Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

নিখোঁজ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের সবই থাকে অজানা

খােলাবাজার ২৪,সোমবার, ১৮ মার্চ ২০১৯ঃ প্রায় ১৫ মাস নিখোঁজ থাকার পর গতকাল নিজ বাড়িৃতে ফিরে এসেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। তবে তিনি কোথায় কি অবস্থায় ছিলেন এবং ফিরলেন কিভাবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১টার দিকে মারুফ জামান একা একাই তার ধানমন্ডির বাসায় ফিরে আসেন। বাড়ির ম্যানেজার তাকে দেখতে পেয়ে ওপরে নিয়ে যান। এ সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে জানা গেছে।

মিস্টার জামানের মেয়ে গতকাল তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাবার ফিরে আসার খবরটি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে আর কিছু জানতে না চাওয়ার অনুরোধ করেন। এমনকি পুলিশের সঙ্গেও এখন কথা বলছেন না তারা।

পুলিশ কী বলছে?

ধানমন্ডি থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন,”মারুফ জামানের মেয়ে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে তার বাবা ফিরে এসেছেন। তাদের ভবনের ম্যানেজার তাকে দেখতে পেয়ে বাসার ভেতরে নিয়ে আসেন।”

মিস্টার মারুফের মেয়ে তার বাবার সঙ্গে কাউকেই এখন পর্যন্ত দেখা করতে দেননি। তাই তিনি কিভাবে ফিরেছেন, কোথা থেকে এসেছেন, কে দিয়ে গেছেন- কোন কিছুই জানা সম্ভব হয়নি।

ওসি আব্দুল লতিফ বলেন,”মারুফ জামানের খোঁজ নিতে আমার দুইজন লোক ওনার বাসায় গেলে তার মেয়ে বলেছেন যে উনি অসুস্থ। কোন কথা বলবেন না। একটু সুস্থ হওয়ার পর কথা বলবেন।”

মিস্টার জামান কিছু জানালে যদি কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকে তাহলে পুলিশ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে জানান ওসি আব্দুল লতিফ।

আশার আলো দেখছেন নিখোঁজদের পরিবার:

২০১৭ সালের চৌঠা ডিসেম্বর মারুফ জামান নিজ বাড়ি থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন।

তারও চার বছর আগে জাতীয় নির্বাচনের সময় আরো কয়েকজনের সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছিলেন সাজেদুল ইসলাম নামে বিএনপির এক সংগঠক।

গত ছয় বছর ধরে প্রিয়জনের খোঁজ না পেলেও মিস্টার জামানের ফিরে আসা নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে সাজেদুলের পরিবারে।

তবে হাইকোর্টের রুল জারি সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ভাইয়ের সন্ধানে কোন অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ জানান নিখোঁজের বোন সানজিদা ইসলাম।

“এটা আমাদের জন্য আশা যে ১৫ মাস পরে যদি মারুফ জামান ফিরে আসেন, তাহলে নিখোঁজ অন্যরাও ফিরতে পারেন।”

“আমরাও ভাইয়ের সন্ধানের দাবিতে অনেক সংবাদ সম্মেলন করেছি। মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে তারা দেখবেন। কিন্তু তারা কোন তদন্ত করেনি।”

কেন তারা নীরব?

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ৩১০জন গুমের শিকার হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ৩৩ জন ফেরত এসেছেন৷

তবে যারা ফিরে এসেছেন তাদের সঙ্গে কি ঘটেছিলো সে ব্যাপারে প্রায় কেউই মুখ খোলেননি।

রাষ্ট্রযন্ত্র ও আইনি কাঠামোর ওপর আস্থাহীনতা এই নীরবতার বড় কারণ বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী এবং গুম পরিস্থিতির গবেষক নূর খান।

“রাষ্ট্র বা আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়না, যার কারণে তারা ছাড়া পাচ্ছেন এবং যারা তাদের আটক করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।”

এছাড়া এতো দীর্ঘ সময় কাউকে আটক রাখা কোন দুষ্কৃতিকারী দলের পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব যারা অনেক শক্তিশালী এবং নির্দেশিত পন্থায় কাজ করে।”

এ পর্যন্ত যারা ফিরে এসেছেন তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন নূর খান।

তিনি জানান প্রত্যেকের বক্তব্যে এটাই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে তাদেরকে এমন জায়গায় রাখা হতো যেখানে সাধারণ মানুষের চলাচলের সুযোগ নেই এবং আটককারীরা প্রশিক্ষিত গ্রুপের সদস্য।

তবে তারা এই কথাগুলো প্রকাশ্যে আনতে চান না, আরেকটি বিপর্যয় ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায়।
গুম ঠেকাতে কী প্রয়োজন?

তবে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ফিরে আসা প্রত্যেকের অভিজ্ঞতাগুলো সামনে আনা জরুরি বলে মনে করেন মানবাধিকার-কর্মী সুলতানা কামাল।

যেসব আশঙ্কা ও হুমকির কারণে এই মানুষগুলো মুখ খুলতে ভয় পান সেই ভয় দূর করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর আরও জোরালো ভূমিকা নেয়ার ওপর জোর দেন তিনি।

সুলতানা কামাল বলেন, “এর আগে যারা হারিয়ে গিয়েছিলেন, পরে ফিরে এসেছেন, তাদের কাছে আমরা প্রশ্ন রেখেছিলাম, তার মধ্যে একটি উত্তর এমন ছিল যে, ছেলেমেয়ের ওপর যখন হুমকি আসে তখন মুখ খোলা কঠিন। তার মানে নিশ্চয়ই তাদেরকে এমনই কোন শর্ত দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। যার জন্য তারা মুখ খুলতে ভয় পান।”

“কিন্তু এটা আমি মনে করি তাদেরও একটা দায়িত্ব জানানো যে কি হয়েছিল না হয়েছিল। তাহলে আমরাও হয়তো এটা সুরাহা করার একটা পথ পেতাম। তাছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তারাই বা এটার সুরাহা করেননা কেন?”

নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনের অভিযোগ, তারা প্রিয়জনের খোঁজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করলেও এখনও কোনটির তদন্ত শুরু করা হয়নি।

এমন অবস্থায় প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে।
সূত্র: বিবিসি