Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,বুধবার, ০৩এপ্রিল ২০১৯ঃমুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দেখার সুযোগ হয়ে গেল কদিনে। বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনার পর শিশু নাঈম ভাইরাল হয়। এমন ঘটনায় যখন আমরা দেখি অসংখ্য মানুষ মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি, ভিডিও, লাইভ নিয়ে ব্যস্ত নাঈম তখন তার ছোট্ট সামর্থে সাহায্য করছিল ফায়ার সার্ভিস বাহিনীকে। লিক হওয়া পানির পাইপ সে চেপে ধরে রেখেছিল দীর্ঘক্ষণ। স্বভাবতই কর্তব্যবোধ, বিবেকবোধের জায়গায় থেকেই তুলনা আসে। নাঈম এই বয়সে যদি বুঝতে পারে কি করণীয়, বাকিরা কেন পারে না?

নাঈম যতটুকু প্রশংসিত হওয়ার ততটুকু হয়েছে। দল মত বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তার কাজের প্রশংসা করেছে। অনেকে তাকে অর্থ সাহায্য দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রবাসী এক বাঙ্গালী একাই তাকে ৫ হাজার ডলার দেয়ার কথা বলেছে শিক্ষাব্যয়ের জন্য। কিন্তু, নাঈমকে নিয়ে তবুও আলোচনার শেষ হয়নি। নতুন মাত্রা আসে এই আলোচনায়, শাহরিয়ার নাজিম জয়ের একটি সাক্ষাৎকার প্রোগ্রামের পর। সেখানে, নাঈম বলেছিল সে টাকাগুলো পেলে এতিমখানায় দান করবে। কারণ হিসেবে বলেছিল, খালেদা জিয়ার এতিমখানার অর্থ কেলেঙ্কারির কথাকে।

হিট অফ দ্যা মোমেন্টে এই ঘটনার তুমুল প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। সবার কাছে হিরো নাঈম অর্ধেক মানুষের কাছে ভিলেইন হয়ে যায়। মানবিকতা নিয়ে কেন রাজনীতি করা হচ্ছে এমন অভিযোগে মুখর নেটিজেনদের একাংশ৷ প্রথম দিকে ভেবেছিলাম, এই বয়সে নাঈম যে ম্যাচুরিটি অর্জন করেছে তাতে তার এমন বক্তব্য হয়ত বিবেকবোধ থেকেই এসেছে। তবে, তুমুল সমালোচনার মুখে নাঈম এখন আবার তার কথা প্রত্যাহার করছে। সে বলছে, এতিমখানায় টাকা দেয়ার কথাটি তাকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল।

নাঈমকে নিয়ে রাজনীতিকরণ তো হচ্ছেই, আমাদের ভিডিও কন্টেন্টজীবিরাও কম দায়ী নয়। আমরা মূল ঘটনার বাইরে গিয়ে নাঈমের ফুটেজ নেয়ার প্রতিযোগিতা করে তাকে বারংবার মানসিক চাপে ফেলে দিচ্ছি। ক্যামেরা নিয়ে তার সাক্ষাৎকার নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে গেছি। ফলে নাঈমও বুঝে, না বুঝে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে নিজেও বিভ্রান্ত, আমরাও বিভ্রান্ত হয়েছি।

এই ঘটনার পর শাহরিয়ার নাজিম জয়ের সমালোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। জয় অভিনেতা হলেও আলোচিত উপস্থাপনা দিয়ে। তার সেন্স অফ হিউমার নামক একটি শো নিয়েও ইতিপূর্বে অনেক কথা হয়েছে। সেই প্রোগ্রামে সে অতিথিদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করে, রসালো উত্তর বের করে আনার জন্যে কথার মারপ্যাঁচ সাজিয়ে প্রশ্ন করে যায় একের পর এক। আবার অতিথিদের মন গলাতে তাদের পায়ের সামনে বসে পড়ে, নাচানাচি করে মাঝেমধ্যে। শো জনপ্রিয় করার জন্য এসব কৌশল বেশ ভাল কাজে দিয়েছে তার পক্ষে।

শিশু নাঈমকে নিয়ে করা শো এবং প্রশ্নের ঢং, অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের একজনকে আনা, নাঈমের বাবা মায়ের মধ্যে দূরত্ব সত্ত্বেও তাদের একত্রিত করার মধ্যে ভিডিওটি আলোচিত করবার চেষ্টা আছে কি না এখন সেটাই বেশি চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। নাঈম অন্য একটা প্রোগ্রামে বলেছিল তার বাবা টাকার লোভে তার কাছে ভিড়ছে এখন। কিন্তু জয়ের শোতে জয়ের প্রশ্নের মারপ্যাঁচে বলেছে সে বাবার সেবাও করবে বড় হয়ে। খালেদা জিয়ার কথাটাও এই প্রোগ্রামেই প্রথম উল্লেখ করেছে সে, অন্য কোথাও এই দাবি করেনি। ফলে, প্রশ্ন উঠেছে এই কথা কি শাহরিয়ার নাজিম জয়ের শিখিয়ে দেয়া বুলি নাকি নাঈমের নিজস্ব বক্তব্য?

জয় অবশ্য সমালোচনার মুখে একটি লাইভে এসে আল্লাহর কসম কেটে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, নাঈমকে তিনি কোনো কিছু শিখিয়ে দেননি। নাঈম নিজ দায়িত্বে এই কথাগুলো বলেছে। কোনো জাতীয় নেতাকে নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার, অপদস্ত করার অধিকার তিনি রাখেন না, তিনি এমনটা করেনও না। তিনি সবাইকে সম্মানের চোখে দেখেন। জয় বলছেন তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে, তার জীবনের উপর হুমকি আসছে। তিনি এখন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছেন। তিনি বলছেন প্রয়োজনে তিনি উপস্থাপনা ছেড়ে দিতেও রাজি, মানুষ না চাইলে। মানুষ চাক বা না চাক, তার অনুষ্ঠানের কারণে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে সেটা কি তিনি মুছতে পারবেন? একদিনে তার সেই প্রোগ্রাম মিলিয়ন মানুষ দেখেছে। সবাই বিভ্রান্ত হয়েছে, কেউ বিব্রত হয়েছে। নাঈমকেও তিনি হাস্যকর বানিয়েছেন।

নাঈম নিজেও হাসির খোরাক হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিয়ে। এখন সে এতিমখানায় টাকা দিতে চাওয়ার কথা বলছে না। এখন সে বলছে, টাকা তার নিজেরই দরকার। তার পড়ালেখার খরচ চালাতেই টাকাটা দরকার। নাঈম হয়ত অবুঝ, কিন্তু, বার বার দাবার গুটি হওয়ার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয় এটা কেন সে বুঝতে পারছে না, তাকে কেন কেউ বুঝাচ্ছে না? সবাই তাকে ব্যবহার করছে, কেউ তাকে কেন বলছে না, যারা তোমাকে ব্যবহার করবে তারা তোমার উপকারে কখনো আসবে না, তারা নিজের প্রয়োজনেই শুধু তোমার কাছে আসছে? যারা ভিডিও করার জন্য, নাঈমের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য এখনো লাইন ধরে আছেন তারা এবার ক্ষ্যামা দেন, অনেক হয়েছে। আর কত?