খােলাবাজার২৪,শুক্রবার, ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ৩০ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের ওপর হামলা, কারাগারে প্রেরণ ও টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধের মতো গণমাধ্যম স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)।
বুধবার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন পরবর্তী যুগে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাজেভাবে শুরু হয়েছে। এক সাংবাদিক গতকাল (১ জানুয়ারি, ২০১৯) গ্রেফতার হয়েছেন এবং পরের দিন (২ জানুয়ারি) আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ভুল তথ্য দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম হেদায়েত হোসেন মোল্লা। ইংরেজি দৈনিক ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ এবং নিউজপোর্টাল ‘বাংলা ট্রিবিউন’র দক্ষিণাঞ্চলের জেলা খুলনার প্রতিনিধি। নির্বাচন নিয়ে তার ‘ভুল তথ্য’ হলো, নির্বাচনী জেলায় নিবন্ধিত মোট ভোটাদের চেয়ে ২২ হাজার ৪১৯ ভোট বেশি কাস্ট হওয়ার খবর তিনি দিয়েছেন।
এই জেলারই আরেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এরপর থেকে দৈনিক ‘মানবজমিন’ পত্রিকার সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে গেছেন। গতবছরের (২০১৮) অক্টোবরে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হেদায়েত হোসেন মোল্লা ও রাশেদুল ইসলামের ১৪ বছরের জেল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এসব ঘটনা তুলে ধরে আরএসএফ’র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান ডেনিয়েল বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘তাদের (হেদায়েত ও রাশেদুল) একমাত্র অপরাধ, দায়িত্বের অংশ হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা, যেমনটি কার্যকরি গণতন্ত্রের জন্য প্রত্যেক সাংবাদিকেরই করা উচিত।’
বারংবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনে এবারের নির্বাচনের ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতাও হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি ডেনিয়েলের।
বিবৃতিতে আরএসএফ জানিয়েছে, এবার নির্বাচনের দিন একাধিক সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ইংরেজি ‘দ্য ডেইলি স্টারের’ ফটোসাংবাদিক কাজী তাহসিন অপূর্ব ঢাকায় ভোট কেন্দ্রের ছবি তুলতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়। ঢাকায় একইভাবে হামলায় আহত হয়ে দৈনিক ‘মানবজমিন’ পত্রিকার সাংবাদিক কাফি কামালকে হাসপাতালে যেতে হয়।
সম্প্রতি কারামুক্ত বিখ্যাত ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম এবং তার সহকর্মী সুমন পাল ছবি তোলার সময় হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছেন। সুমন পালকে বেদম কিল-ঘুষি মারা হয়। দৈনিক ‘মানবকণ্ঠ’র জুবায়ের রাকেশকে অন্তত ২০ কর্মী মারধর করে এবং তার ক্যামেরা কেড়ে নেয়।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আল-আমিন নামে ‘সিভয়েস টুয়েন্টিফোর ডটকম’ নামে নিউজপোর্টালের সাংবাদিককে ক্ষমতাসীন দলের অন্তত ১৫ কর্মী মারধর করেন।
নির্বাচন কমিশন অনুমোদন দিলেও ডেইলি স্টারের কমপক্ষে ৭ সাংবাদিককে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দলের পোলিং এজেন্ট ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেননি।
আরএসএফ’র বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ছাড়া হঠাৎ করেই স্বাধীনতার পক্ষের টিভি চ্যানেল বলে পরিচিত ‘যমুনা টিভি’র সম্প্রচার কেবল অপারেটররা বন্ধ করে দেয়, ২৮ ডিসেম্বর বিকেল থেকে। ভোটের চার দিন আগে একই টিভি চ্যানেল এবং তাদের গ্রুপের পত্রিকার অন্তত ৩০ সাংবাদিক ভোটের সংবাদ সংগ্রহে যে হোটেলে অবস্থান নেন, সেখানে হামলা করা হয়।
উল্লেখ্য, আরএসএফ’র বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক ২০১৮-তে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৬তম।