
খােলাবাজার২৪,বুধবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ঃ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচন ২৮ ফেব্রুয়ারি। এতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে, না নতুন কেউ আসছেন? এ নিয়ে এখন সব মহলে আলোচনা চলছে। বেশির ভাগই বলছে, আতিকুলই হচ্ছেন ঢাকা উত্তরে আনিসুল হকের উত্তসূরী।
ভিশনারী ও স্বপ্নচারী মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ঢাকা উত্তর সিটিতে উপ-নির্বাচনের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। আনিসুলের শূন্যতায় তার মতো না হলেও অন্তত কাছাকাছি যোগ্যতার কাউকে খুঁজছিল আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ সময় নিয়ে তারা তাদের প্রার্থীও খুঁজে নিয়ে দলীয় মনোনন চূড়ান্ত করে। ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয় দলটি।
কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করে। সেই বাধা কাটিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ফের নির্বাচনের তফসিল দিয়েছে কমিশন।
এক বছরের বেশি সময় পর ফের হতে যাওয়া এ নির্বাচনে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী? আতিকুলই থাকছেন পছন্দের যায়গায়, না নতুন অন্য কেউ আসছেন? এমন প্রশ্ন এখন সঙ্গত ও যুৎসই। কারণ খোদ আওয়ামী লীগ নেতারাই বলছেন, ‘পরিবর্তনের ইঙ্গিত সবখানে। ডিএনসিসিতে কী হবে নেত্রী ভালো জানেন।’
এক বছর আগে আতিকুল ইসলাম ঢাকা উত্তরের জন্য নতুন কেউ হলেও দীর্ঘ এক বছরে নিজের অবস্থান সৃদৃঢ় করেছেন এই ব্যবসায়ী নেতা। ঢাকা উত্তরের মানুষদেরকে নিজের স্বপ্বের কথা জানাতে পেরেছেন বলেও তার দাবি। আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি এই সিটির নেতাকর্মীসহ সব মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। সব মহলে নিজেকে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। আশা করি, নেত্রী তার আগের সিদ্ধান্তই বহাল রাখবেন।’
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নতুন সরকার গঠন আর সমৃদ্ধির এই অগ্রযাত্রায় নতুনের আহ্বান জাগে। পরিবর্তনের আভাস দেয় রাজনৈতিক পূর্বাভাস।
আর তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে এই সিটির জন্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত এবং এর আগে ক্যাবিনেট থেকে বাদ পড়া নানক গেল নির্বাচনে সমন্বয় ও মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদ্রোহীদের বসানো, দলের বিভেদ মেটানোসহ নির্বাচনে দলের পক্ষে সেতুবন্ধনের কাজটি করেছেন। নানা আন্দোলন-সংগ্রামে শেখ হাসিনার পরীক্ষিত, বিশ্বস্ত ও কর্মীবান্ধব নাম জাহাঙ্গীর কবির নানক।
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তরে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয়ের দাপুটে নেতা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের নামটিও আলোচনায় রয়েছে। তিনিও একাদশ জাতীয় সংসদে মনোনয়ন বঞ্চিতদের তালিকায় ছিলেন। শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী নাছিম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হন। এ ছাড়াও নানা প্রতিকূল পরিবেশে শেখ হাসিনার পাশে ভ্যানগার্ডের মতো ছিলেন। নতুন কাউকে ভাবলে তার বিষয়ও আলোচনায় আসতে পারে বলে জানাচ্ছেন দলের নেতারা।
এদিকে, স্বপ্নচারী মেয়র আনিসুল হকের দীর্ঘ সফল পথের সারথী রুবানা হকও বেশ আলোচনায় আছেন। সেইসঙ্গে আছেন তার (আনিসুল) রক্তের উত্তরাধিকার বড় ছেলে নাভিদুল হকও। নেত্রীর নির্দেশনা পেলে বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত তিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের মনোনয়ন বোর্ড যথাসময়ে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। আগেই বলার কিছু নেই। তবে যোগ্যতম প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে এই তিলোত্তমা ঢাকার উন্নয়নের জন্য।’
তিনি মনে করেন, ‘প্রার্থী যেই হোক না কেন, উন্নয়নের জন্য হলেও মানুষ নৌকায় ভোট দেবে।’
দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, পরিবর্তনের আভাস সব মহলে। তারপরও আমাদের দলের সভাপতি মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলাপ করে যোগ্য ও উইনেবল প্রার্থীকেই নিশ্চয় খুঁজে নেবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পূদ শূন্য হয়। ওই পদে উপ-নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটির নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য গত বছর তফসিলও ঘোষণা করেছিল ইসি। কিন্তু সীমানা জটিলতার কারণে উচ্চ আদালত নির্বাচন স্থগিত করে।