Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

উত্তরায় ২ বাসের পাল্লায় ঝুলে গেল নারীর হাত

খােলাবাজার ২৪,শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০১৯ঃ  রাজধানীর উত্তরায় দুই বাসের পাল্লায় নাজমা আক্তার (৩১) নামের এক নারীর হাত ভেঙ্গে ঝুলে গেছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। অপরদিকে একটি বাস আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আকাশ প্লাজার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

রক্তাক্ত অবস্থায় ওই নারী প্রথমে উত্তরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি উত্তরার হক এন্ড সন’স লি. নামের একটি কোম্পানিতে পিয়ন পদে চাকরি করেন। উত্তরখান থানাধীন মাস্টারপাড়া এলাকায় একটি বাসায় মা ও ছেলেকে নিয়ে বসবাস করনে। এর আগে তিনি আল দ্বীন হাসপাতালে পরিবেশ কর্মী হিসাবে কাজ করতেন।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাকিব এহসান খান বলেন, ‘দুর্ঘটনা কবলিত নারীর ডান হাতের কুনি থেকে শোল্ডার জয়েন্ট (কাধ) পর্যন্ত কেটে গিয়ে হাড় বেরিয়ে গেছে। এছাড়াও উক্ত স্থানের কয়েক চামড়ার ভেতড়ে হাড় ভেঙ্গে আলাদা হয়ে গেছে। অপরদিকে তার প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়েছে।’

তিনি আরো জানান, হাতে ওপেন ফ্যাকচার হয়েছে। ফলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী শারমিন নামের এক নারী বলেন, ‘হাউজবিল্ডিং এর ট্রাফিক সিন্যাল ছাড়ার পরই সিগন্যালে থাকা বাসগুলো কে কার আগে যাবে তার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠে। এর জন্য শুরু করে দেয় বেপরোয়া প্রতিযোগীতা।’

তিনি বলেন, ‘আমি ও গুরুতর আহত ওই নারী অনাবিল বাসের সিটে বসা ছিলাম। এদিকে অনাবিল বাস ও প্রজাপতি পরিবহনের অপর একটি বাস কার আগে কে যাবে তা নিয়ে পাল্লা শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে দুই বাসের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে করে আমাদের ওই বাসে থাকা নারীটির ডান এক ক্ষত বিক্ষত হয়ে ভেঙ্গে যায়। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য রিকশা যোগে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অপরদিকে দুই চালকসহ দুই বাসটিকে আটক করে পুলিশে স্থানীয়রা কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশে সোপর্দ করেন।’

হাতের ব্যাথায় চিৎকাররত অবস্থায় নাজমা বলেন, ‘ডিউটি শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য বাসে উঠি। কিন্তু হাউজবিল্ডিং পার হওয়ার পরেই দুই বাস আমার ডান হাত কেড়ে নিয়েছে। আমি আর কখনো ভালো হতে পারব কি না তাও জানি না। হাতে প্রচন্ড ব্যাথা করছে। আর হাত অবশ হয়ে রয়েছে।’

তিনি বলেন, আমি যদি আর ভালো না হই তাহলে আমার ছেলেকে দেখবে কে? আমার ছেলের কি হবে?’

এদিকে মায়ের এমন করুণ অবস্থা দেখেই আহত নাজমার ছেলে ভেঙ্গে পড়েন। তার একমাত্র ছেলে বলেন, যে বাসগুলো আমার মায়ের এমন অবস্থা করেছে ওই বাস চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কোন চালক যেনো এমন বেপরোয়াভাবে আর গাড়ি না চালায়।

অপরদিকে ডিএমপি’র ট্রাফিক উত্তর বিভাগের রেকার অপারেটর মনির বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দুটি বাস পড়ে থাকতে দেখি। পড়ে বাস দুটির কাগজ নিয়ে অনাবিল পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব- ১৫-১৪৭০ নম্বও বাসটিতে রেকার লাগানোর সময় প্রজাপতি পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব- ১১-৬৭০৩ নম্বরের বাসটি নিয়ে চালক দ্রুত পালিয়ে যায়।’

উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনজুর বলেন, ‘দুই বাস পাল্লা দিতে গিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এক নারীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার অবস্থা ভয়াবহ।’

এ ঘটনায় একটি বাস আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অপরদিকে প্রজাপতি পরিবহনের বাসটি ও দুই বাস চালককে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা পক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।