Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,শনিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ঃ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ডাকসুর মতোই অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না।

একসময় বাংলাদেশে ডাকসু ছাড়াও চাকসু, জাকসু, রাকসু নামগুলো বেশ আলোচিত ছিল। আর সরকারি কলেজগুলোতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। এখন দেশে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪২টি। খবর ডয়ে চেভেলের।

আর সরকারি কলেজের সংখ্যা ৫৯৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে গড়ে ২৮ থেকে ৩০ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে, মূলত ডাকসুর প্রভাব আছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদের ওপর।

যেহেতু ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হয় না, তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। আর মূলত যারা সরকারে থাকে, তাদের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ফল যদি ক্ষমতাসীনদের অনুকূলে না যায়- এই আশঙ্কা থেকেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়। সামরিক শাসক এরশাদের শাসনামলের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়।

এরপর আওয়ামী লীগ বা বিনএপি যে দলই ক্ষমতায় থাকুক তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রতি অনাগ্রহ দেখায়। ডাকসু নির্বাচনের যে সিদ্ধান্ত নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে, তা কিন্তু সহজে হয়নি। আদালতের আদেশের পর তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছে। ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

আর ডাকসু নির্বাচনের এই তারিখ ঘোষণার কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। তার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিররিয়া বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। আমরা অনেক দিন ধরেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাদের ছাত্র সংগঠনগুলোর গঠনতন্ত্র চেয়েছে। আমরা মনে করছি, দ্রুতই রাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে ছাত্র সংগঠনগুলোর। সাধারণ ছাত্র শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচন চায়’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়েই নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার আদায় যেমন সহজ হবে, তেমনি নেতৃত্বের বিকাশও ঘটবে, যারা পরে জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন। তরুণ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে। জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের সংকট হবে না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ জাকসু নামে পরিচিত। সেখানেও নির্বাচন হয় না ২৭ বছর ধরে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনীক বলেন, ‘এখন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে হলগুলো ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে। তারপরও আমরা জাকসু নির্বাচন চাই। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দলীয় লেজুড়বৃত্তি না করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচন করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই জাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছিল, জাতীয় নির্বাচনের পর ২০১৯ সালেই জাকসু নির্বাচন দেয়া হবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের পর আমরা কথা বলেছি। তারা এখন বলছেন, এবছর তারা জাকসু নির্বাচন দিতে পারবেন না, ২০২০ সালে নির্বাচন দেবেন। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ নব ছাত্র সংগঠন জাকসু নির্বাচন চায়।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বা চাকসু নির্বাচন হয় না ২৮ বছর ধরে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের কোনো কমিটি নেই। এক বছর আগে নানা অভিযোগে কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। তবে তাদের তৎপরতা আছে। আছে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা। সেখানেও চাকসু নির্বাচনের দাবি উঠেছে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরাও চাকসু নির্বাচন চাই, তবে তার আগে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দলীয় আচরণ বদলাতে হবে। ক্যাম্পাস ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলমুক্ত করতে হবে।’

এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে একটি কমিটি করে দিয়েছি, তারা ছাত্র সংগঠনের সাথে কথা বলবে। রাকসুর গঠনতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন, পরিমার্জন লাগবে কিনা দেখবে। এরপর তারাই বলবে কবে রাকসু নির্বাচন করা যায়। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব রাকসু নির্বাচন করতে।’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ছাত্র সংসদগুলো কার্যকর না থাকায়, নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র রাজনীতি সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে না। যদি নিয়মিত নির্বাচন হয়, তাহলে ছাত্র রাজনীতি সঠিক পথে পরিচালিত হবে। নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে।’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যখন অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসে, তারা চায়নি ছাত্র রাজনীতি সঠিক পথে চলুক। তারা ছাত্রদের বিপথে পরিচালিত করেছে। তাই তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনও চায়নি।’ -ডয়চে ভেলে।