Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শনিবার,৩০মার্চ ২০১৯ঃ রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৩ জন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে এই আগুন লাগে। বহুতল ভবনটির ৮ম তলায় আগুনের সূত্রপাত। তবে, কিভাবে এই আগুনের সূত্রপাত, শনিবার পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে পুলিশের কাছে ভবনটির দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির হিসাবে, ভবনের ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮, ৯ এবং ১০ তলা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

শুরুতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক দেখা গেলেও শুক্রবার পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস উভয়ে হতাহতের বিষয়ে উক্ত পরিসংখ্যান দিয়েছে।

কিন্তু, আগুন লাগার সময়ে বহুতল এই ভবনে কত সংখ্যক মানুষ ছিলেন, সে বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি। এমনকি ভবনটিতে মোট কতগুলো প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল, তাও জানা যায়নি। না পুলিশ; না ফায়ার সার্ভিস; না ভবন কর্তৃপক্ষ, কেউই সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।

পরিবর্তন ডটকমের এই প্রতিবেদক ঘটনার দিন থেকে ভুক্তভোগী, ভবনের চার্টার, নিরাপত্তারক্ষী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে, আগুনের সময়ে এফআর ভবনে কতসংখ্যক মানুষ এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল, তা তুলে আনার চেষ্টা করেছেন।

 

প্রতিষ্ঠানের তথ্য নেই ভবনের চার্টারে

শুরুতেই ক্ষতিগ্রস্ত এফআর টাওয়ারের চার্টার পাওয়া চেষ্টা করেছেন প্রতিবেদক। একটা পর্যায়ে এসে শুক্রবার দমকল বাহিনীর এক কর্তা ব্যক্তি সেটি দেন। ভবনের নিচতলায় সাটানো সেই চার্টারে তথ্যের প্রচুর ঘাটতি স্পষ্ট। এমনকি যে তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলোতে কোন কোন প্রতিষ্ঠান, তার কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।

তবে, এই নির্দেশিকায় ভবনের জমির মালিকের নাম ইঞ্জিনিয়ার এসএমএইচ ফারুক উল্লেখ রয়েছে। এতে দেখা যায়, ভবনের বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং। গ্রাউন্ড ফ্লোরে শপ-১ খালি, শপ-২ ও ৫ যথাক্রমে ‘প্রীতম’ ও ‘স্পাইসি’ গ্রিল নামে দুটি খাবার প্রতিষ্ঠানের ভাড়া দোকান। আগুনে এই ফ্লোরের কোনো ক্ষতি হয়নি।

তালিকায় ভবনের প্রথম ফ্লোরের ৯, ১০, ১২ ও ১৩ নং শপে টু-লেট লেখা। ৩ ও ৪ নম্বরের পুরো ফ্লোর খালি দেখানো। ভবনের ৫ নম্বর ফ্লোরের ‘এ’ অংশে ‘আমরা টেকনোলজি’ নামক প্রতিষ্ঠানের। তবে, এই ফ্লোরের ৫ এর বি, সি ও ডি শপ টু-লেট লেখা। এই দুটি ফ্লোরেও আগুনের কোনো প্রভাব পড়েনি।

 

ভবনের ১১ নম্বর ফ্লোর খালি। আগুনে এটির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১২ ও ১৩ নম্বর ফ্লোর ভাড়া দেয়ার তথ্য আছে। কিন্তু, কোন প্রতিষ্ঠানকে, তার উল্লেখ নেই।

ভবনের ১৪ নম্বর ফ্লোরের ‘এ’ ও ‘বি’ অংশ জমির মালিকের অফিস। আর ১৪ নং ফ্লোরের ‘সি’ ও ‘ডি’ ফ্লোরে ইসোলাক্স কারসান নামক প্রতিষ্ঠানের অফিস। ১৭তলায় ‘আমরা নেটওয়ার্ক গ্রুপের’ অফিস এবং ১৮ নং ফ্লোরে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘ডি’ অংশে ‘সী পার্ল লিমিটেড’ নামক প্রতিষ্ঠানের অফিস। এগুলোর ক্ষতি তেমন হয়নি।

১৮তলার ‘সি’ অংশে রয়েছে ‘আমরা টেকনোলজি লিমিটেড, ১৯তলার ‘সি’ অংশে ‘রোবো ভেন্ডিং’ ও ‘ডি’ অংশে রয়েছে ‘রুট মার্কেটিং’- এর অফিস।

চার্টারে তথ্য না থাকলেও ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা বর্তমানে এফআর ভবনে মোট ২৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

