Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

এক দশকে ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ড, ১৫৯০ জনের প্রাণহানি

খােলাবাজার ২৪,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০১৯ঃ  গত দশ বছরে সারা দেশে ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৫৯০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য তুলে ধরেছে ধরেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)।

‘অগ্নি ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ পুরান ঢাকা’ শীর্ষক এক গণশুনানিতে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ তথ্য তুলে ধরে জানান, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। সে ঘটনায় একই পরিবারের ১১ জন ব্যক্তি প্রাণ হারান। নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি পর্যায়ে গঠিত সকল তদন্ত কমিটি এলাকার রাসায়নিক মজুদ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং পুরান ঢাকার সকল আবাসিক ভবন থেকে রাসায়নিক দোকান কারখানা গুদাম উচ্ছেদের সুপারিশ করে।

আইন ও শালিস কেন্দ্র, বেলা, ব্লাস্ট, ব্র্যাক, বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট, এএলআরডি এবং নিজেরা করি নামক সংগঠনের আয়োজনে ওই গণশুনানিতে রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে আরও ৭১ জনের প্রাণহানি হয়। বিভিন্ন মহল থেকে দোষী ব্যক্তির শাস্তির আশ্বাস মিললেও শাস্তি দৃশ্যমান হয়নি এখনও।

বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের নগর ও পরিবেশ সম্পাদক ড. ফরিদা নিলুফা বলেন, ‘পুরান ঢাকা সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া গড়ে উঠেছে। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এসব ভবণে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহ্ণ না করলে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে সবাইকে।’

বুয়েটের কেমিক্যাল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের মত যখন ভয়াবহ কোন দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা শর্ট ট্রার্ম, লং ট্রার্ম পরিকল্পনার কথা না ভেবে একেবারে সব কিছু করে ফেলতে চাই। নিরাপত্তা বিষয়ক জনসচেতনা আগে তৈরি করতে হবে। এরপর দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা কার্যকর করতে হবে সঠিকভাবে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে একটা জায়গায় আমাদের আসতে হবে।’

বক্তারা জানান, পুরান ঢাকা থেকে ক্ষতিকর, ঝুঁকিপূর্ণ ক্যামিকেল কারখানা সরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে ৩৫ টি ক্ষতিকর দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যে পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় না থাকে সে লক্ষ্যে টার্স ফোর্স কাজ করছে। আমাদের এটাও ভাবতে হবে ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ তাদের দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা আশা করছি পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে খুব তাড়াতাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ ক্যামিকেল কারখানা সরিয়ে নিতে পারবো।

গণশুনানিতে বক্তারা বলেন, নিমতলীর পর চুড়িহাট্টা ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা প্রমাণ করে যে নিমতলী থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। তদন্ত কমিটিগুলোর কোন প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়নি এমনকি আদালতেও দাখিল করা হয়নি। কমিটিগুলোর সুপারিশসমূহ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হয়নি ফলে নিরাপদ পল্লী স্থাপনের প্রক্রিয়া অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিলম্বিত হয়েছে। কোনরকম অনুমোদন লাইসেন্স ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই পুরান ঢাকায় এখন পরিচালিত হচ্ছে হাজার হাজার বিস্ফোরক ও রাসায়নিক গোডাউন ও গুদামঘর।

তারা আরও বলেন, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক রাসায়নিক এর এমন বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পন্ন নিষিদ্ধ হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তা কার্যকর ভাবে বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে। লোভ ও অব্যবস্থাপনার কাছে জিম্মি রয়েছে পুরান ঢাকার লাখ লাখ বাসিন্দা।

উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর বনানীতে ১৭ নম্বর রোডে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন গোটা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৭ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এতে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিক সহ অন্তত ২৫ জনের প্রাণহানি হয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও অর্ধশতাধিক লোক। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।