Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

 

খােলাবাজার২৪,বুধবার,২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ঃ  ঢাকায় বিএনপি প্রার্থীদের পোস্টার টানাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হলেও মূলত ধানের শীষের পোস্টারই ছাপছে না শহরের অধিকাংশ ছাপাখানা।

অনেকগুলো ছাপাখানার মালিক ও কর্মীরা বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের হুমকি ছাড়াও ঝামেলায় পড়ার ভয়ে নিজেরাই ধানের শীষের পোস্টার ছাপার কাজ নিচ্ছেন না।

বুধবার ঢাকার বাংলাবাজার, বাবুবাজার, ফকিরাপুল, নীলক্ষেতের ছাপাখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়, নতুন বছর উপলক্ষে বইসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে মুদ্রণ শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করলেও নির্বাচনী পোস্টার ছাপানোর পরিমাণ অনেকটাই কম।

এই চার জায়গার অন্তত ১০টি ছাপাখানার শ্রমিকরা জানান, তারা শুধু ‘নৌকা’ প্রতীকের পোস্টারই ছাপিয়েছেন।

এছাড়া অন্যান্য প্রতীকের পোস্টার কেউ কেউ ছাপার কথা জানালেও ধানের শীষের পোস্টার ছাপানোর কথা স্বীকার করেননি কেউ। 

 

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাবাজারের শিরিশ দাস লেনের একটি ছাপাখানার ব্যবস্থাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এইবার কেবল বরিশাল-৪ আসনের নৌকা মার্কার একজনের পোস্টার ছাপাইসি। এবার সব প্রেসে শুধু নৌকার পোস্টার। আর কারো পোস্টার নাই। ধানের শীষের পোস্টার তো নাই-ই।”

 

ধানের শীষের পোস্টার ছাপালে ‘বিপদে পড়ার ঝুঁকি আছে’ মন্তব্য করে ৩২ বছর ধরে মুদ্রণশিল্পে কাজ করা এই ব্যক্তি বলেন, “ধানের শীষের পোস্টার ছাপায়ে কি বিপদে পড়মু নাকি? প্রেসে এই চাকরির ওপর ভরসা কইরা পরিবার নিয়ে বাঁইচা আছি ভাই।

 

 

“পোস্টার ছাপাইলে চাকরিতো যাবেই, আরও কতকিছু যে হবে! দুই দিন আগে বাবুবাজারে একটা প্রেস থেইকা ধানের শীষের পোস্টার সব বাইরে ফালাই দিসে। কারা দিসে সেইটা তো বোঝেন। পুলিশও আছিল, কেউ কিছু কয় নাই। এই এলাকার কেউ নৌকা ছাড়া আর কারো পোস্টার ছাপায় না। ছাপাইলেও খুব গোপনে ছাপাইতে পারে, আমরা জানি না।”

 

তিনি জানান, এর আগের নির্বাচনগুলাতে পোস্টারের ব্যবসা জমজমাট ছিল। তবে এবার শুধু নৌকা প্রতীকের পোস্টার থাকায় ব্যবসা তেমন হয়নি। এবার নির্বাচনের জন্য ব্যবসা কিছুটা বাড়লেও এখন তাদের মূল ব্যবসা হচ্ছে নতুন বছর উপলক্ষে বই ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছাপানোতে। 

 

ফকিরাপুলের আলভী প্রিন্টার্সে গিয়ে কর্মীদের কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। নোমান নামে দোকানের এক কর্মচারী জানান, এবার তারা ‘ভালোই’ নির্বাচনের কাজ পেয়েছেন।

 

কার কার পোস্টার-লিফলেট ছাপিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলতে রাজি হননি। ছাপাখানার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, মেশিনে তখনও নৌকার প্রর্থী শিরীন আখতারের পোস্টারের কাজ চলছে ।

বাংলা গ্রাফিকসের মালিক মনির মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিগত বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা নাই বললেই চলে। রাজনৈতিক কারণেই এমনটা হচ্ছে।”

কার কার পোস্টারের কাজ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি শুধুমাত্র মাশরাফির পোস্টারটাই করেছি।”

বাংলাদেশ ওয়ান ডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজের এলাকা নড়াইল-২ আসনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

 

বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে ধানের শীষের পোস্টার ছাপানোতে বাধার অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আরামবাগ এলাকায় কিছু প্রেস থেকে পোস্টার নিয়ে যাওয়া হইসে এবং নিষেধ করা হইসে। সে কারণে বিরোধী দলের পোস্টার ছাপা হচ্ছে না। কারা নিষেধ করসে তাদের আমরা চিনি না। আমরা ছাপছি না, কারণ আমরা কাগজ-টাগজ কিনে যদি ডেলিভারি করতে না পারি তাহলে বিল পাব না।

 

“আমরা এ বছর আশা করসিলাম, পুরা দেশে নির্বাচন উপলক্ষে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার কাজ করব, আমরা আশানুরূপ কাজটা করতে পারি নাই। আমাদের ছোট মাঝারি প্রেসগুলো এই কাজ করে থাকে। তাদের জন্য বেনিফিট হইত, বাট লাক ফেভার করে নাই।”

তিনি বলেন, “ফকিরাপুল আরামবাগ থেকে আমাদের সমিতিতে অনেকেই অভিযোগ করসে, আমরা পোস্টারের কাজ করতে পারতেসি না, কিছু পোস্টার নিয়ে যাওয়া হইসে, ভ্যানসুদ্ধ লাপাত্তা হইসে। তাই ভয়ে কেউ আর করতেসে না”  

 

পোস্টার ছাপানোয় ‘বাধা’ দেওয়ায় অসন্তোষ জানিয়েছেন বাংলাবাজারের ‘শিকদার প্রেস’র মালিক ও জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর শিকদার লোটন।

 

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার তো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে না। ওই স্বাভাবিক অবস্থাটা নাই এখন। এখানে ধানের শীষের বা ঐক্যফ্রন্টের যে পোস্টার ছাপার কথা, সেটা তো আমরা পর্যাপ্ত দেখছি না।

“কেউ ভয়ে ছাপছে না, কোন কোন প্রেস ছাপতে সাহস পায় না। একাত্তরের আগের মতো অবস্থা আর কি। মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে যে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হত সে রকম একটা অবস্থা, মানুষ ভয়ে আছে।”

ঢাকা-৬ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদের পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়া লোটন বলেন, “প্রেসওয়ালারা এখন কারো পোস্টারই ছাপতে চায় না। অনেকেই আছে ধানের শীষ করে কিন্তু ধানের শীষের পোস্টার করে না, ভাবে যে আবার কোন বিপদে পড়ি। তাও নির্বাচন হচ্ছে, ডেমোক্রেসির চর্চা হচ্ছে। তবে এরকম নির্বাচনের চেয়ে আরেকটু স্বাভাবিক হলে ভালো হত।” 

 

আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবারের পোস্টারের ব্যবসা কেমন জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাবেক এই সভাপতি বলেন, “আগে আমরা প্রেসের সামনে ব্যানার লাগাইতাম ‘এখানে পোস্টার করা হয়’, দেখসেন এবার কিছু? আগে তো ব্যবসা কইরা সেটার প্রফিট দিয়া একটা মেশিন (মুদ্রণযন্ত্র) কিনত। এখন তো আর ওইটা পাচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে এখানে এবার ব্যবসাই নাই।”

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও তাদের প্রার্থীদের পোস্টার ছাপাতে না পারার কথা জানিয়েছেন। 

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পোস্টার ছাপাতেই পারছি না আমরা। ঢাকা শহরের যে তিন-চারটা জায়গায় আমরা পোস্টার ছাপানোর ব্যবস্থা করেছি, দেখা গেছে গত পনের দিন যাবত সেখানে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দিয়ে সব পোস্টার কেড়ে নিয়ে গেছে। আমরা পোস্টার তৈরি করে সেখান থেকে আনতে পারিনি। মাঝখান দিয়ে আমাদের প্রার্থীরা অর্থ দিয়েছে ওই ছাপাখানায়, সবকিছুই ব্যর্থ।

 

“সব তো আর ঢাকায় হয় না, দেশের অন্যান্য অনেক জায়গায়ও দেখা গেছে ছাপাখানায় পোস্টার ছাপা মেশিনে উঠে নাই আর উঠলেও সেগুলো বাড়ি যায় নাই।”

আর যারা পোস্টার ছাপাতে পেরেছেন, তারা টানাতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।

রিজভী বলেন, “যেখানে যেখানে পোস্টার গেছে সেখানে যখনই আমাদের নেতাকর্মীরা রাতে টানাতে গেছে পুলিশ গিয়ে তাদের ধরে নিয়ে গেছে। এই পোস্টারের ব্যপারে আমাদের প্রায় ৩০০টা অভিযোগ এমন আছে যেগুলো আমরা ইলেকশন কমিশনকেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনোটাতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”