রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্র এখন এক ব্যক্তি ও এক দলের কব্জায়। একদলীয় শাসনে রাষ্ট্র জনগণকে দাসে পরিণত করে। গণতন্ত্র মৃত্যু যন্ত্রণায় ধুকতে ধুকতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে। বর্তমানেও সেই দশা বিরাজমান। এক ব্যক্তির একদলীয় শাসন নিরাপদ করতেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকানো হয়েছে। কোন কারণ ছাড়াই হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় বিএনপি’র লাখ লাখ নেতাকর্মীকে জড়ানো হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গায়েবি মামলায় এমন মানুষদের জড়ানো হয়েছে যা শুধু অদ্ভুতই নয়, এটি নিষ্ঠুর তামাশা।’
তিনি বলেন, ‘কবরে শায়িত লাশ, পক্ষঘাতগ্রস্ত রোগী, হজ পালনরত ব্যক্তি, বহুদিন ধরে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীনভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী তারা মিয়া, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শামসুল হক যিনি মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে অচল এবং তিনি কানেও শোনেন না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্গাচাষী মিলন মিয়া, ঢাকার আতর বিক্রেতা হাতকাটা ইউসুফসহ এ ধরণের অসংখ্য হতদরিদ্র ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদেরকে। এরা নাকি রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী। যে রাষ্ট্র এতো বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন ও নিষ্ঠুর রক্তপিপাসু কেবলমাত্র সেই রাষ্ট্রেই উল্লিখিত ব্যক্তিদের অপরাধী বানানো হয়। সুতরাং সেই রাষ্ট্র পরিচালকদের অর্থাৎ অবৈধ সরকারের পতনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা ন্যায়সঙ্গত।’
রিজভী বলেন, ‘মানুষ অজানাকে জানার জন্য প্রয়োজন হয়েছে চিন্তার স্বাধীনতার। ‘দুর্গম পর্বত চুড়া, অন্ধকার অরণ্যানী, দূরবিস্তৃত মরুভূমি, বরফে মোড়া মেরুপ্রদেশ, গভীর সাগরতল, সীমাহীন আকাশ’-কোন কিছু সম্পর্কেই সে অজানা থাকতে চায় না। পৃথিবীতে দর্শন, রাষ্ট্রদর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সমাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে বিশ্বমনিষীদের চিন্তা, নিজের মত এবং অন্যের মতের সাথে বিতর্ক সবকিছু মিলিয়ে চিন্তার স্বাধীনতা মানবসমাজকে অগ্রগতির পথে নিয়ে গেছে। চিন্তার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয় নাগরিক স্বাধীনতা। আর নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় প্রকৃত গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর।গন্ত্রহীনতায় বাংলাদেশের জনগণ এখন রাষ্ট্রদাসত্ব করছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জনগণকে ফাঁকি দিয়ে ভুয়া ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্যই গায়েবি মামলায় বিএনপি’র লাখ লাখ নেতাকর্মীদের জড়িয়ে উল্লিখিত হতদরিদ্র দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ মানুষদেরকেও মামলা দিতে দ্বিধা করেনি। এদের কারো কারো নামে দশ থেকে বারোটি মামলা। ক্ষমতাসীনরা ভোগ লালসায় অস্থির হয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে গিয়ে তালবেতাল হয়ে অমানবিকতার পথ অবলম্বন করেছে। এরা মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করছে। সেইজন্য ক্ষমতা-আধিপত্যের রঙিন সম্প্রসারণে মেতে উঠেছে। গতকাল গণভবনে নির্বাচন পরবর্তী ‘২৯শে ডিসেম্বর রাতের ভোটের’ প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রে শেখ হাসিনার সদাহাস্য চেহারা ও সরকারের আনুকুল্য পাওয়া উৎফুল্ল উচ্ছিষ্ট রাজনীতিবিদ চেহারা দেখে মনে হয়েছিল তারা আনন্দে মাতোয়ারা। এই আনন্দ একটি সামাজিক পাপ। গোটা জাতির সাথে নির্লজ্জ মহাতামাশার নির্বাচনের পর উল্লসিত সরকারের চা-চক্রের আয়োজন বিবেকহীন আনন্দেরই সমতুল্য। জনগণের সাথে প্রতারণাকারী সরকারের জয়ল্লোসের চা-চক্রে দেশের গণতন্ত্রমণা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণরত কোন রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করেনি। যারা জনগণের ভোট লুট করেছে তাদের সাথে গণতন্ত্রপ্রেমী কোন ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী কেউই সেই লুটের আনন্দের পাপে অংশগ্রহণ করেনি। এটাই জনগণের বিজয়।’
রিজভী আরও বলেন, ‘মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর ভুয়া ভোটের সরকারের অনুগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। দুর্দশাগ্রস্ত গণতন্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে এ নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। ডাকসু নির্বাচনে সব ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত না হলে ডাকসু নির্বাচন হবে মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের ধারাবাহিকতার আরেকটি সংযোজন।’