প্রত্যেকটি অগ্নিকাণ্ডের পরই বেরিয়ে এসেছে ভবন কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা। নকশা থেকে শুরু করে পদে পদে অনিয়ম করে বানানো হয়েছে এসব বহুতল ভবন।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার বনানীর ২২তলা এফআর টাওয়ারের আগুনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৫ জন। এরপরও হুঁশ ফেরেনি।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বারবার কেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে? তাও রাজধানীর বুকে? এটা কি শুধুই অবহেলা নাকি, নাকি নেপথ্যে অন্য কিছু? তবে, আপাতত এসবের হিসাব মেলাতে চান না বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, যথেষ্ট হয়েছে। আগুনের বড় ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এখন আর অপেক্ষার কথা বললে হবে না। সচেতনতার বুলি না আওড়ে আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ঢাকা শহরের মধ্যেই সেনানিবাস এলাকায় আইনের যথাথথ প্রয়োগ হয়। এজন্য সেখানে গেলে সবাই আইন মানেন। তাহলে একই অবস্থা অন্য ক্ষেত্রেও কেন করা যাবে না? আইন মানার মানসিকতা তৈরিতে সরকারের সঙ্গে নাগরিকদেরও দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহিদুল্লাহ পরিবর্তন ডকমকে বলেন, ‘এখন শুধু সচেতনতার কথা বললে চলবে না। ঘটনার পর এটা নিয়ে বহু তোড়জোড় হয়েছে। এখন থেকে কড়া হাতে আইন প্রয়োগ করতে হবে।’
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে মনে হয় কেউ আইন মানে না। আবার ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতে গেলে সবাই সোজা, ডিসিপ্লিন হয়ে যান। গাড়ি জোরে চলে না, সিট বেল ঠিকঠাক বাঁধা, অযথা হর্ন বাজায় না। কারণ, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গেলে আইন লঙ্ঘনে বড় সাজা হবে। গাড়ির লাইসেন্স বাতিল হবে। এটা কি ঢাকা শহরের অন্য জায়গাতেও বাস্তবায়ন হতে পারে না? কেন হচ্ছে না? শিক্ষাটা নেয়া দরকার।’
সাবেক এই ডিজি বলেন, ‘বহুতল ভবন থেকে অঙ্গার হয়ে যাওয়া দেহ বের করার আগেই আমাদের ভাবতে হবে। ভবন নির্মাণে অন্তত ১০টি বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু, ভবন হওয়ার পর তারা আর এদের মুখ দেখে না।’
খুব সহজে বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি বহুতল ভবন নির্মাণের আগে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য শর্ত দিবেন। সেগুলো ঠিকঠাক না হলে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দিবেন না। দেখবেন সব ঠিকঠাক পেয়েছেন। মানুষকে ভবনে ঢুকিয়ে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলার আগে ভবনটি সঠিক নিয়মে বানান। এটা হলে অগ্নিদুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর কাজগুলো সম্মিলিতভাবে করতে হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করতে হবে। কোটি কোটি টাকার ভবন বানাচ্ছেন, মানুষকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিবেন না? আপনার সাংবিধানিক দায়িত্বই হলো মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়া।’
অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় দুর্ঘটনারোধে মানসিকতার পরিবর্তনের সঙ্গে ভবন নির্মাণ কোডের সব আইন-কানুন মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান।
পরিবর্তন ডটকমকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ভবন তৈরির সব আইন-কানুন মানতে হবে। আগে থেকে এগুলো মানলে এ দুর্ঘটনাটা এড়ানো যেত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগুনতো শুরুতে ছোট থাকে। উৎস থেকেই নেভানো গেলে, তা বড় হতে পারে না।’
আলী আহমদ খান বলেন, ‘বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপক (ফায়ার কমপ্লাইন্স) পর্যাপ্ত ছিল না। ফায়ার সার্ভিস এ নিয়ে তাদের দু’বার নোটিস করেছিল। ভবন কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সঠিক সময়ে তারা পদক্ষেপ নিলে প্রাণহানি এড়ানো যেত।’
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বনানীর ২২তলা এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৬ জন ভর্তি আছেন।