খােলাবাজার ২৪,মঙ্গলবার,২৬ফেব্রুয়ারি ২০১৯ঃ শ. ম. রেজাউল করিম, এমপি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী। তিনি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. আব্দুল খালেক শেখ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বরেণ্য রাজনীতিবিদ।
বর্তমানে শ. ম. রেজাউল করিম সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট (আপিল বিভাগ) নিয়োজিত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে কনিষ্ঠতম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
১/১১ পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক সকল মিথ্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পেয়েছেন তিনি বেশকিছু পদকও। এর মধ্যে শেখ রাসেল স্মৃতিপদক, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ পদক, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ইউনেস্কো ক্লাব পদক, আইন ও মানবাধিকারে লালনপত্র পদক-২০১১ ইত্যাদি অন্যতম।
তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হলো মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ও ইতিহাসের দায় মুক্তি। তিনি দৈনিক আজকের দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকও।
সোমবার তার সঙ্গে কথা হয় । পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো-
মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থদের নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যেতে চান?
আমি খুব ছোট পরিসর থেকে বেড়ে ওঠা মানুষ। খুব বিশাল বিত্তবান পরিবারের সদস্য ছিলাম না। খেটে খাওয়া মানুষ, অসহায় মানুষ অথবা যে মানুষগুলো নিম্ন মধ্যবিত্ত সেই মানুষগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত আমি সম্পৃক্ত। রাজনীতি, সামাজিকতা ও আমার পারিবারিক স্ট্যাটাসের কারণে এমনকি পেশাগত কারণে মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। তাদের কাছ থেকে তাদের সুখ-দুঃখের কথা শোনার সুযোগ হয়েছে।
অনেকের মুখে রাজউক, গৃহায়ণ, বা এই মন্ত্রণালয়ে এসে হয়রানির শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। অন্যান্য দফতরে গিয়ে হয়রানির শিকারও হয়েছেন অনেকে।তাদের হয়রানিগুলো তাদের কাছ থেকে শুনেছি। কখনো কখনো এই হয়রানি থেকে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছি, মামলা করেছি। ফলে মানুষের জন্য কাজ আগে থেকেই করছি।
আমি কখনোই আমার মন্ত্রণালয়ের মানুষদের প্রজা ভাবিনা, নিজেকে রাজাও ভাবিনা। আমি নিজেকে একজন সেবক মনে করি।
আমার পরিচিতজনদের সেবা ও সহযোগিতা করতে গিয়ে এসব দফতরে আমার কর্মচারি বা স্টাফকে পাঠিয়েছি। তারা এসে আমাকে জানিয়েছে রাজউকসহ এসব দফতরে কাজ করতে হলে অনেকগুলো স্তর অতিক্রম করতে হয়। আমি তখন চিন্তা করতাম এতোসব সিস্টেম কি অত্যাবশকীয়? কিন্তু তখন এসব বিড়ম্বনা নিরসনের কোনো সুযোগ আমার হাতে ছিল না।
এখন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমার মনে হয়েছে, মন্ত্রীত্ব বা সংসদ সদস্য পদটি কোনো ক্ষমতা নয়, এটি সেবা দেওয়ার জন্য দায়িত্ব মাত্র। তাই এখন সেসব জটিলতা নিরসনে কাজ করছি।
প্রশ্ন: আপনার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে সেবা সহজীকরণে উদ্যেগের চিন্তা কোথা থেকে?
ভোগান্তি দূর করার কষ্টটা আমার নিজের ভেতর থেকে উৎসারিত হয়েছে। এটা কেউ আমাকে সাজেস্ট করেনি। আমার নিজের বিবেক বলছে মানুষকে সহজে সেবা দিতে হবে। জটিলতার ভেতর থেকে একজন মানুষ সেবা নিতে না পেরে চলে যায়। সেই কারণে আমি গবেষণা করে আমার মন্ত্রণালয়সহ রাজউক, সিডিএসহ অন্যান্য সকলকে নিয়ে বসে আমার অভিমত বলেছি তারা আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন। সেই কারণেই সেবা সহজীকরণের সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি।
কতদিন নাগাদ মানুষ আপনার নেওয়া সেবা সহজীকরণের পরিকল্পনার সুফল পাবে?
