Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০১৯ঃবরগুনার আমতলী উপজেলার হলুদিয়া ইউনিয়নে ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালের আকস্মিক ঝড়ে উড়ে গেছে উত্তর-পশ্চিম চিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ফলে ১৬ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে ৮৯ শিক্ষার্থী পাঠদান চলছে।

রোদ-বৃষ্টি-ঝড় ও বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে বাধ্য হয়েই পাঠদান চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। কাঠফাঁটা রোদে একসাথে ৬টি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসায় হচ্ছে অসুবিধা। ব্যাহত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম।

বরগুনার আমতলী উপজেলার হলুদিয়া ইউনিয়নের চিলা গ্রামে রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর-পশ্চিম চিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। একই সাথে ৬টি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একসাথে বসিয়ে পাঠদান করতে অসুবিধা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬১ সালে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলুদিয়া ইউনিয়নে স্থাপন করা হয় উত্তর-পশ্চিম চিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এরপর দীর্ঘ বছর পর ১৯৯৪ সালে এখানে একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২১ বছরের মধ্যে ভবনটিকে ২০১৫ সাভে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয় শিক্ষা অধিদপ্তর। এরপর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অধিদপ্তরের সহায়তায় একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। এরপর থেকেই খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে। বিদ্যালটিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৯ জন। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ২০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৩ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১৬ জন। এখানে সরকারিভাবে ৪ জন ও স্থানীয়ভাবে ১ জন শিক্ষক কর্মরত আছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালের আকস্মিক ঝড়ে বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এরপর থেকেই খোলা আকাশের নিচে আমরা পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মাহফুজ ও রাশেদুল জানান, প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে বসে ক্লাস করায় গাছের পাতা ও ডালপালা ভেঙে গায় পড়ে। এছাড়াও প্রচণ্ড রোদে ঘেমে শরীর চুলকায়। এতে পাঠদানে আমরা মনোযোগী হতে পারি না। সব ক্লাসের শিক্ষার্থদের একসাথে বসিয়ে ক্লাস নেয়ায় কোনো কিছুই বুঝতে পারি না।

তারা আরো বলেন, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি নামলে দৌড়ে কোথায় আশ্রয় নেয়ার আগেই আমাদের জামা-কাপড় ও বই-খাতা ভিজে যায়। এরকম চলতে থাকলে আগামী দিনে আমাদের ক্লাস করা সম্ভব হবে না।

অভিবাবকরা জানান, প্রতিদিন এভাবে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস চলতে থাকলে আমাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হবে না। কেননা খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করায় রোদে বৃষ্টিতে ভিজে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সহকারী শিক্ষক আসমা সুলতানা বলেন, খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানোয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদেরও অসুবিধা হচ্ছে। এখানে সবাইকে একসাথে বসিয়ে পাঠদান করানোর ফলে কোনো শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্রুত আমাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে পাঠদানের ব্যবস্থা করা না হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পাশের একটি মাদ্রাসায় একটি কক্ষে বসানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই দ্রুত একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণের দাবি জানান তারা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত হওয়ার সাথে সাথে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। উপজেলা প্রথামিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে গেছেন। আশা করি শিগগিরই শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখান জন্য তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বলেন, উত্তর-পশ্চিম চিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে বরাদ্দ পেলে এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে টিনশেড ঘর নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হবে।

তিনি আরো জানান, বিদ্যালটির আগের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় এখানে একটি নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে শিগগিরই নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষৎ তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।