করতেছে অর অন্য দলের লোকজন ঘরের মধ্যেই থাকতে পারতেছেন না-তাদের ভাগ্যে জেল-জুলুম, রিমান্ড, অত্যাচার-নির্যাতন, নিপীড়ন জুটতেছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন ক্যাডারদের দ্বারা।  
স্বচ্ছ, সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ, উৎসবমূখর কোন নির্বাচনী পরিবেশ বাংলাদেশে আছে কি ? যেখানে জনগণের সেবক পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের অর্থাৎ আওয়ামী ক্যাডারদের আক্রমণ দ্বারা প্রতিপক্ষের চোখে গুলি করে নষ্ঠ করা হচ্ছে-সেখানে কেমন নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আওয়ামী ক্যাডাররা যখন সশস্ত্র হামলা করে তখন কোন নাশকতা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর চোখে পরে না। অথচ বিএনপি’র নেতা-কর্মী হলে ঘর থেকে ঘুমন্ত মানুষ ধরে এনে মামলা না থাকলেও দেওয়া হয় নাশকতার মামলা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দ্বারা। আইন-শৃঙ্খলায় বিশে^র মধ্যে শ্রেষ্ঠ পক্ষপাতিত্ত্বের দৃষ্টান্ত মনে হয় এখন হচ্ছে আমাদের এই দেশে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়; মামলা না থাকা সত্ত্বেও ধরে নিয়ে গিয়ে পেন্ডিং মামলা দেওয়া হয়। রিমান্ডে নিয়ে জেলে দেওয়া হয়। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধরে ধরে জেলে নেওয়াই যেনো পুলিশের কাজ। কোথাও কি কখনো শোনা গেছে-আওয়ামীলীগদের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে-জেলে দিয়েছে। তারা অপরাধ করলেও যেনো পুলিশ ধরে না। আর বিএনপিদের কিছুই করতে হয় না-জেলে থাকতে হয়। এই সময়ে এমন গণতান্ত্রিক দেশ বিশে^র কোথাও আর দ্বিতীয়টি নেই। 

কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এতো বোকা না। তারা বুঝতে পারছেন-আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ আওয়ামী ক্যাডাররাই ধানের শীষের প্রতীক টানাতে দিচ্ছেন না। প্রচারণা চালাতে দিচ্ছেন না। পুলিশের সহায়তায় আবার যৌথভাবে তারা ধানের শীষের নেতা-কর্মীদের উপর আক্রমন করছেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েও পড়ছে। এসব ঘটনায় ধানের শীষের প্রতীক টানানো না হলেও যেনো মানুষের বা ভোটারদের মনে ধানের শীষ ঠিকই ঠাঁই পেয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে কেন ধানের শীষের প্রতীক টানানো নেই ? কেন ধানের শীষের প্রার্থীরা-কর্মীরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না। তারা ৩০ ডিসেম্বর ঠিকই সিদ্ধান্ত নিবেন কোন প্রতীকে ছিল মারতে হবে এবং সেই নির্বাচনের সঠিক হিসাব ও সঠিক প্রকাশের জন্য হয়তো ভোটার বা জনগণই প্রস্তুত থাকবে সেদিন। 

মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট