খােলাবাজার২৪,সোমবার,২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ঃ ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা-গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে সরকারি দলের উদ্দেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘যারা বলে দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে আমি বলি তোমাদের মাথা বিভক্ত হয়ে গেছে। হুমকি দাও, তোমাদের হুমকিতে ভীত হয়ে যাব? আসো সামনাসামনি, আমি তোমাদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি।’
টেবিল চাপড়িয়ে উচ্চস্বরে তিনি বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষকে মেরে ফেলতে পারবে না। যারা হুমকি দাও তোমরা কাপুরুষ। এভাবে যারা হামলা করে তারা তো কাপুরুষ, সাহস থাকে তো সামনে আসেন। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি- আসো সামনা-সামনি। কয় লাখ লোক মারবে? সব মানুষ মারতে পারবা না।’
সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ পেশাজীবী পরিষদের আয়োজনে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পেশাজীবীদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
যেন কেউ আর প্রজা বলতে না পারে সেই জন্য ৩০ তারিখ দেখিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘এই দেশ মানুষের মালিকানায়। কোনো রাজার মালিকানায় না। আর মাত্র ৫ দিন আছে। আপনারা ভোটের মাধ্যমে দেখিয়ে দিন- আমাদের যেন কেউ আর প্রজা বলতে না পারে। আমরা প্রজা না। আমরা নাগরিক। স্বাধীন দেশের মানুষ কেউ প্রজা না। তারা নাগরিক। নাগরিকের দায়িত্ব আছে, কর্তব্যও আছে।’
ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা ৩০ ডিসেম্বর গুনে গুনে ভোট দিয়ে আসবেন। আপনার ভোট যাতে হাইজ্যাক, জালিয়াতি করতে না পারে। অনির্বাচিতরা এখন দেশ শাসন করছে। এটা মেনে নিতে পারি না। আমাদের যে ঐক্য আছে সেটা এগিয়ে নিতে হবে। কোনো স্বৈরাচারের মালিকের হাতে দেশ দিবো না।’
আইজিপির উদ্দেশ্য করে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘বেআইনি আদেশ মানা অপরাধ। যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছেন তারা কত বড় অপরাধী?
পুলিশকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের উত্তরসূরি হিসেবে সাধারণ মানুষের ওপর কোনো হামলা করবেন না। যারা হামলার নির্দেশ দিচ্ছেন, তারা বেআইনিভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন-বেআইনি নির্দেশ মানা আপনাদের কর্তব্য নয়।
‘আমরা ভোটাধিকার হারিয়ে ফেললে সংবিধানও থাকবে না, স্বাধীনতাও থাকবে না’- মন্তব্য করে ড. কামাল বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা শহীদদের উত্তরসূরি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি। কাজেই আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো দায়িত্ব আপনাদের নেই।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও মানুষকে ভোট দিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে-এটি লজ্জার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. কামাল বলেন, ‘যারা ভোটাধিকার অস্বীকার করেছিলেন, একাত্তরে জনগণের কাছে তাদের আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। তখন অনেক ভয়ভীতি অতিক্রম করেই আমরা ভোট দিয়েছিলাম। তখনকার স্বৈরাচারী সরকার অনেক শক্তিশালী ছিল। বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের পেছনে ছিল। কিন্তু আমরা যুদ্ধ শুরু করেছিলাম নিরীহভাবে। অস্ত্র পেলাম, ট্রেনিং নিলাম, যুদ্ধ করলাম। তারপর যারা অহংকার করেছিল, তাদের ওপর যুদ্ধ জয় করেছিলাম। এখন যারা অহংকার করছেন, তাদের সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর কাছে একটাই চাওয়া জনগণ যাতে নিরাপদে ভোট দিতে পারে। যদি তারা নিরাপদে ভোট দিতে পারে তাহলে ভোট বিপ্লব ঘটে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ভাবে কতটা দেওলিয়া হলে নায়ক-নায়িকাদের নির্বাচনের প্রচারণায় নামতে পারে। পয়সা দিয়ে হলে গিয়ে সিনিমা দেখতে পারে। কিন্তু তাদের কথায় ভোট দিবে না। মমতাজ জনপ্রিয় শিল্পী কিন্তু মার্কা ছাড়া ভোটে দাঁড়ালে ৫ হাজার ভোটও পাবে না।’
বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল খান বলেন, ‘১৬ জন প্রার্থী কারাগারে আছে। ৬ জনকে তফসিল ঘোষণার পর গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ৮ জনকে অবৈধ করা হয়েছে। আর কয়েকজন অবৈধ করার কথা বলা হয়েছে। ৮টি আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী রইল না। সরকারকে এই ৮টি আসন উপহার দেয়া হলো। ১৬টি আসনে আমাদের প্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতি বেড়েছে।’
তফসিল ঘোষণা পর চার হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকশ গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান।
সেনাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি সেনাবাহিনী সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছেন। এবার আমরা দেখতে চাই, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা।’
‘প্রধানমন্ত্রী তৈরি থাকুন, ৩০ ডিসেম্বর জনগণ আপনাকে ফাইনাল খেলা দেখাবে’- মন্তব্য করে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে আমাকে বলল স্যার আরেকটু ধর্য্য ধরুন। আমরা ৩০ ডিসেম্বর ফাইনাল খেলা দেখাবো। তাই আমি বলি আমাদের দাঁত কামড়ে সহ্য করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর ভোর ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে থাকতে হবে। ভোটের হিসেব না নিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়া যাবে না।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর কারো জন্য নির্ভর না করে নিজেরা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। সবাইকে ঐক্য হয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করুন। ১৯৭১ সালে সশস্ত্র হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছি। আজকের লড়াইয়েও আমাদের জিততে হবে। পরাজিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত রাতও যেভাবে বিরোধী কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে…। এখন আমাদের শেষ আশ্রয়ের জায়গা হচ্ছে সামরিক বাহিনী, যাতে নিরপেক্ষ থাকে। তারা যদি নিরপেক্ষ থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের খবর থাকবে না।’
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল, ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর মুস্তাহিদুর রহমান, ড্যাবের সভাপতি ডা. একেএম আজিজুল হক, প্রফেসর ড. ছদরুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যপরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রমুখ।
এছাড়া সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, কাদের গণি চৌধুরীও বক্তব্য দেন। পেশাজীবী নেতা ডা. এজডেএম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।