এর মধ্যে ১৬তলায় ফিনিক্স ইন্সুরেন্স কোম্পানি, ২, ১২, ১৩, ১৬ ও ১৯তলায় ডার্ড গ্রুপের পাঁচটি অফিস, ৫, ৭ ও ৯তলায় আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেডের অফিস, ৮তলায় গার্মেন্টস আমদানি-রফতানি প্রতিষ্ঠান ‘এআই ফ্রেইট’র অফিস। এছাড়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস কোম্পানির অফিসের সন্ধানও পাওয়া গেছে।

 

আগুনের সময় ভবনে কত সংখ্যক মানুষ ছিলেন

বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন না হওয়ায় কম-বেশি সব প্রতিষ্ঠানের অফিসই চালু ছিল। তবে, মধ্যাহ্নভোজের সময় হওয়ায় অনেকেই নিচে নেমেছিলেন। ফলে, ভবনটিতে আগুনের সময় কত সংখ্যক মানুষের অবস্থান ছিল, তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু, সবমিলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহস্রাধিক কর্মজীবী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এফআর ভবনের নিরাপত্তারক্ষী মোস্তফা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আগুন লাগার খবরে আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠি। ছাদে ওঠার সময় কয়েকজনকে জানালে, তারাও আমার সঙ্গে ওঠেন। পরে দমকলকর্মীরা তাদের ছাদ থেকে পার্শ্ববর্তী আহমাদ টাওয়ারে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’

আগুনের সময়ে ভবনে মানুষের সঠিক সংখ্যা জানাতে না পারলেও তার ধারণা, এক হাজারের কাছাকাছি হবে। কারণ, অনেকেই আসে-যায়।

আগুনের খবরে বহু মানুষ নিজেই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। অন্যদের যারা সুযোগ পেয়েছেন, তারা ভবনের ছাদে গেছেন। সেখান থেকে আল্লাহ তাদের হেফাজত করেছেন বলেও জানান এই নিরাপত্তারক্ষী।

এফআর ভবনের ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠান ডার্ড গ্রুপের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর সেজুতি দৌলা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ভবনে আমাদের মোট ৫টি অফিস। ২, ১২, ১৩, ১৬ ও ১৯ তলায়। জনশিক্ত ৩০০ জনের মতো।’

তিনি বলেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া। আমরা সবাই বেঁচে ফিরতে পেরেছি। আমাদের ২৫ জন আহত হয়েছেন। তবে, তারা শঙ্কামুক্ত।’

এফআর ভবনের ১৬তলায় ফিনিক্স ইন্সুরেন্স কোম্পানির অফিস। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির তিনজন ছিলেন, তারা সবাই নিরাপদে বের হতে পেরেছিলেন।

ফিনিক্স ইন্সুরেন্স কোম্পানির ডেভেলপমেন্ট অফিসার আল-মামুন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা তিনজনই আল্লাহর রহমতে ছাদ দিয়ে আহমাদ টাওয়ার হয়ে নিচে নেমেছিলাম।’

ভবনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ‘আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড’। এখানে কর্মরত দু’জন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ভবনের ৫ নং ফ্লোরে আমাদের স্টোর রুম, সেখানে ৭ জন কাজ করতেন। মূল অফিস ৯তলায়, সেটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। সেখানে ৫০, ১৭তলায় ৭০ এবং ১৮তলার ৩-১ অংশে ২০ জনের মতো লোক কাজ করেন।’

তবে, তারা আমরা টেকনোলজির ঠিক কতজন হতাহত হয়েছেন, তা জানাতে পারেননি।

এফআর টাওয়ারের ৮তলায় গার্মেন্টস আমদানি-রফতানি প্রতিষ্ঠান এআই ফ্রেইট। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সৈয়দ আমিনুর রহমান।

এআই ফ্রেইটের ব্যবস্থাপক নূরে আলম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ৩০ জন অফিস করেন। এদের মধ্যে আগুনে তিনজন যারা মারা গেছেন। তারা হলেন- প্রতিষ্ঠানের এক্সকিউটিভ ডিরেক্টর রেজাউল করিম, ট্রান্সপোর্ট কর্মকর্তা আহমেদ জাফর ও সালাউদ্দিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অফিসে ডেস্কটপ ছাড়াও ৩০টি ল্যাপটপ ছিল, অফিশিয়াল অনেক কাগজপত্র ছিল। সবই নষ্ট হয়ে গেছে।’

অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনে সবমিলে এক হাজারের মতো মানুষ ছিলেন বলে জানান নূরে আলম।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার শাহজাহান শিকদার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আগুনের সময় ভবনটিতে কত সংখ্যক মানুষ আটকা পড়েছিলেন, সুনির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে, আমাদের বাহিনী শতাধিকের বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধার করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘ভবনের মাঝামাঝি আগুন লাগায় নিচের ফ্লোরগুলোর মানুষ নিরাপদে বের হতে পেরেছেন। উপরের ফ্লোরগুলোর অনেকেই ছাদে গিয়েছিলেন, তাদেরও জীবিত উদ্ধার করা হয়।’