খােলাবাজার২৪,বুধবার,২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ঃ বুধবার বিকালে বগুড়ায় নিজের নির্বাচনী এলাকায় এক জনসভায় তিনি বলেন, “আপনাদের পরিবার-পরিজন যারা ভোটার হয়েছেন, আপনাদের বন্ধু-বান্ধব যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের সবাইকে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন। ধানের শীষে ভোট দিয়ে ভোট গণনা করে বাড়িতে ফিরবেন।”
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর নির্বাচন করে আসছেন। ফৌজদারি মামলায় কারাদণ্ডের কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফখরুল।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিরোধী দলের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের পরেও সরকার মিথ্যাচার করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “গত প্রায় তিন সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই সরকার নির্বাচনকে বানচাল করবার জন্য তার সব রকম অপকর্মগুলো করছে। তারা বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, আক্রমণ করছে, তাদের প্রত্যেক দিন বিভিন্নভাবে আহত করছে। এবং সমানে মিথ্যাচার করছে। মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।”
বগুড়াবাসীর উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “এই সরকার একটি জুলুমবাজ-নির্যাতনকারী সরকার। আপনাদের প্রিয় বধূকে (খালেদা জিয়া) তারা কারাগারে আটক করে রেখেছে। আপনাদের নেত্রীকে আটক করে রেখেছে বিনা অপরাধে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিয়াত্তরের উপরে তার বয়স। তিনি ভালো মানুষ কারাগারে গেলেন এবং এখন তাকে হুইল চেয়ারে চলতে হয়।
“এই নেত্রী সেই নেত্রী। যিনি আপনাদের প্রিয় ছেলেকে হারানোর পর থেকে কোনো দিন পরিবারের দিকে তাকাননি; জনগণকে-দেশের মানুষকে তার পরিবার মনে করেছেন। সেভাবে তিনি সংগ্রাম করে গেছেন।
“কিন্তু এদেশের মানুষ কি আবার গোড়ামীতে যেতে চায়? এদেশের মানুষ কি আবার সেই আওয়ামী লীগের নির্যাতনের কবলে পড়তে চায়?”
ভোটারদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি বলেছিলাম, আমি প্রার্থী নই, প্রার্থী হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আর মাত্র তিন দিন পরে ৩০ ডিসেম্বর, সেদিন নির্ধারিত হবে, আপনাদের পুত্রবধূ আপনাদের মাঝে সসম্মানে ফিরে আসছেন কি না?
“সেদিন নির্ধারিত হবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাচ্ছে কি, মুক্তি পাচ্ছে না; বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা ফিরে আসছে কি ফিরে আসছে না?”
ফখরুল বলেন, “আজকের এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, আমরা কি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে পাব কি ফিরে পাব না। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে আমরা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারব কি পারব না।
“দেশ কি এক ব্যক্তি অথবা একটি দলের শাসনের পরিণত হবে, নাকি বহুদলের, বহু মানুষের শাসনে পরিণত হবে।”
দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় দাবি করে ফখরুল বলেন, “আজকে সারাদেশের মানুষের একটিই আকাঙ্ক্ষা, পবিবর্তন-পরিবর্তন। এই সরকারের পরিবর্তন তারা চায়। তারা আওয়ামী লীগকে সরাতে চায়।”
তিনি বলেন, “বগুড়ার মানুষ ধানের শীষের মানুষ, এই মাটি ধানের শীষের মাটি। এখান থেকেই ধানের শীষের জন্ম হয়েছে।”
নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ৩০ তারিখে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নেন বিএনপি মহাসচিব।
“আপনারাই দেশের মালিক, অন্য কেউ নয়। আপনার ভোট আপনাকে দিতেই হবে, পরিবর্তনের জন্য দিতে হবে। এবং দেশে গণতন্ত্রকে নিয়ে আসার জন্য দিতে হবে।”
ফখরুল বলেন, “এই ভোটের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, এই ভোটের মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, দেশে আইনের শাসনের মুক্তি, এই ভোটের মধ্য দিয়ে হবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।
“আমাদের অনেক ভাই চলে গেছে। আমাদের অনেক ভাই গুম হয়েছে, খুন হয়েছে গেছে। আজকে আমাদের দায়িত্ব তাদেরকে মুক্ত করা, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।”
দ্বিতীয়বারের মতো গণনা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, “৩০ ডিসেম্বর আমাদের সকলকে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ধানের শীষের ভোট দিতে হবে এবং গণনা করে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে আনতে হবে।”
বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেলের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
অন্যদের মধ্যে ফখরুলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী মাহবুবুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন বক্তব্য দেন।
জনসভা ঘিরে বগুড়া সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাজী দানেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে জড়ো হন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশের নিজেদের প্রতীকের পাকা ধান আর প্লাস্টিকের ধান প্রদর্শন করতে দেখা গেছে তাদের।