Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,বুধবার,২৭ফেব্রুয়ারি ২০১৯ঃ ইথিওপিয়া থেকে আনা দুম্বার মাংসের মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও পাঁচ মাস আগে। ভারত থেকে আনা মহিষের মাংসেরও মেয়াদ শেষ পাঁচ মাস আগে। তার পরও গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়া হতো খাওয়ার অনুপযোগী এসব মাংস। এই ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে চেইনশপ স্বপ্ন, মীনাবাজার ও ডেইলি শপিং।

খাদ্যপণ্য মজুদকারী যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা নিয়মিত এই মাংস কিনত, সেখানে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর বেরিয়ে আসে ন্যক্কারজনক প্রতারণার এ তথ্য। যে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এই তিন সুপারশপ পচা মাংস কিনত, সেটির নাম দেশি সুপার এগ্রো লিমিটেড।

প্রতিষ্ঠানটি থেকে স্বপ্ন, ডেইলি শপিং ও মীনাবাজারের কাছে বিক্রি করা মাংসের শত শত চালানপত্র উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব চালানপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিত মাংস নিত স্বপ্ন, ডেইলি শপিং ও মীনাবাজার। ওই মাংসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল পচা মেয়াদোত্তীর্ণ।

এই তিনটি সুপারশপ ছাড়াও ঢাকার অনেক নামিদামি রেস্তোরাঁসহ ২৬৮টি প্রতিষ্ঠান মাংস কিনত দেশি সুপার এগ্রো থেকে। কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়াই এ মাংস আমদানি করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, এটি জঘন্যতম অপরাধ। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে বাড়াতে হবে নজরদারি। ভোক্তা হিসেবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। গত সোমবার মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য মজুদ ও বিক্রির অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তিনটি হিমাগারকে ৪৩ লাখ টাকা জরিমানা করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ সময় ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ধ্বংস করার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ৮০০ মণ মাংস ও এক হাজার ২০০ মণ খেজুর জব্দ করা হয়। সোমবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত র‌্যাব-২ এর সহায়তায় পরিচালিত অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী। সিলগালা করে দেওয়া হয় শিকাজু হিমাগার ও দেশি সুপার এগ্রো লিমিটেডের হিমাগার। দেশি এগ্রোর কয়েকশ চালানপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি স্বপ্নর মিরপুর-১ নম্বরের আউটলেটের কাছে পাঁচ মাস আগে মেয়াদ শেষ হওয়া দুম্বার মাংস বিক্রি করেছে। চালানপত্রে সিল-স্বাক্ষর দিয়ে তা বুঝে নিয়েছে স্বপ্ন। প্রতি কেজি দুম্বার মাংস স্বপ্ন কিনেছে ৬৬০ টাকা দরে। একই তারিখে স্বপ্নর মিরপুর-১০, উত্তরা-৩ সহ বিভিন্ন শাখায় গেছে দুম্বার মাংস।

এর আগে ৩ জানুয়ারিসহ বিভিন্ন তারিখে অর্ধশতের বেশি চালান গেছে স্বপ্নর শোরুমে। পিছিয়ে নেই আরেক সুপারশপ মীনাবাজারও। গত ২৪ জানুয়ারি দেশি এগ্রোর কাছ থেকে ৬৬০ টাকা দরে দুম্বার পচা মাংস কিনেছে তারা। মীনাবাজারের প্রতিটি চালানপত্রে তাদের সিল-সাইন রয়েছে। মীনাবাজারের শান্তিনগর, উত্তরা-১১, উত্তরা-১৪, ধানমণ্ডি-২৭, মগবাজারসহ বিভিন্ন শাখায় গেছে দুম্বার মাংস। একই কাজ করেছে ডেইলি শপিংও। তারা অবশ্য অন্য দুটির থেকে কিছুটা কম দামে পেয়েছে দুম্বার পচা মাংস। ৬২০ টাকা দরে ডেইলিং শপিংয়ের পল্লবী শাখা, উত্তরা-৯, কাঁঠালবাগানসহ বিভিন্ন শাখায় গেছে এই মাংস।

এসব চালানপত্রে দুম্বার মাংস দুম্বার রেজালা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অকাট্য তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্বপ্ন ও মীনাবাজার কর্তৃপক্ষ।
মীনাবাজারের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) সোহেব ইকবাল গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা তাদের মেয়াদের সনদপত্র দেখে দুম্বার মাংস কিনেছি। আর চলতি বছরের গত দুই মাসে নষ্ট থাকায় তাদের চালান ফিরিয়ে দিয়েছি আমরা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারির একটি চালানপত্রে মীনাবাজারের সিল-স্বাক্ষর রয়েছে জানানো হলে তিনি বলেন, রিসিভ করার পরই আমরা চালান ফেরত দিয়েছি। স্বপ্নর ব্যবস্থাপক মাহাদী ফয়সাল গণমাধ্যমকে বলেন, তারা (র‌্যাব) এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। এমন হলে তারা আমাদের জানাতে পারতেন। তারা তো আগেও আমাদের এখানে অভিযান চালিয়েছেন। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানার আগে মন্তব্য করতে চাই না।

দেশি সুপার এগ্রোর আরও গ্রাহক হলো খাজা কাবাব, প্রাণ ডেইরি, নবাব ইনডিয়ান, ৭১ হোটেল, পূর্ণিমা হোটেল, ব্রাইটস্টার, প্রিন্স হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মুঘল দরবার, পীর ইয়ামিনি রেস্টুরেন্ট, মদিনা হোটেল হাজি ক্যাম্প, হাসান ফাস্টফুড, সিটি ক্যাফে, মদিনা বিরিয়ানিসহ ২৬৮টি প্রতিষ্ঠান।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, এ ধরনের অপরাধীরা যত বড় শক্তিশালী হোন না কেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। এদিকে তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগে গতকালও মীনাবাজারের মোহাম্মাদপুরের মোহাম্মাদীয়া হাউজিং শাখাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।