আমরা আশা করছি এক সপ্তাহের ভিতরে ভাল একটা রেজাল্ট পাবো। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে যেখানে অনেকগুলো স্তর পার হয়ে সেবা নিতে হতো সেটা যত কমিয়ে পারা যায় তা সহজীকরণে আমরা কাজ করছি। আমার মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্লট দেওয়া হয়েছে, ফ্লাট দেওয়া হয়েছে সেগুলো বিক্রি করার সময় নাম জারিরসহ বিভিন্ন কাজে অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হতো এবং অনুমতির নেওয়ার সময় অনেকগুলো কষ্টের অধ্যায় পার হতে হতো। এমন অভিযোগ পুরোনো। এসব বিড়ম্বনা আমরা ভবিষ্যতে দূর করবো।
রাজউক নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
আমরা ইতোমধ্যে রাজউকে যে পরিকল্পনা দিয়েছি তার বড় অংশের কাজ শুরু হয়েছে। এখন যারা নকশার আবেদন করছেন তাদেরকে আগের মতো ১৬টি ধাপ অতিক্রম করতে হচ্ছে না। মাত্র ৪টি স্তর অতিক্রম করলেই নকশা পাচ্ছেন। চারটি অধ্যায়ের ভিতরেও যারা দশ তলার নিচে ইমারত নির্মাণ করবেন তাদের মাত্র তিনটি স্তর পার হতে হচ্ছে।
আবার কেউ যদি অনলাইনে আবেদন করে থাকেন তাদেরকে টেবিলে টেবিলে কর্মকর্তারদের কাছে আদৌ যেতে হবে না। ফলে রাজউক নিয়ে আমাদের গৃহীত সিদ্ধান্তের সুফল ইতোমধ্যেই মানুষ পাওয়া শুরু করেছে।
মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?
আমার মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ দফতর সংস্থার সকলেই আমাকে সহযোগিতা করছেন। তারা আমার সিদ্ধান্তের প্রতি একমত হয়ে সবাই এগিয়ে আসছেন। আমরা একটি টিম ওয়ার্ক করছি। এই টিম ওয়ার্কের ভিতর থেকে একটি নতুন এভিনিউতে চলে যাচ্ছি। যেখানে সনাতনী পদ্ধতি থাকবে না, মানুষের হয়রানি থাকবে না, ভোগান্তি থাকবে না এবং আমরা সকলে একটি পরিবারের মতো মিলে কাজ করছি।
আমি মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের আমার রুমে ডেকে বসতে দিয়ে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছে স্যার, এর আগে কোনো মন্ত্রী আমাদের এভাবে নিজের রুমে ডেকে কথা বলেনি।
রাজধানীতে অসংখ্য বহুতল ভবন নকশার অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা কেন?
আমরা কাজের গতি বাড়াচ্ছি। রাজউকের জনবল খুবই কম। কিন্তু তাদের কাজের পরিধি গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, এদিকে সাভার, কেরাণীগঞ্জ ঘিরে। গাজীপুর যদিও সিটি কর্পোরেশন হয়েছে, কিন্তু তারা পূর্ণাঙ্গরুপে কাজ শুরু করতে পারেনি। এতো বড় এলাকা রাজউকের একার পক্ষে মনিটরিং করা অনেক কঠিন। এখানে দেখেন কতজন ইন্সপেকটর আছে? কতজন অথরাইজড অফিসার আছে? এতো কম জনবল নিয়ে রাজউকের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব নয়।
ফলে আমরা রাজউকে ইতোমধ্যে জনবল সরবরাহের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে তার পরিণতির বিষয়ে তাদের সতর্ক করেছি। কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তাকে ন্যূনতম সহানুভূতি দেখানো হবে না। আমরা কঠিন অবস্থানে চলে যাবো।
অনুমোদন ছাড়া যেসব ভবন নির্মাণ হয়েছে সেসব ভবনের বিষয়ে আপনার চিন্তা কী?
আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব পরিকল্পনা নিয়েছি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যেসব ভবন অননুমোদিত নকশার ভিত্তিতে বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে, অথবা অনুমোদন আছে কিন্তু নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কাজ করা হয়েছে তা সনাক্ত করা। আর তা আমরা ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছি। এর পরিমাণ শুধুমাত্র ঢাকায় ৬০ শতাংশের উপরে। খুব শীগ্রই আমরা এসবের বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।
এ কাজে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করছেন কি?
আমি কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছি না। তবে অনেক সময় নকশা অনুমোদন ছাড়া নির্মাণ করা ভবন কর্তৃপক্ষ আদালতে গিয়ে একটি স্টে অর্ডার নিয়ে নেয়। সেটা আদালতের মাধ্যমে আমরা মোকাবেলা করবো। আগে এই মন্ত্রণালয়ের কাজে যে গতি ছিল তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে নতুন আঙ্গিকে আবার শুরু করেছি। আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে অনিয়ম করে কোনো বিল্ডিং নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। যারা এটা আগে করেছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে। আমরা কাউকে কোনভাবে ছাড় দিব না ।
উৎসঃ পরিবর্তন.কম